আরিফ সোহেল

  ২১ জুন, ২০১৯

রেকর্ড গড়েও স্বপ্নভঙ্গ

মুশফিকুর রহিমের বীরোচিত সেঞ্চুরি

৪৮ রানের হারকে লজ্জার বলার অবকাশ নেই। এমন হারকে গৌরবের ফলকে বেঁধে রাখা যায়। ৩৮১ রানের বড় চ্যালেঞ্জে নুয়ে না পড়ে বীরদর্পে ব্যাটিং করেছে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-তামিম-সাকিব-লিটনরা। তুলেছে ৩৩৩/৮। খেই হারিয়ে ফেলেনি ব্যাটিংয়ে নেমে। বরং মুশফিকের হার না মান সেঞ্চুরি; মাহমুদউল্লাহ দুরন্ত ব্যাটিং, তামিমের হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে সাকিব-লিটনের ব্যাটিং নৈপুণ্য বাংলাদেশকে পরের ম্যাচগুলো অনুপ্রেরণাই জোগাবে।

শুরুতেই প্রয়োজন ছিল স্বপ্ন-জাগানিয়া ব্যাটিং। ঠিক সেভাবে শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২৫ গ-ি না পেরোতেই গতকালের ‘দেশসেরা’ বোলার সৌম্য ব্যাটসম্যান হতে পারেননি। হয়েছেন জঘন্য রান আউটের শিকার। তবে পরের জুটিতে সাকিব-তামিমে রানে ছিল বাংলাদেশ। তবে টার্গেট ছিল আকাশচুম্বী। ওভারপ্রতি রানের প্রয়োজন ছিল ৭.৬২ প্লাস। এই টার্গেটকে সামনে রেখে ব্যাটাররা ব্যাটসম্যানরা রঙ ছড়িয়েছেন ঠিকই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান বোলার-ফিল্ডারদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। গতকাল নটিংহ্যামের ট্রেন্টবিজে বাংলাদেশ ছুঁয়ে দেখেছে ৩৩৩/৮।

অস্ট্রেলিয়ার ছুঁড়ে দেওয়া ৩৮২ রানের টার্গেট ছিল আকাশছোঁয়া। পাহাড় উচ্চতায় ওঠার কষ্ট-কঠিন বন্ধুর পথ হেঁটে হোঁচট খায়নি। কিছুটা ধীরে উঠতে গিয়ে ওভারআউট হয়েছে। নির্ধারিত ৫০ ওভার বাংলাদেশ দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে। তুলেছে ৩৩৩/৮; পর্বতপ্রমাণ রানপাহাড়ের নিচে পড়ে বাংলাদেশ চিঁড়ে-চ্যাপটা হয়নি।

বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে দলীয় ২৩ রানে রান আউট হয়ে গিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। এরপর দলীয় ১০২ রানের মাথায় ৪১ বলে ৪১ রান করে স্টইনিসের বলে ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন সাকিব। ফলে ওয়ার্নারের পরেই থাকলেন তিনি। সাজঘরে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেছেন তামিম। মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছিলেন একমাত্র হাফসেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল। দলীয় ১৪৪ রানে ৭৪ বল থেকে ৬টি চারের মারে তিনি করেছেন ৬২ রান। আগের ম্যাচের বিজয়ের অন্যতম সারথি লিটন দাসও পারেননি। ১৭ বল থেকে ২০ রান করে অ্যাডাম জাম্পার শিকার হয়েছেন লিটন। তবে উইকেটে স্থির থেকে আবারও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। তিনি মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে দলের ৩০০ প্লাস রান নিশ্চিত করেছেন। মুশফিক-লিটন জুটি ভেঙেছিল মাত্র ৩১ রান যোগ করে। স্কোর বোর্ডে পরের জুটিতে ১২৭ রান যোগ করেছেন মুশফিক-মাহমুউল্লাহ। বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে মাহমুদউল্লাহ ঝড়ো ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে খানিক চাপে রেখেছেন। ৫০ বলে ৬৯ রান করার পথে ৫টি চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মেরেছেন। আর মাহমুদ চলে যাওয়ার পর মুশফিক ঠিকই নিজের ব্যাটে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি।

বোলার সৌম্য সরাকারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ৩/৫৮। এর আগে তার ব্যালেন্সে উইকেট ছিল সাকুল্যে ১। ক্যারিয়ারের ৪৯তম ম্যাচে এসে বোলার সৌম্য সরকারকে খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বেছে নিয়েছেন অ্যারন ফিঞ্চকে। ২০.৫ ওভারে তার এক্সটা বাউন্সে রুবেলের হাতে ধরা পড়েন। দলীয় ১২১ রানে ৫১ বলে ৫৩ করা ফিঞ্চের এই পতনকে থোরাই কেয়ার করেছেন মারদাঙ্গা ওয়ার্নার-খাজা জুটি। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের দিক-নিশানায় টার্গেট রেখে বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনো করেছেন। প্রথমে ক্যারিয়ারে ১৫তম সেঞ্চুরি পরে তা ১৫০ পার করে নিয়েছেন অবলীলায় ব্যাটিং করে। বিশ্বকাপের এই মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন ওয়ার্নার। এবার সৌম্যে বোকা বনেছেন ওয়ার্নার। সেই কারণেই সৌম্যের বাউন্সারে সেই রুবেলেই তালুবন্দি হওয়ার সময় দাঁত কেলিয়ে হাসছিলেন। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। দলকে নিরাপদ ৩১৩/২ রানে রেখে ফিরেছেন ১৬৬ রানে। খাজা-ওয়ার্নার যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে বিশ্বকাপের পূর্বাভাস ৪০০ প্লাস রান হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু অকেশনাল সৌম্যের বোলিংয়ে বেকাবু পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ানরা। সৌম্যের বলেই হার্ডহিটার ম্যাক্সওয়েল ফিরে গিয়েছেন ব্যক্তি ৩২ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলে। মাত্র ১০ বলে ম্যাক্স ফিরেছেন রুবেলের সরাসরি থ্রো থেকে। সৌম্যের শেষ শিকার খাজা। ৮৯ রান নিয়ে খাজা যখন সেঞ্চুরির জন্য নিকপিশ করছিলেন; বেছে নিলেন সেই সময়টা। এবারও বাউন্সার। সৌম্যের লাফিয়ে ওঠা বলটি খাজার ব্যাটের ঈষৎ কানায় লেগে মুশফিকে বন্দি। ততক্ষণে কিন্তু ¯্রােতের মতো রান ছুটছিল। খাজা দলকে ৩৫২ রানে রেখে ফিরেছেন দলীয় ৪৬.২ ওভারে। ৪৮তম ওভারের প্রথম বলেই মোস্তাফিজে নিখুঁত এলবিডব্লিউ স্মিথ (৩)। রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। ৪৯ ওভার শেষে নেমে এসেছে বৃষ্টি। বৃষ্টির গতি বাংলাদেশের বোলারদের গতির চেয়েও কম। ফলে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেনি ম্যাচ। বৃষ্টির আগে অস্ট্রেলিয়ার ছিল ৩৬৮/৫। সেখানে বৃষ্টির পর শেষ ওভারে নিয়েছে ১৩ রান। বাংলাদেশের সামেনে জয়ের টার্গেট ৩৮২ রান। শেষ ওভারে বোলার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন ফিজি। অস্ট্রেলিয়া ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে তুলেছিল ৩৬১/৮। গতকাল নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে তা টপকে গিয়ে তুলেছে ৩৮১/৫। অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের ২টিই ইংল্যান্ডের ৩৯১, চলতি বিশ্বকাপে পয়ন্তর কার্ডিফে তারা তুলেছিল ৩৮৬ রান।

চোটের কারণে গতকাল বাংলাদেশের হয়ে নামতে পারেননি মোসাদ্দেক। বদলি সুযোগ পেয়েছেন সাব্বির। কিন্তু ওই সাব্বিরেই ১০ রানে জীবন পেয়ে ওয়ার্নার বাংলাদেশের নাভিশ্বাস ছুটিয়েছেন। সঙ্গে সাইফউদ্দিনের দলের বাইরে থাকাটা হয়েছিল আরো বিপদ হয়েছিল। ফিরছিলেন রুবেল। তিনিও বোলার হিসেবে নি®প্রভই ছিল। অবশ্য ২ ক্যাচের সঙ্গে ১ রান আউট তার কল্যাণেই। মাশরাফি-সাকিব-মিরাজ নিয়ম মানতেই বোলিং করেছেন। উইকেট পাননি কোনো। তবে এই হারকে কেউ আগে বোলিং নেওয়াকে দোষারোপ করলেও করতে পারেন। তবে হা; খামাখাই। অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দল। তাদের বিপক্ষে ৩৮২ রানের টার্গেট ছুঁড়ে ফেলা কল্পনাপ্রসূত হতে পারে। তবে এরপরও বাংলাদেশের ব্যাটিং স্বপ্নপথেই থেকেছে; আগামীতে যা সম্ভাবনা হয়ে ওঠতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close