নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ জুন, ২০১৯

সুদ ও বেতনেই ব্যয় দেড় লাখ কোটি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার যে প্রস্তাবিত বাজেট গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করেছেন, সেখানে অনুন্নয়ন ব্যয় (পরিচালন বাজেট) খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকাই চলে যাবে ঋণের সুদ পরিশোধ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার পেছনে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঋণের সুদ পরিশোধে ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যা বাজেটের মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ হাজার ৭৩০ কোটি এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা বেশি। ব্যয়ের দিক থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধের পরই সুদ পরিশোধের খাত রয়েছে। অনুন্নয়ন বাজেটের ১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন এবং সুদ পরিশোধে। আগামী বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাজেটের সবচেয়ে বেশি অর্থ ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা চলে যাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা খাতে। এটি মোট অনুন্নয়ন বা রাজস্ব বাজেটের ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। সুদ পরিশোধে খরচ হবে ৫৭ হাজার ৬৮ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। তাছাড়া অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন বাবদ চলে যাবে ২৭ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। যা ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৫৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কিছুটা কমিয়ে ৫৭ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনেন অর্থমন্ত্রী। সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৫১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে কমে তা ৪৮ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা হয়েছে। পেনশনে মূল বাজেটের ২৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকা থেকে কিছুটা বেড়ে ২৬ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। এটি সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই ঋণের সুদ পরিশোধের জন্যই এবার এই খাতে বেশি বরাদ্দ রাখতে হয়েছে।

জানা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ধার নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। তবে বিক্রি বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে সেই লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকায় চলে গেছে। আর তাই সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উৎসে কর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এত দিন ৫ শতাংশ হারে মুনাফা কাটা হতো। আসছে ১ জুলাই থেকে কাটা হবে ১০ শতাংশ। মূল বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২৯ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে বেতন ও ভাতা বাবদ যে বরাদ্দ রেখেছেন তার মধ্যে ৮ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা কর্মকর্তাদের বেতনে খরচ করবেন। আর কর্মচারীদের বেতনের জন্য ২৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে। তাছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাতা বাবদ ব্যয় হবে ২৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সুদ পরিশোধের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য রাখা হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।

এবার বৈদেশিক উৎস থেকে ৭৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। এর মধ্যে পূর্বের ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাবদ ব্যয় হবে ১১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। ঘাটতির বাকি ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা নেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪৮ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার কোটি টাকা অন্যান্য উৎস থেকে। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৪৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ অর্থবছরের মূল বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা নিয়ে ঘাটতি মেটানোর কথা বলা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। বিদায়ী অর্থবছরে মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ছিল। ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমায় এ লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা নেওয়ার কথা বলা হয় সংশোধিত বাজেটে। তাছাড়া বিদায়ী অর্থবছরে বেশি পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাত থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ধার করার কথা বলা হয়েছে। জানা যায়, বাজেটে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে সঞ্চয়পত্রে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close