পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

  ২৫ জুন, ২০১৯

বড়পুকুরিয়ায় আবার অর্থ লোপাট

৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা দুর্নীতির তথ্য ফাঁস

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কয়লা লোপাটের রেস কাটতে না কাটতেই আরেকটি বড় দুর্নীতি ধরা পড়েছে। এবার খনি ট্রাস্টি বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তারা ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা ট্রাস্টির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। একটি দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ধাপে ধাপে লাভজনক অবস্থায় চলে গেলে ট্রাস্টি বোর্ডের বিশেষ ক্ষমতাধর কোম্পানি সদস্য সচিব আবুল কাশেমের নির্দেশে বোর্ডের আহ্বায়ক ও অন্যান্য সদস্য ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত তিন দফায় ১৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে ট্রাস্টি চেকের মাধ্যমে ওই টাকা গ্রহণ করেন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়া হয় তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভোক্তা, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা ফুঁসে উঠেছেন। কানাঘুষার এক পর্যায়ে টাকা লোপাটের তথ্যফাঁস হয়ে যায়। ফলে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে থাকে।

অনুসন্ধান তথ্য মতে, ট্রাস্টির মাধ্যমে খনির অসহায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে এই অর্থ হাতানো শুরু হয়েছে ২০১০ সাল থেকে। তদন্ত কমিটি শুরু থেকে টাকার হিসাব কষলে হাতানো টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। নানা প্রতিশ্রুতিতে ঊর্ধ্বতন মহলকে দেওয়ার কথা বলে এসব টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে প্রায় ৮৫ শতাংশই তদন্ত কমিটির কাছে বলেছেন, প্রতিজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ৯২ হাজার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৯৬ হাজার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ লাখ ২০ হাজার করে টাকা চাঁদা আকারে গ্রহণ করা হয়েছে। যার পরিমাণ ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এছাড়াও কোলমাইন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি সভায় কোম্পানিতে পেনশন প্রথা চালুর নামে ৩০ হাজার করে ১৫০ জনের কাছে এককালীন ৪৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। সবমিলে গৃহীত ৫ কোটি ৭ লাখ টাকা ট্রাস্টি নেতারা কোন খাতে কখন কোথায় কীভাবে খরচ করেছেন এর কোনো হদিস নেই।

কয়লা খনির উৎপাদনে লভ্যাংশের ৯৫ শতাংশ টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে এবং ৫ ভাগ টাকা প্রফিট বোনাস হিসেবে ভোগ করে থাকেন সুবিধাভোগী অংশীদাররা। যার পরিমাণও কোটি কোটি টাকা। লিখিত বক্তব্যে থেকে জানা যায়, কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা বিশেষ করে প্রভাবশালী বোর্ড সদস্য (হিসাব) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে ইস্যুকৃত ট্রাস্টিবোর্ডের চেকে স্বাক্ষর নিয়ে অর্থ প্রদান করেছেন। তদন্তকালে ট্রাস্টিবোর্ডের রক্ষিত চেক বইয়ের মুড়িগুলো প্রমাণক হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিন কর্মকর্তা।

যাদের কাছে টাকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ডেপুটি ম্যানেজার (মাইন অপারেশন) একরামুল হক বলেন, আমার কাছে টাকা নিয়েছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ম্যানেজার (যান্ত্রিক) ফজলুল হক বলেন, ৯২, ৯৬ এবং ১ লাখ ২০ হাজার টাকাতো নিয়েছেন তার সঙ্গে আরো ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন পেনশন প্রথা চালুর নামে।

এদিকে পেনশন প্রথা চালুসহ অর্থ প্রদানে যে ক’জন কর্মকর্তা অন্যদের সমন্বয় করেছেন তাদের মধ্যে তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আবদুল মান্নান পাটোয়ারী এবং কোম্পানি সচিব আবুল কাশেম প্রধানিয়ার নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের জটিলতার বাহিরে রাখতে অর্থাৎ অনেকটা নিরাপদ করতে পেট্রোবাংলা অন্যত্রে বদলি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের সঙ্গে বারবার কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক খনি উপ-মহাব্যবস্থাপক জাফর সাদিকের বলেন, দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। বড়পুকুরিয়া কয়লার খনি এমডি ফজলুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তদন্ত কমিটি কাজ করছে শুধু এইটুকু বলেই ফোন কেটে দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close