নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক

  ১৮ জুন, ২০১৯

ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকিতে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পুনর্বাসন কেন্দ্র চনপাড়া। সবাই চেনে বস্তি হিসেবে। ১২ হাত বাই ১৫ হাতের ঝুপড়ি ঘর। মাঝে মধ্যে উঁকি দিচ্ছে দালানকোঠাও। এলাকাজুড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল। সরু রাস্তা। প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস। চনপাড়াকে আশপাশের লোকজন অপরাধের আখড়া হিসেবেই বেশি চেনে। এ চনপাড়াই এখন ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এখানে নেই কোনো অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। গত ৪৫ বছরে কমপক্ষে ২০টি স্থানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এ চনপাড়ায়। ফলে অনেকের সবকিছুই পুড়ে যায়। বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে জানমাল ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হবে প্রায় ২০ হাজার ঝুপড়ি ঘর।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটারের মধ্যে রূপগঞ্জের এ চনপাড়া বস্তির অবস্থান। রূপগঞ্জ উপজেলার বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ও রাজধানীর ডেমরার শেষ মাথায় চনপাড়া। ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার নদীভাঙা ভূমিহীনদের চনপাড়ায় ৮২৬ একর ওয়াসার জমির ওপর পুনর্বাসন করেন। প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস এ চনপাড়ায়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চনপাড়াজুড়ে রয়েছে হাজারো ঝুপড়ি ঘর। ১২ হাত বাই ১৫ হাতের এসব ঘর সাধারণত টিন-কাঠের তৈরি। মাঝে মধ্যে ঘুপচি ঘরগুলোর ভেতর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে দালানকোঠাও। চনপাড়াজুড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল। এসব বৈদ্যুতিক তার থেকে শর্টসার্কিটের কারণে বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া চনপাড়ার ঘরে-ঘরে, দোকানে-দোকানে রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার বোমা। এসব থেকেও বড় ধরনের আগুনের ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলেন, চনপাড়ায় যেমন রয়েছে ঝুপড়ি ঘর, তেমনি রাস্তাগুলো খুব সরু। এসব রাস্তা দিয়ে রিকশা তো দূরের কথা কয়েকজন একসঙ্গে হাঁটাও দায়। এলাকার ভেতরে আগুনের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস আসা কষ্টসাধ্য হবে। তারা আরো বলেন, চনপাড়ার সবচেয়ে বড় ভয়, এখানকার বাড়িঘরগুলো সবই টিন-কাঠের তৈরি। আবার অনেক বাড়ি বাঁশের তৈরি মাচা দিয়ে। আগুন লাগলে নেভানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। কোনো বাড়ি কিংবা দোকানে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চনপাড়ায় বাড়িঘরের পাশাপাশি রয়েছে প্রশিকা, ব্র্যাক, পিত্র মটিসি, ইউএসটিসিসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। রয়েছে সরকারি, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগুনের ঘটনা ঘটলে বাড়িঘর, বিপণিবিতানের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

চনপাড়া এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের পর এ চনপাড়ার ২০টি স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু আগুন নেভাতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যদি বড় ধরনের আগুন লাগে তাহলে গোটা চনপাড়া পুড়ে যাবে। তারা বলেন, চনপাড়ায় বৈদ্যুতিক তারের যে জঞ্জাল এখান থেকেই আগুন লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার তো রয়েছেই।

কথা হয় চনপাড়ার মুদি ব্যবসায়ী রহমতের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজানগো নিজেই তো দেখলেন। এলাকাডায় হাঁটাচলাও কষ্ট। আগুন লাগলে গাড়ি ঢুকবার পারব না। আর কারেন্টের তো কোনো আগামাতা নাই। চা দোকানি কেরামত বলেন, অনেক কষ্টে চা বিক্রি করে জীবন-জীবিকা করেন। স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দোকান চালাচ্ছেন। কেরামতের সোজা কথা। তার ক্ষতি হলে সে মরেই যাবে। তিনি বলেন, যেই ভাবে হারা দেশে আগুন লাগতাছে। হগল সময় ডরে-ডরে থাহি। কহন জানি আমাগো বস্তিতে আগুন লাগে। কেন এমন ভয়? এমন প্রশ্নের সোজাসাপটা জবাব। দেহেন না। আফনে বুইঝা লন।’ কথা হয় মজিবর নামে এক তরুণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই আগুনের ঘটনায় চনপাড়াবাসী ভীত। কারণ আগুন লাগলে নেভানোর কোনো অবস্থা নেই।’

চনপাড়া এলাকার ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলু বলেন, চনপাড়া আগুনের ঝুঁকিতে আছে এটা সত্য। বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষতিও হবে। তিনটি রাস্তা ছাড়া বাকি সব রাস্তা চিকন গলির মতো। তিনি বলেন, চনপাড়ায় প্রায় ৬ হাজার ঘর রয়েছে। আগুনের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।

কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আবদুল মান্নান বলেন, চনপাড়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে আগুন লাগলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ঘটতে পারে অনেক হতাহতের ঘটনা। তাদের বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে, যেন অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, এলাকার ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে পরিদর্শন করে দেখব কি করা যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close