নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা থেকে ফিরে

  ১৮ জুন, ২০১৯

খুলনা-মোংলা রেলসেতু

মাথা তুলছে আরেক স্বপ্ন

ধীরে মাথা তুলছে পদ্মা সেতুর মতো আরেক স্বপ্ন খুলনা-মোংলা রেলসেতু। রূপসাপাড়ে কর্মযজ্ঞের যেন উৎসব চলছে। দিনরাত কাজ চলছে নদীর দুইপাড়ে। কর্মী, শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের কাজের শব্দে মুখর পুরো এলাকা। সেতু এখন স্বপ্নের খোলস থেকে বেরিয়ে রূপ নিয়েছে দৃশ্যমান বাস্তবতায়। বহুদূর থেকেও সেতুর অংশ চোখে পড়ছে।

দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে এই রেলসেতু। এরই মধ্যে খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আর দুই বছরের মধ্যেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ ও ট্রেন চালু হবে। রেলপথটি চালু হলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য সরাসরি পরিবহন করা যাবে। ফলে আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সেতু নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে রূপসা নদীর দুই পাড়ে। নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বাংলাদেশে প্রথম সুপার স্ট্রাকচারের রেলসেতুর নির্মাণকাজ। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানা যায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন।

খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হচ্ছে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মোংলা। খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং সেতুর জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত। এটি সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরে আরো গতি সঞ্চার হবে। এটি মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের রেলসংযোগ তৈরি করবে। কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানে মালামাল পরিবহন সহজ হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সহজে সুন্দরবণ ভ্রমণ করতে পারবেন।

রূপসা রেলসেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বলেন, অবিরাম চলছে রূপসা রেলসেতুর কাজ। সেতু নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে রূপসা নদীর দুইপাড়ে। নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বাংলাদেশে প্রথম সুপার স্ট্রাকচারের রেলসেতুর নির্মাণকাজ।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে মূল সেতুর ৩২টি স্প্যানের মধ্যে সাতটি বসানো হয়েছে। এছাড়া ৬০ কিলোমিটর রেললাইনের ১৫ কিলোমিটারের মাটি ভরাট হয়েছে।

রেলসেতুটি চালু হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ প্রতিবেশি দেশগুলোতে যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এতে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।

এদিকে খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের অগ্রগতিতে আশার আলো দেখছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী বলেন, এটা হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক উপকার হবে। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হবে। যা আমাদের জন্যে সুফল বয়ে নিয়ে আসবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close