নিজস্ব প্রতিবেদক/কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ২৫ জুন, ২০১৯

কুলাউড়ায় ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা নিহত ৫, আহত আড়াই শতাধিক

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে অন্তত ৫ জন নিহত এবং আড়াই শতাধিক লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ২৩ জুন রাত ১১.৪৫টায় কুলাউড়া বরমচাল ইউনিয়নের বড়ছড়া ব্রিজ অতিক্রম করা কালে সেতু ভেঙে ট্রেনটির চারটি বগি উল্টে যায়।

দুর্ঘটনার পর পর স্থানীয় ককেয়টি মসজিদের মাইক থেকে এ খবর প্রচার করা হলে লোকজন জড়ো হয়ে আহতদের উদ্ধারের প্রাথমিক কাজ শুরু করে। ঘটনার পর পর বরমচাল মৌজার অধিবাসী মোঃ শাহান মিয়া পুলিশের হেল্প লাইন ৯৯৯ নাম্বারে কল করে তাৎক্ষণিক কুলাউড়া থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের পুরো ইউনিটসহ অন্য থানা থেকে আসা অন্তত ১৩টি ইউনিট উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে। এ ঘটনায় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ দিনভর বন্ধ থাকার পর বিকেলের দিকে কুলাউড়া থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তিতাস নদীর ওপরের একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কারণে সড়কপথে যাত্রা পূর্ব থেকেই ব্যাহত হয়ে আসছিল। সে কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে ট্রেনের ওপর যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ ছিল। তবে গতকাল সকাল থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর ওপর নির্মিত সাহবাজপুর সেতুটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সরেজমিনে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বরমচাল বড়ছড়া এলাকায় গেলে সেখানে দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের গননবিদারী আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয়দের প্রাণপণ চেষ্টার ফলে খুব দ্রুততম সময়ে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা সম্ভব হয়। আহতদের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতাল, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাজার মুসলিম এইডস হাসপাতাল ও ব্রাহ্মণবাজার মিশনারিজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। সর্বশেষ প্রায় ২০০ আহত যাত্রী বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শতাধিক যাত্রী গুরুতর আহত অবস্থায় এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ রিপোর্ট তৈরি করা পর্যন্ত ৫ জন নিহতের ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের সবার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। নিহতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

এ পর্যন্ত নিহত চারজন যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতরা হলেন কুলাউড়া পৌরসভা এলাকার মো. আবদুল বারি মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫), সিলেট নার্সিং কলেজে ছাত্রী মংলাবাজার থানার আবদুল্লাহপুর এলাকার আবদুল বারি মিয়ার মেয়ে ফাহমিদা ইয়াছমিন ইভা (২০) ও বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট থানার হাসজুড়ি ভান্দরখোলা গ্রামের মো. আকরম মোল্লার মেয়ে একই কলেজের ছাত্রী সানজিদা বেগম (২০)। বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন সিলেট ওসমানী কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইছরাইল আলী সাদেক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এরই মধ্যে মনোয়ারা বেগম ও ফাহমিদা ইয়াছমিনের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

এ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল ও রেলওয়ে সচিব মো. মোফাজুল হোসেন, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. রফিকুল আলম, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, ট্রেনটি ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছে। যার মধ্যে একটি বগি সেতু ভেঙে নিচে পানিতে পড়ে যায়। সেতু থেকে রেললাইন উপড়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। পুলিশ সুপার এ পর্যন্ত চারজনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের স্থানীয় কর্মকর্তারা সাতজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস সাবস্টেশন থেকে থেকে বলা হয়েছে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো একজন মারা গেছে।

এদিকে গতকাল সোমবার সকাল থেকে সিলেটের সব ট্রেন কুলাউড়া থেকে চলাচল করছে। বরমচালে রেললাইন মেরামত না হওয়া পর্যন্ত সিলেটের সব ট্রেন কুলাউড়া থেকে চলাচল করবে। শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার কবির আহমদ বলেন, গত রাতের দুর্ঘটনার পর আখাউড়া জংশন স্টেশন থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন বরমচালে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। ঢাকাগামী উপবন ট্রেনটি জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন নামে গতকাল দুপুরে কুলাউড়া ছেড়ে যায়।

দুর্ঘটনা তদন্তে দুই কমিটি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ জানতে দুটি তদন্ত কমিটি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত পাঁচটি বগি সরাতে ক্রেন আনা হয়েছে। সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ পুনরায় চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। পরে অতিরিক্ত সচিব মুজিবুর রহমান বলেন, বিকাল ৫টার মধ্যে রেল চলাচল শুরু করা হয়েছে। এখন সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম জানান, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় প্রধান পর্যায়ে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চিফ মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. মইনুল ইসলামকে প্রধান করে আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন মোট পাঁচজন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close