নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জুন, ২০১৯

বাড়ছে ডেঙ্গুবাহী মশা : প্রয়োজন সচেতনতা

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই যেন লাগামহীন ডেঙ্গু। আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির পরেই রাজধানীতে মিলছে ডেঙ্গুর বাহক এডিসের লার্ভার উপস্থিতি। রাজধানীর মশা মারতে দুই সিটি করপোরেশন বিদায়ী অর্থবছরে খরচ করেছে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু তাতেও মশা কমছে না, আর তাই বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে অন্তত ৫৬ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারলে এই রোগে ঝুঁকি নেই। আর সবার আগে সচেতনতার ওপরই জোর দিয়েছেন তারা। এদিকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় এবারই প্রথম একইসঙ্গে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে ৬৪টি হাসপাতালের ১ হাজার ৩৫০ জন চিকিৎসক ও ১৫৯ জন সেবিকাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস লেক রোড সতের, পাশাপাশি দুটি বাড়ি দুটিতেই দেখা যায় মশার বংশবিস্তার। বলতে গেলে ঘরের মধ্যেই জমে থাকা এসব পানিতে মিলছে এডিসের লার্ভা। অথচ খেয়াল নেই কারো। যেন দায়িত্বও নেই কারো।

তবে রোগ প্রতিরোধেও নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি। রাজধানী ও এর আশপাশে সরকারি ২৮ বেসরকারি ৩৬ হাসপাতালের ১ হাজার ৩৫০ জন চিকিৎসক ও ১৫৯ জন সেবিকাকে দেওয়া হয়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসার বিশেষ প্রশিক্ষণ। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে বিকল্প নেই সচেতনতার। যে কারণে বড় পরিসরে প্রচারণায় শিগগিরই একযোগে মাঠে নামছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সিটি করপোরেশন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের অভিযোগের তীর নগর কর্তৃপক্ষের দিকে; এদিকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই, তবে রয়েছে সীমাবদ্ধতা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গত ১৫ জুন পর্যন্ত ৪৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যাদের মধ্যে দুজন মারা যান। কিন্তু ১৫ জুনের পর দুই দিনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৭২ জন বেড়ে যায়। এ সংখ্যা ২০১৮ সালের একই সময়ের চেয়ে বেশি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৪২৮ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন ডেঙ্গুতে। মারা গিয়েছিলেন তিনজন।

জুন মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তারা; আক্রান্তদের প্রায় সবাই ঢাকার।

রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. সামিয়া তাহমিনা বলেন, বর্ষা এডিস মশা বিস্তারের উপযোগী সময়। এ কারণে এ সময় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এবার এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ গতবারের চেয়ে বেশি। প্রচন্ড গরমের পর এখন বাতাসে আর্দ্রতা বেড়েছে। জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশা ডিম পাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডিম ফুটে বাচ্চা খুব দ্রুত বের হচ্ছে।

এর আগে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা গত ৩ থেকে ১২ মার্চ ১০ দিন মশার উৎস নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল। তখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৭টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানের ৯৯৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওই জরিপে ডিএসসিসির ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক বা বিআই (ব্রুটাল ইনডেক্স) সবচেয়ে বেশি ৮০ পাওয়া গিয়েছিল।

হাতিরঝিল এলাকার দুই পাশে দুই সিটি করপোরেশনেরই কয়েকটি ওয়ার্ড পড়েছে। সেসব এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি পাওয়ার কথা জানিয়েছিল রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।

বর্ষায় এডিস মশার উপদ্রব বাড়তে পারে বলেও তখন সতর্ক করেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সেই শঙ্কার বাস্তব রূপ নিয়েছে জুনের শুরুতেই।

বর্ষার শুরুতেই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় তারা আলাদা একটি ওয়ার্ড খুলেছেন।

হাসপাতাল কর্মকর্তারা জানান, গত শনিবার একদিনেই ৯ জন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়। সোমবার সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছিল সাতটি শিশু। ডেঙ্গু এবার আগের চেয়ে মারাত্মক হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এল ই ফাতমী। তিনি বলেন, তার হাসপাতালে এবার গত বারের চেয়ে বেশি রোগী আসছেন। এমনও হয়েছে একদিনে ২০টি বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। এবার যে ধরনের রোগী আসছেন তাদের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিক এবং শক সিনড্রোম বেশি পাচ্ছি। আমাদের এখানে শিশু বিভাগে যারা ভর্তি আছে, তাদের প্রায় ৫০ ভাগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।

অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কয়েকটি শিশুকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফাতমী।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে পিআইসিইউ সাপোর্ট নেই। এ কারণে শকে যাওয়ার আগে দুটো বাচ্চাকে (অন্য হাসপাতালে) রেফার্ড করেছি। দুটি শিশুই পরে মারা গেছে।

নগরবাসীর অভিযোগের মুখেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মশক নিধনে তাদের কাজে আন্তরিকতার অভাব নেই।

ডেঙ্গু এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেই বলেও দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুনও একই কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাড়ির অভ্যন্তরেও বিভিন্ন উৎসে এডিস মশা জন্মায়। বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবনের জলাধার, লিফটের নিচে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে, যেখানে এডিস মশা জন্মালেও আমাদের কর্মীরা সেসব জায়গায় যেতে পারে না। এজন্য নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close