নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ জুন, ২০১৯

একনেকে প্রধানমন্ত্রী

রেল সড়কের সব নড়বড়ে সেতু মেরামতের নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল ও সড়কপথের সব নড়বড়ে সেতু চিহ্নিত করে মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রেল ও সড়কের সব সেতু এবং কালভার্ট সার্ভে করে বর্ষার আগেই সংস্কার করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় এই নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এদিন একনেক সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ২১ মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ নবরূপায়নসহ ১০ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৯৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, খেলা নিয়ে সবার প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের তিনি সন্তানের মতো মনে করেন। সাকিব, মুশফিক এদের সম্পর্কে খুব ভালো মন্তব্য করেছেন। এদের নিয়ে আরো কিছু করতে চান। এদের আরো সুযোগ-সুবিধা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করে তিনি।

কলসিন্দুরের ফুটবল খেলা মেয়েদেরও সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, ‘উনার নির্দেশনাটা হলো খেলোয়াড়দের শুধু খেলাকালীন নয়, তারা যখন পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের মতো বার্ধক্যে যাবে, তখন খুব কষ্ট হয়। তিনি এ সম্পর্কে অবহিত। কম বয়সে খরচ করে ফেলে, টাকা জমায় না। ঠকা খায়। নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলছেন, আমরা এটা হতে দেব না।’

খেলা বলতে শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবল, হকি, ভলিবল, বাস্কেট বল, সব ধরনের খেলাকেই সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘শুটিং ও আর্চারিতেও আমাদের সম্ভাবনা আছে। সেখানে ইনটেনসিভ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে বলেছেন তিনি।’

এম এ মান্নান বলেন, ‘আর্চারির কথা বলতে গিয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) এটাও বলেছেন, শুধু পশ্চিমা আর্চারি নয়। আমাদের এখানে তির, ধনুক, বল্লম রয়েছে। আমাদের সাঁওতালরা ব্রিটিশদের তির, ধনুক দিয়ে তাড়াতে চেয়েছিল। সেই তির, ধুনকও যাতে মরে না যায় এবং বিকশিত হয়, সেজন্য তহবিল, প্রশিক্ষণের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, একনেকে অনুমোদিত ১০ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ৯৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হবে ৬ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২৪১ কোটি ৫২ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে ৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, রেলের ২১ ইঞ্চিন আধুনিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় রেলের ২১টি এমজি লোকোমোটিভ পুনর্বাসনের মাধ্যমে নবরূপায়ন করা হবে। এতে লোকোমোটিভগুলোর কর্মক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি চলাচলে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে যাত্রী সেবা নিশ্চিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ২১টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ নবরূপায়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। জানুয়ারি ২০১৯ হতে জুন ২০২২ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো বামনডাংগা (গাইবান্ধা)-শঠিবাড়ী-আফতাবগঞ্জ জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জোনের প্রধান সংযোগ রাস্তাগুলো প্রশস্তকরণসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা এর ক্যাম্পাসে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় হবে ২২৮ কোটি টাকা। মানিকগঞ্জ বহুতল বিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা।

ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৮ কোটি টাকা। দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ, কোনাবাড়ী, গাজীপুর প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১ কোটি টাকা। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি টাকা। বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ২০০ কোটি টাকা। ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও আপগ্রেডেশন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।

বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী ছাড়াও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক; বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন; ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অংশ নেন।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close