নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ জুলাই, ২০১৯

একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী

ডেমু ট্রেন কেনার প্রকল্প বাতিল

রাজধানী ঢাকা থেকে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের মধ্যে চলাচলকারী ছয় সেট (৬ ইউনিটে ১ সেট) শাটল ট্রেন কেনার প্রকল্পটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৪৫১ কোটি ৭১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এ রুটে নতুন করে ডেমু না কিনে অন্য ট্রেন কেনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় মোট আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডেমু ট্রেন বাংলাদেশের উপযোগী নয়। নতুন করে আর ডেমু কেনা যাবে না। যেগুলো আছে, সেগুলো মেরামত করতে হবে। ডেমুর পরিবর্তে অন্য ট্রেন কিনতে হবে। এর আগে, ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডিজেল ইলেকট্র্র্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু ট্রেন কিনে বিপাকে পড়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে চীনের তৈরি এ বিশেষ ট্রেনে। ডেমু ট্রেনগুলোর মধ্যে বেশির ভাগেরই মেরামত প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের কারখানাগুলোর মধ্যে কোনো ইউনিটেই ডেমু ট্রেন মেরামতের মতো অবকাঠামো নেই। এ কারণে, ওইসব ডেমু মেরামতে ৩০৮ কোটি ২২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে কারখানা ও ওয়ার্কশপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জানা যায়, ২০১১ সালে ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু কেনার চুক্তি হয় চীনের তাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে। এর সঙ্গে শুল্ক, কর, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বিদেশ ভ্রমণ ও ভাতা সংযুক্ত করে সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৬৫৪ কোটি টাকা।

২০১৩ সালে দেশের বিভিন্ন রুটে ২০ সেট ডেমু ট্রেন চালুর দুই বছর না যেতেই বিকল হয়ে পড়ে আট সেট। সম্প্রতি দুই সেট মেরামত করে আবার চালু করা হয়েছে। তবে দেশে ডেমুর যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামত করার মতো ওয়ার্কশপ ও প্রকৌশলী না থাকায় বাকিগুলো এখনো বিকল। ঝুঁকিতে আছে বাকি ১২ সেটও। লাভের আশায় কেনা ডেমু এখন তাই রেলওয়ের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই নতুন করে আর কোনো ডেমু না কেনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার একনেক সভায় মোট ৫ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাসস্ট্যান্ড) প্রধান সড়ক সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ প্রকল্প’।

প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে প্রচুর পরিমাণে ঝাউ গাছ লাগাতে হবে। এসব গাছ জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করবে। কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটকদের জন্য আলাদা জোন করতে হবে। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এ সৈকত নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে।

৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৫ কোটি টাকা। প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে বিনোদন, খেলাধুলা ও শপিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

‘ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে যথাযথমান নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬০ কোটি টাকা। ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ’ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি টাকা।

এছাড়া ২২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পাবর্ত্য চট্টগ্রাম পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ি হাতির পথ রুদ্ধ করা যাবে না। বরং হাতির খাবারের জন্য পথে ও বনে কলাগাছসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতে হবে, যেন এসব পথে এসে খাবার খেয়ে হাতি নিজেদের জায়গায় চলে যেতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close