হাসান ইমন ও জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১৯ জুন, ২০১৯

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির ৪ মাস

মধ্যরাতে বদলে যায় চিত্র : শুরু হয় কেমিক্যাল ব্যবসা

রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ৭০ জনের প্রাণহানির পরও পাল্টায়নি পরিস্থিতি। গত ২০ ফেব্রুয়ারির সেই ভয়াল রাতের দগদগে ক্ষত না শুকাতেই অসাধু চক্র আবারও সেখানে শুরু করেছে অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসা। রাত গভীর হলেই পাল্টে যায় চকবাজারের চুড়িহাট্টার চিত্র। রাজনৈতিক প্রভাবশলী মহল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত টাস্কফোর্সের একাধিক উদ্যোগেও বন্ধ হচ্ছে না এসব অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেমিক্যালের আগুন খুবই অল্প সময়ে দ্রুত ছড়ায়। তাই পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে সরকার ও সিটি করপোরেশনকে দৃঢ়প্রত্যয়ী ভূমিকা নিতে হবে। কেমিক্যাল ব্যবসায়ী ও কিছু লোভী বাড়িওয়ালার জন্য জননিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এদিকে, চুড়িহাট্টাকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এখনো ভুগছেন কয়েক ডজন মানুষ। তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য কেউই এগিয়ে আসেনি। বরং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য মর্মবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা।

এলাকাবাসী বলেছেন, এমন ভয়াবহ ঘটনার পরও টনক নড়েনি পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের। এখনো গোডাউন ও বাসাবাড়িতেই মজুদ রাখা হচ্ছে রাসায়নিক দাহ্য বস্তু। যেকোনো সময় আবারও ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটতে পারে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন সঠিকভাবে পরিস্থিতি তদারকি করছে না। চুড়িহাট্টার দুর্ঘটনার পর কিছু দিন তদারকি চললেও এখন শিথিল হয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযানে শিথিলতা আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকায় ফিরে এসেছে পুরোনো চিত্র। এছাড়া কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল জড়িত আছে। এজন্য তারা কেমিক্যাল ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে।

স্থানীয়রা জানায়, পুরান ঢাকা থেকে এখনো কেমিক্যালের গুদাম সরেনি। সিটি করপোরেশন গঠিত টাস্কফোর্সের অভিযান লোকদেখানো মাত্র। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা এখন পুরো মাত্রায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আগে সকাল-বিকাল ট্রাকভর্তি কেমিক্যালের ড্রাম আসত। আর এখন আসে মধ্য রাতে। পরিবর্তন শুধু এতটুকুই।

স্থানীয় বাসিন্দা ও একতা সংঘের সাধারণ সম্পাদক আসিক উদ্দিন সৈনিক বলেন, সিটি করপোরেশন পুরান ঢাকার কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে নামমাত্র। কয়েকটি গুদাম বন্ধ করেছে মানুষকে দেখানোর জন্য। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনো কোনো গুদাম সরেনি। মধ্যরাতে আসে ট্রাকভর্তি কেমিক্যালের ড্রাম। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। আর স্থানীয়রা প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের কারণে অনেকটা চুপ। সরকার যদি এখনো সচেতন না হয় তাহলে আমাদের জন্য আরো ভয়াবহ ট্র্যাজেডি অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এলাকাবাসীর তথ্য মতে ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নানামুখী চাপে গোডাউনের মালিকরা গোপনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাসায়নিক সরিয়ে নিচ্ছে। তবে রাজধানীর কোতোয়ালি, চকবাজার, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর, কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় গোপনে এখনো কেমিক্যাল কারখানায় কাজ চলছে। অবৈধ কারখানার মধ্যে রয়েছে ব্যাটারি তৈরি, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক সরঞ্জাম, নকল বৈদ্যুতিক ক্যাবল, ঝালাই, খেলনা ও জুতা-স্যান্ডেলসহ শতাধিক পণ্য তৈরির কারখানা। আর এসব পণ্য উৎপাদনে বেশিরভাগ কারখানায় ব্যবহার করা হয় দাহ্য কেমিক্যাল। বিশেষ করে জুতা তৈরির ফ্যাক্টরিতে যে সলিউশন ব্যবহার করা হয় তা খুবই বিপজ্জনক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক (বাপা) ড. আবদুল মতিন বলেন, কোনো একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটলে কিছু দিন পর আমরা সেটা ভুলে যাই। সরকারেরও গাফিলতি রয়েছে। ঘটনার প্রথমদিকে সরকার কেমিক্যাল সরানোর জন্য যে তোড়জোড় করেছিল, সেটাও কিছু দিন পর বন্ধ হয়ে গেছে। যদি টাস্কফোর্স গঠিত অভিযানটি চলমান থাকত তাহলে হয়তো কেমিক্যাল গুদামগুলো সরানো সম্ভব হতো।

তিনি আরো বলেন, কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেট রাজনৈতিকভাবে এতটাই প্রভাবশালী সেটা ভাঙা সরকারের পক্ষেও কষ্টসাধ্য। তবে সরকার ইচ্ছা করলে সম্ভব।

কেমিক্যাল গুদাম সরানোর পরামর্শ দিয়ে এই পরিবেশবিদ বলেন, সরকারকে অচিরেই পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল সরাতে হবে। না হলে নিমতলী, চুড়িহাট্টার চেয়ে আরো বড় ধরনের ট্র্যাজেডি দেখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close