নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ জুলাই, ২০১৯

প্রধান সড়কে রিকশা বন্ধের প্রতিবাদ : আজও অবরোধের ডাক

আন্দোলনে স্থবির ঢাকার একাংশ, দুর্ভোগ

‘মূল সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত’ প্রত্যাহার না করলে আজ বুধবার সকাল থেকে ফের রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে রিকশাচালকরা। গত সোম ও গতকাল মঙ্গলবারের মতো আজ বুধবারও সকাল ৮টা থেকে ফের সড়ক অবরোধ করবে তারা। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এ ঘোষণা দেয় রিকশা-মালিক নিবন্ধিত ছয়টি সংগঠনের সমন্বয় পরিষদ। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন রিকশাচালক ও মালিকরা। এর প্রভাব ছিল রাজধানীর অন্য সড়কেও। অবরোধের কারণে ঢাকা প্রায় অচল হয়ে পড়ে। প্রগতি সরণিতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী লোকজন।

গতকাল বিকাল পর্যন্ত রাজপথ দখলে রাখেন রিকশাচালকরা। পরে রিকশা-মালিক নিবন্ধিত ছয়টি সংগঠনের সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল হোসেন জানান, ‘আমাদের দুটি দাবি না মানলে আমরা আজকের মতো কালও রাজপথে থাকব। এ পরিষদের সদস্যরা সকাল থেকে যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এলাকায় থাকবে। রিকশাচালক-মালিক ও গ্যারেজ মালিকরা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী জানান, আমরা আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবে একটি মহাসমাবেশ করব। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি নিয়ে যাব। তাদের দুটি দাবি হচ্ছে সড়কে রিকশা বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার এবং রাজধানী থেকে অবৈধ রিকশা উচ্ছেদ করা।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের রিকশা মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মমিন আলী জানান, আমরা চাই সড়কে ব্যাটারিযুক্ত রিকশা চালানো বন্ধ করে মূল সড়কে বৈধ রিকশা চলাচল করতে দেওয়া হোক। এছাড়া যানজট নিয়ন্ত্রণে সড়কের বাম দিকে রিকশার জন্য আলাদা লেন করে দিতে হবে। এ বিষয়ে আমরা আগামী রোববার প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেব।

গত ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল অথরিটির (ডিটিসিএ) এক বৈঠকে রাজধানীর তিনটি রুটে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত রোববার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। প্রাথমিকভাবে গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর ও সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রিকশা চলাচল করবে না। এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা হয়ে খিলগাঁও-সায়েদাবাদ পর্যন্ত রিকশাসহ অন্যান্য অবৈধ ও অননুমোদিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত সোমবার সকালে রাজধানীর মুগদা এলাকায় প্রথমবারের মতো অবরোধ করে রিকশাচালক ও মালিকরা। গতকাল দ্বিতীয় দিনে রিকশাচালকদের আন্দোলন আরো ছড়িয়ে পড়ে। বিকাল ৪টায় তারা সড়ক ছেড়ে দেয়।

গতকাল সকাল ৮টা থেকে রাজধানীর প্রগতি সরণির কুড়িল-রামপুরা-মালিবাগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে রিকশাচালকরা। অবরোধের কারণে সড়কের উভয় পাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রিকশাচালকদের দাবি, প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচলের আলাদা লেন ঠিক করে দিতে হবে। না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। অবরোধে কুড়িল-রামপুরা-প্রগতি সরণিতে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, আবদুল্লাহপুরগামী সব যাত্রী।

‘সড়ক আছে যেখানে, রিকশা চলবে সেখানে’, ‘চলবে চলবে-রিকশা চলবে’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, না মানলে আন্দোলন চলবে’Ñ এসব নানা স্লোগানে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা। একইভাবে খিলগাঁও, রামপুরা বাজার, রামপুরা ব্রিজ, উত্তর বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা এবং কুড়িল এলাকায়ও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে এসব সড়কে থাকা যানবাহনগুলো আটকা পড়ে। আন্দোলনের কারণে এসব যানবাহনের যাত্রীরা নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। বিক্ষোভকারী রিকশাচালকদের একজন নুরউদ্দিন বলেন, ‘সরকার ঘোষণা দিয়েছে মেইন রোডে রিকশা চালানো যাবে না। কিন্তু এ ঘোষণা মানলে আমাদের না খেয়ে থাকা লাগবে। কারণ শুধু গলিতে থেকে রিকশার ভাড়া পাওয়া যায় না।’

এদিকে সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক করতে এবং বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে সড়কের পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন থেকে সরে আসতে অনুরোধ জানাতেও দেখা যায় তাদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close