কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৫ জুন, ২০১৯

চট্টগ্রাম বন্দরে দুই জাহাজের সংঘর্ষ

বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা

গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের চ্যানেলে দুটি বড় জাহাজের সংঘর্ষে কয়েক ঘণ্টার জন্য স্থবির হয়ে যায় সমুদ্র বাণিজ্য। দুটি জাহাজের মধ্যে একটি তেলবাহী এবং অপরটি কন্টেনারবাহী জাহাজ। দুটি জাহাজই আয়তনে বড়। জাহাজ দুটির গতি অপেক্ষাকৃত ধীরগতি ছিল বিধায় বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে বন্দর চ্যানেল। ঘটনার পরপরই বন্দরে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে জাহাজ দুটি উদ্ধার করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হয়। উভয় সংস্থার ছয়টি উদ্ধারকারী জাহাজ তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর জাহাজ দুটিকে পৃথক করে ড্রাইডকে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর পরই বন্দর কর্তৃপক্ষ ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জাহাজ দুটি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্দর ত্যাগ করতে পারবে না। কন্টেনার জাহাজে আটকা পড়েছে ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার পণ্য।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, যে দুই বড় জাহাজের সংঘর্ষ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ ‘বুরগান’ এবং অপরটি কন্টেনারবাহী জাহাজ ‘এক্সপ্রেস মহানন্দা’। দুটি জাহাজের মধ্যে একটি বন্দরের ভেতরে পণ্যভর্তি কন্টেনার নিয়ে বন্দরে ঢুকছিল। অন্যটি ডলফিন জেটিতে জ্বালানি তেল খালাস করে বন্দর চ্যানেল থেকে বের হচ্ছিল। কীভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত জানা না গেলেও মুখোমুখি একটি অন্যটিকে আঘাত করেছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য মতে, তৃতীয় একটি জাহাজকে সাইড দিয়ে গিয়ে উভয়ের মধ্যে সংষর্ষের ঘটনা ঘটে। জাহাজ দুটির গতি বেশি থাকলে বড় ধরনের বিপদ হতো। আপাতত বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। ঘটনার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ বহিঃনোঙ্গর থেকে বন্দরের ভেতরে জাহাজ প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। বাইরের অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়। বন্দরের ইতিহাসে এটি একটি অন্যতম বড় ঘটনা বলে বন্দর সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, শুক্রবার সকালে দুটি জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর পরই বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়। চ্যানেল নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। পরে দুটি জাহাজকে সরানোর জন্য কয়েকটি উদ্ধারকারী জাহাজ সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালায়। জাহাজ দুটি মুক্ত হবার পর ড্রাইডকে সরিয়ে আনা হয়। বর্তমানে বন্দর চ্যানেল নিরাপদ রয়েছে। জাহাজ দুটি থেকে ক্ষতিকর কোনো পদার্থ বের হয়নি। আঘাত ওপরের দিকে ছিল বিধায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েনি বন্দর। দুটি জাহাজ এখন বন্দরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এগুলো বন্দর ত্যাগ করতে পারবে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তেলবাহী জাহাজ বুরগান কুয়েতি পতাকাবাহী। ২০১৪ সালে নির্মিত জাহাজটি বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি তেল নিয়ে মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। জাহাজটিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তেল ছিল। এগুলো ডলফিন জেটিতে খালাস করার পর বুধবার বন্দর ত্যাগ করার কথা। কিন্তু তেল খালাসে দেরি হওয়ার কারণে এটি শুক্রবার সকালে রওনা দেয়। অন্যদিকে কন্টেনারবাহী জাহাজ এক্সপ্রেস মহানন্দা ৭ শতাধিক পণ্যভর্তি কন্টেনার নিয়ে কলম্বো বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর আসে। শুক্রবার সকালে কন্টেনার খালাসের জন্য এটি বন্দরের ভেতরে ঢুকছিল। বন্দর চ্যানেলের মাঝামাঝি স্থানে এসে দুটি জাহাজের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দিনের বেলায় দুটি জাহাজের মধ্যে কীভাবে সংঘর্ষ হলো এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। যদি তেলবাহী জাহাজ বুরগান তেলভর্তি থাকা অবস্থায় থাকতো তখন বন্দরে বড় ধরনের বিপদ নেমে আসতো। খালি থাকার কারণে রক্ষা পায় চট্টগ্রাম বন্দর।

এদিকে কন্টেনার জাহাজ থেকে সময়মতো কন্টেনার নামাতে না পারার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়বে। এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। কন্টেনার ভর্তি অবস্থায় জাহাজটি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় পণ্য নামানো দীর্ঘসূত্রতায় আটকে যেতে পারে।

এ বিষয়ে আলাপকালে এক্সপ্রেস মহানন্দা জাহাজের এজেন্ট সি কনসোর্টিয়ামের চট্টগ্রাম প্রধান ক্যাপ্টেন শাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের যাতে বেশি ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি আমরা দেখছি। কেন সংঘর্ষ হলো, ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে তা নিরূপণ করতে এরই মধ্যে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে জানানো হয়েছে। তারা এসে সার্বিক বিষয় তদন্ত করে দেখবেন। এটি সময়ের ব্যাপার। তিনি বলেন, জাহাজটি কলম্বো থেকে কন্টেনার পণ্য নিয়ে বন্দরের ভেতরে প্রবেশের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জাহাজ দুটির সংঘর্ষের ঘটনায় এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close