প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১২ জুলাই, ২০১৯

বন্যার পদধ্বনি

বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত পানিবন্দি হচ্ছে মানুষ

পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে দেশের বিভিন্ন এলাকার নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাটসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দির। গবাদি পশু নিয়ে বেড়েছে দুর্ভোগ। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বন্ধ রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টÑ

গঙ্গাচড়া (রংপুর) : উপজেলার তিস্তা অববাহিকার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলি, শংকরদহ, বাগেরহাট, জয়রাম ওঝা, চল্লিশশাল, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর মটুকপুর, চিলাখাল, বিনবিনা গঙ্গাচড়া সদরের ধামুর, মর্ণেয়া ইউনিয়নের ছোট রুপাই, রামদেব, কামদেব, নরসিংহ, নীলারপাড়, আলমবিদিতর ইউনিয়নের হাজীপাড়া, ব্যাঙপাড়া, নোহালী ইউনিয়নের মিনাবাজার, চর বাগডহড়া ও চর নোহালী গ্রামের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুর জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান পানিবন্দি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলি ও বাগেরহাট গ্রাম পরিদর্শন করেছেন।

নীলফামারী : গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার পর থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার (৫২.৬০) ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়ার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সকাল থেকে বাড়তে থাকে তিস্তার পানি।

সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, ৯টায় কিছুটা কমে বিপৎসীমা বরাবর, দুপুর ১২টায় বৃদ্ধি পেয়ে ৭ সেন্টিমিটার এবং বিকাল ৩টায় ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সবকটি জলকপাট (৪৪টি) খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, গত বুধবার রাত থেকে তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয়ে ইউনিয়নের ৯০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বালুর বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে জলঢাকা উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বানপাড়ায় তিস্তার ডানতীর রক্ষা বাঁধে ভাঙণ দেখা দিয়েছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী ডিভিশনের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, বাঁধের ৬০ মিটার পর্যন্ত ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩৭ সেমি., ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ৩৩ সেমি. ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৫ সেমি. এবং তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৩ সেমি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদরের চর যাত্রাপুর, পোড়ারচর, কালির আলগাসহ ব্রহ্মপুত্রের সবকটি চরের নিচু এলাকার ফসল পানির নিচে চলে গেছে।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের শতাধিক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে চর ভগবতীপুর, ঝুনকার চর, গোয়াইলপুরি, রলাকাটা, চর যাত্রাপুর এবং চর পার্বতীপুর এলাকা উল্লেখযোগ্য। জেলার চিলমারী উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আগামী ১৪ জুলাই ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে, সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতিতে নৌ ডাকাতি প্রতিরোধসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জেলার সবকটি থানা পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান।

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০০ গ্রামের লোকজন। বড়খাপন ইউপি চেয়ারম্যান হাদিছুজ্জামান হাদিছ জানান, বড়খাপন ইউনিয়নের শতভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ইউএনও রুয়েল সি সাংমা জানান, প্রাধানমন্ত্রী হাওর অধ্যুষিত নেত্রকোনার খালিয়াজুড়িসহ আশপাশের ১৬টি উপজেলাকে বিশেষ দুর্গম, ক্ষতিগ্রস্ত হাওর অঞ্চল ঘোষণা করলেও হাওর ও গারো পাহাড়ের নদ-নদী বেষ্টিত কলমাকান্দা উপজেলাকে ওই সুবিধা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি কলমাকান্দা উপজেলাকে দুর্গম হাওর অঞ্চল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানান।

মিঠাপুকুর (রংপুর) : রংপুরে মিঠাপুকুর উপজেলার যমুনেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী আটপুনিয়া, তরফবাহাদী, শাহালামপুর, কুঠিরপাড়া, জানকীপুর, পূর্ব বড়বালা, কেশবপুর, বৈরাগীর কুঠি, হাছিয়া, হেলেঞ্চাসহ ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার ৭টি ইউনিয়নের মাঝে ১নং দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, পোড়াকান্দুলিয়া, ঘোষগাঁও, গোয়াতলা এবং ধোবাউড়া সদর ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের কিছু অংশেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের বহরভিটা, কালীনগর, উদয়পুর, রাউতি, মানিকপুর আঠাম, পাতামসহ বেশকিছু গ্রামে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নে সোহাগীপাড়া, খাগগড়া, পঞ্চনন্দপুর, কালিকাবাড়ীসহ বিভিন্ন গ্রামে অর্ধশতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। গামারীতলা ইউনিয়নে কামালপুর, মুক্তাগাছা, রনসিংহপুর, রায়পুর, রানিপুর, রামনাথপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে অর্ধশতাধিক পরিবারের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘোষগাঁও ইউনিয়নে গলইভাঙ্গা, গানই, বামনবধুয়া, ভালুকাপাড়া, ভুইয়াপাড়াসহ বেশকিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি। উপজেলার দুধনই রাউতি রাস্তার প্রবল ¯্রােতে ভেঙে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, প্রায় ১০০ হেক্টর বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিকুজ্জামান জানান, আমরা ত্রাণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, খুব শিগগিরই ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।

জৈন্তাপুর (সিলেট) : সিলেটর জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় পিয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। জৈন্তাপুর উপজেলার, শেওলার টুক, ডুলটির পার, সাতলার পার, খারুবিল, আমবাড়ী, গাতীগ্রাম, বিড়াখাই, কয়না খাই, সেনগ্রাম, গর্দ্দনাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার পানি ঢুকেছে, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার, নাইন্দার হাওর,তিতকুলীর হাওর, রাজবাড়ী কান্দী গুনাপাড়া, বালির হাওর, বাউরভাগ, বৃত্তিখেল, আসামপাড়া, নয়াগাঙ্গের পাড়, সানকী ভাঙাসহ আরো কয়েকটি গ্রামের মানুষ। সিলেট তামাবিল মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসসহ সর ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

থানচি (বান্দরবান) : বান্দরবানে থানচি উপজলোর বলিপাড়া ইউনিয়নের বাগানপাড়া বৈক্ষ্যংছড়ির ব্রিজ পানিতে প্লাবিত হওয়ায় থানচি-বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেেক কোনো দূরপাল্লার যানবাহন থানচি থেকে ছেড়ে যায়নি। অনেকে পানিতে ডুবে থাকা সড়কপথে নৌকা এবং পায়ে হেঁটে পার হচ্ছেন। এদিকে সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আমতলী (বরগুনা) : বরগুনার আমতলীতে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার রাস্তাঘাট, হাট-বাজারে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সড়কের পিচঢালাই উঠে খোয়া বেড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার হলদিয়া, চাওড়া, আঠারগাছিয়া, আরপাঙ্গাশিয়া, আমতলী সদর, কুকুয়া, গুলিশাখালী ইউপির নি¤œাঞ্চল এবং আমতলী পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বাজারে শাকসবজিসহ কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close