খুলনা (মহানগর) প্রতিনিধি

  ১৭ জুলাই, ২০১৯

দলবদ্ধ ধর্ষণ শেষে বাবাসহ হত্যায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড

খুলনায় এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও বাবা ইলিয়াছ চৌধুরীসহ তাকে হত্যা মামলা পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালতের বিচাকর মো. মহিদুজ্জামান এ রায় দেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানাধীন বুড়ো মৌলভীর দরগা রোডের বাসিন্দা শেখ আবদুল জলিলের ছেলে সাইফুল ইসলাম পিটিল (৩০), তার ভাই মো. শরিফুল (২৭), মো. আবুল কালামের ছেলে মো. লিটন (২৮), অহিদুল ইসলামের ছেলে আবু সাইদ (২৫) ও মৃত সেকেন্দারের ছেলে মো. আজিজুর রহমান পলাশ (২৬)। এদের মধ্যে শরিফুল পলাতক রয়েছেন। অন্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তায় রয়েছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষে অ্যাডভোকেট কাজী সাবিক্ষর আহমেদ, অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তসলিমা খাতুন ও অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা। স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ বলেন, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। মামলায় নিহত ইলিয়াস আলী হত্যা মামলায় ৫২ পৃষ্ঠার রায়ে আসামিদের মৃত্যুদন্ড ও আলামত লুকানোর অভিযোগ আরো সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। এছাড়া ব্যাংকার পারভিন সুলতানাকে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ৬৫ পৃষ্ঠার রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও এক লাখ টাকা করে জারিমানা করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর লবণচরা থানার বুড়োমৌলভীর দরগাপাড়া রোডে ধর্ষণ ও জোড়া হত্যাকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। আসামিরা বাড়ির প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে প্রথমে ইলিয়াছ চৌধুরীকে হত্যা ও পরে পারভীন সুলতানাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে। তারা বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে মরদেহ দুটি লুকিয়ে রাখে। এ ঘটনায় দুটি আলাদা মামলা হয়। ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। হত্যাকান্ডের মামলায় ২২ জন ও দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ২৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের বর্ণনা রয়েছে। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৩নং ট্রাইব্যুনালে মামলাটির যুক্তিতর্ক শুরু হয়। মামলার তদন্ত চলাকালে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনের মধ্যে চারজন গ্রেফতার হয়। এছাড়াও গ্রেফতার করা হয় পিটিলের স্ত্রী আসমা খাতুন, নোয়াব আলী গাজী ও আসলাম মিস্ত্রি নামের একজন সন্দেহভাজনকে। তাদের মধ্যে লিটন ও সাঈদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন অফিসে আসা-যাওয়ার পথে আসামিরা কুপ্রস্তাবসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করত। এর প্রতিবাদ করায় ঘটনার দিন রাতে বাড়ির দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে ওই পাঁচ আসামি। এরপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পারভীনের বাবাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পাশের রুমে থাকা পারভীনকে পাঁচজন মিলে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর বাবা ও মেয়ে হত্যা করে মরদেহ সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে দেয়। পরে ঘরে লুটতরাজ চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা। বহুল আলোচিত এ হত্যাকান্ডের ৩ বছর ৯ মাস ২৭ দিন পর মঙ্গলবার এ রায় দেন আদালত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close