বদরুল আলম মজুমদার

  ২৭ জুন, ২০১৯

ছাত্রদল ইস্যুতে অস্থির বিএনপি

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ইন্ধনেই রাজপথে নেমেছে ছাত্রদলের বহিষ্কৃতরা। দলের একটি অংশের উসকানিতেই মূলত তারা রুহুল কবির রিজভী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন বলে অভিযোগ খোদ দলের নেতাদেরই। এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রিজভীর পক্ষ নিলেও অন্য নেতারা আন্দোলনকারীদের দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছেন বলে মনে করছে একটি পক্ষ। অন্য পক্ষের ভাষ্য, অবস্থা এমন পর্যায়ে আছে যে, চলমান কমিটি গঠনসহ বিএনপির সব ধরনের কর্মসূচিতে শক্তিশালী বিরোধিতার জন্য দুটি পক্ষ গড়ে ওঠেছে। আর এসব গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের কট্টর ও উদারপন্থি নেতারা। উভয় পক্ষই অন্দোলনকারীদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি ছাত্রদলের কমিটি ভাঙ্গাসহ বিএনপির অনেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না দলের বড় একটি অংশ। সেই অংশটি তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা না করতে পারলেও এবার কমিটি নিয়ে ছাত্রদলের বিরোধকে কাজে লাগিয়ে তারেকের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ দিতে কাজ করছেন। তারই অংশ হিসেবে মূল টার্গেট করা হয়েছে দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রিজভীকে। আন্দোলনকারীরা এরই মধ্যে রিজভীকে বেশ কয়েকবার নাজেহাল করেছে। সর্বশেষ গত ২৩ জুন ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে থাকা ছাত্র নেতারা রিজভীকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এই ঘটনার জেরে আন্দোলনে ছাত্রদলের সাবেক ১২ জন নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি।ছাত্রদলের নিয়মিত অংশের নেতারা জানান, ছাত্রদলকে রাজপথে নামতে এবং কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে বিএনপির একটি অংশ উসকানি দিচ্ছে। পাশাপাশি কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে ও দাবিতে কান না দেওয়ার জন্য হাইকমান্ডকে প্রভাবিত করছে আরেকটি অংশ। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দুটি ধারা চলছে। একটি ধারা কট্টরপন্থি, অন্য ধারাটি উদারপন্থি। দলটিতে কখনো কট্টরপন্থিদের প্রভাব বাড়ে, আবার কখনো উদারপন্থিরা সামনে চলে আসে। সম্প্রতি লটির হাইকমান্ড উদারপন্থিদের বলয়ে রয়েছে। এই বলয়ের প্রভাবেই দলকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ কারণেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে ছাত্রদলের কমিটি। এর আগে কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দলসহ কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা হয়েছে। যাতে অধিকাংশ পদে উদারপন্থিদের প্রাধান্য রয়েছে। ছাত্রদলেও উদারপন্থিদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি করা হচ্ছে।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই কট্টরপন্থিরা একাট্টা হয়েছেন। তারা দলে নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখতে ছাত্রদলকে মাঠে নামিয়ে উদারপন্থিদের চাপে রাখার কৌশল এঁটেছেন, বসে নেই উদারপন্থিরাও। তারা কট্টরপন্থিদের চাপে রাখতে সহসাই ছাত্রদলের নতুন কমিটির ঘোষণা দিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে যুক্তি দিচ্ছেন।

উদারপন্থিদের যুক্তি, ছাত্রদলের নতুন কমিটি দ্রুত ঘোষণা করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সহসাধারণ সম্পাদক পদে কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে সম্পৃক্ত করা হলে ভেস্তে যাবে আন্দোলন ও আলটিমেটাম।

জানা গেছে, উদারপন্থিদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতেই ঘোষণা হতে যাচ্ছে ছাত্রদলের নতুন কমিটি। কমিটি করতে এর আগে গঠিত সার্চ কমিটি তাদের পছন্দের ছাত্র নেতাদের তালিকা এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তারই অংশ হিসেবে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণ করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। গত ১৯ জুন ঘোষিত স্থায়ী কমিটির নতুন দুই সদস্যও উদারপন্থি গ্রুপের বলে প্রচারণা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির শূন্য অন্য তিনটি পদও শিগগিরই পূরণ করা হচ্ছে। সেখানেও উদারপন্থিদের আধিক্য থাকতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য, বিভক্ত করার জন্য চক্রান্ত হচ্ছে। চক্রান্ত হচ্ছে বিএনপির শক্তিকে ছোট করে দেওয়ার। তবে ষড়যন্ত্রকারীরা আগেও চেষ্টা করে পারেনি; কোনো দিন তা পারবেও না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ছাত্রদল নিয়ে বিএনপি উভয় সংকটে। ছাত্ররা দীর্ঘদিন জেল খাটল, মামলা এবং পুলিশের হয়রানির শিকার হলো। অথচ ওদের অবদানের বিনিময়ে ওরা কী পাবে? ওদের কি মূল্যায়ন হবে? দোষটা কার?

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিএনপির কিছু দায়িত্ব আছে। ছাত্রদের বোঝানো এবং এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে।

এদিকে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতাদের সমর্থনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাতে ভেঙে দেওয়া ছাত্রদল নেতাদের পাশাপাশি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও সম্মতি আছে। এখন বাইরে অনানুষ্ঠানিকভাবে কে কী করছেন সে বিষয়ে আমার জানা নেই। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কিছু নেই। এরপরও কেউ করলে দলের হাইকমান্ড খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close