নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ জুন, ২০১৯

বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক

সীমান্তে হত্যা ‘অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু’ : বিএসএফ প্রধান

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র বলেছেন, সীমান্তে হত্যা নয়, অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু হচ্ছে। তার ভাষ্য, যখন কোনো বিকল্প থাকে না, প্রাণ বাঁচাতে বিএসএফ শুধু প্রতিহত করে। মানুষের জীবন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবকটি ঘটনাই ভারতীয় ভূমিতে ঘটেছে, আর তাতে বিএসএফ সদস্যরাও প্রাণ হারিয়েছেন। তবে বিজিবি মহাপরিচালক জানিয়েছেন, সীমান্তে ‘মৃত্যু’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

গতকাল শনিবার পিলখানা সদর দফতরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে তিন দিনব্যাপী বৈঠক শেষ হয়। এরপর ছিল একটি সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং ও প্রশ্নোত্তর পর্ব। মাস কয়েক আগে সাতক্ষীরা সীমান্তের কাছে এক যুবকের মুখ ও পায়ুপথে পেট্রল ঢেলে বিএসএফ হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১৫টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফের মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র সাতক্ষীরার ওই যুবক সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি ‘হত্যাকা-’ শব্দ ব্যবহারে আপত্তি তোলেন। তিনি বলেন, মানুষের জীবন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে তাদের। বিএসএফকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি মাঝে মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দুর্বৃত্তরা বিএসএফের ওপর পাথর ছুড়েছে, লাঠিপেটা করেছে, কখনো কখনো দা দিয়ে হামলা করেছে। কোনো বিকল্প না থাকায় প্রাণে বাঁচতে খুব অল্প কিছু ঘটনায় বিএসএফ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে রজনীকান্ত জানান, গত বছর ভারতীয় ভূমিতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি এবং ছয়জন ভারতীয়। একজন জওয়ান মারা গেছেন, ৩৯ জন আহত হয়েছেন। এ বছরও তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা প্রতিটি ঘটনায় নিয়মমাফিক থানায় মামলা করেছেন এবং তদন্ত করেছেন। ভারতীয় ভূমিতে দুর্বৃত্তদের সহযোগীদের গ্রেফতার করেছেন। তারা বিজিবি ও বিএসএফকে সীমান্তের যেসব জায়গা দুর্বল, সেসব জায়গা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। এতে করে অবৈধ অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

সাংবাদিকদের তরফ থেকে ফেলানী হত্যাকা- ও মেহেরপুরে আম পাড়তে গিয়ে এক বালকের বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বিচার হয়েছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, বিএসএফের সর্বোচ্চ গুরুত্ব রয়েছে এ বিষয়গুলোর প্রতি। তবে দুটি ঘটনার কোনোটির বিচার ঠিক কী অবস্থায় আছে তা জানাননি তিনি। তাদের সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করবে-এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিজিবির মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, বিএসএফের মহাপরিচালক সবই বলে ফেলেছেন। তারা তিন দিনব্যাপী বৈঠকে সীমান্তে ‘মৃত্যু’ নিয়ে কথা বলেছেন এবং এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, কিছু বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। মাদকদ্রব্য চোরাচালান, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান এবং নকল টাকা রোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুটি বাহিনীর কেউ যেন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করে, সে ব্যাপারেও কথাবার্তা হয়েছে।

ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে জোরদার করতে বিএসএফ দিল্লি থেকে একটি মোটরসাইকেল র‌্যালি নিয়ে চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর বিজিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় পৌঁছাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নতুন করে আবারও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশ এ ধরনের সব ঘাঁটি নির্মূল করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে এবং এতে তারা সন্তুষ্ট।

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারতে জেএমবিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে বিএসএফ কী বলেÑ এমন প্রশ্নে রজনীকান্ত মিশ্র বলেন, বৈঠকে এ নিয়ে সে অর্থে আলোচনা হয়নি। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।

ভারতে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে সে দেশের সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। এর সত্যতা কতটুকুÑ এমন প্রশ্নে বিজিবির মহাপরিচালক বলেছেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাজ সীমান্ত পেরিয়ে কেউ এদিক-ওদিক গেল কি না তা দেখা। সঙ্গে আরো কিছু বিষয় নজরদারি করা হয়। এ বৈঠকে ‘জঙ্গি হামলা’ নিয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল না।

পিলখানার এ বৈঠক বিজিবি-বিএসএফের মধ্যকার ৪৮তম সম্মেলন। এতে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close