ভারী বর্ষণের কারণে ১০টি জেলায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। দুর্গত জেলাগুলোতে পাঠানো হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ২ কোটি ৯৩ লাখ নগদ টাকা। দুই দিনের মধ্যে এসব জেলায় ৫০০টি করে তাঁবু এবং মেডিকেল টিম পৌঁছে যাবে। সচিবালয়ে গতকাল শুক্রবার আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির এক সভা শেষে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার এবং নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে। ভারতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যমুনার পানি আরো বাড়বে। পাশাপাশি বিহারে গঙ্গার পানি বাড়ায় বালাদেশে পদ্মা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের নদ-নদীগুলোর ৬২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে, এর মধ্যে ২৬টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেসব পয়েন্টে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ৫৫১টি সেন্টারকে ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জামালপুরে ভাঙনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে এবং লালমনিহাটে তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, এগুলো মোকাবিলায় কাজ শুরু হয়েছে।

ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, প্রতিটি জেলায় ২ হাজার প্যাকেট করে মোট ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। একটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, তেল, আটা, মসুরের ডাল, শিশু খাবারসহ একটি পরিবারের সাত দিনের খাবার রয়েছে।

এখন পর্যন্ত ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং দুই দফায় সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে জানিয়ে শাহ কামাল বলেন, কোনো জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেওয়া হবে।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল টিম গঠন করেছে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রেখেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সরকারি দফতর বন্যা মোকাবিলায় যেসব প্রস্তুতি নিয়েছে সেগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এনামুর।

তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সব ধরনের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে যাতে পানিবাহিত রোগ বিস্তার রোধ করা যায়। খাদ্যগুদামের কর্মরতদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এই বন্যায় আমরা মানুষের জীবন রক্ষা করতে তো পারবই, গবাদিপশু এবং খাদ্যশস্যেরও নিরাপত্তা দিতে পারব।

প্রতিমন্ত্রী জানান, রোববার থেকে ডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে সব ডিসি ঢাকায় থাকবেন। ভারপ্রাপ্ত ডিসি হিসেবে যারা দায়িত্বে থাকবেন তাদের কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জায়গার অভাব হলে যে তাঁবু পাঠাতে বলা হয়েছে। সেখানে প্রত্যেক তাঁবুতে ২০ জন করে থাকতে পারবেন।

"