নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ জুন, ২০১৯

ছাত্রদলের কমিটি

বিএনপি কার্যালয়ের গেটে তালা, হট্টগোল

কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তর্ক, ঢুকতে বাধা

নতুন কমিটিতে বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ায় আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তাদের বিক্ষোভ কেন্দ্র করে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে দিনভর চলে হট্টগোল। পরিস্থিতি সামাল দিতে এসে উল্টো তোপের মুখে পড়ে নয়াপল্টন এলাকা ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। তারা বিচ্ছিন্ন করে দেন বিদ্যুৎ সংযোগ; ভাঙেন সিসি ক্যামেরাও। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ‘ছাত্রদল নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হতে দেব না’ এ ধরনের স্লোগান দেন তারা।

এদিকে, বিক্ষোভকারীদের বেশি ক্ষোভ দেখা যায় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করা দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ওপর। তাকে বের করতে এক পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সও নিয়ে আসেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এর মধ্যে আন্দোলন থামাতে দুপুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন বিএনপি নেতারা। তাদের আশ্বাসের পরও শান্ত হননি বিক্ষোভকারীরা। এটাকে বড় দলের স্বাভাবিক ঘটনা বলছেন নেতারা।

এমন অবস্থার মধ্যেও বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবস্থান ছিল না।

দেখা গেছে, বেলা সোয়া ১১টায় নয়াপল্টনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে ১১টা ২০ মিনিটে কার্যালয়ের সামনে আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন। বিএনপির এই চার নেতা কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতারা। একপর্যায়ে ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন বিএনপির নেতারা।

বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বলেন, বয়সসীমা না করে ছাত্রদলের ধারাবাহিক কমিটি দিতে হবে। আর রিজভী একাই দুটি পদ নিয়ে অফিসকে বাড়ি বানিয়েছেন। রিজভীকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যান। এ সময় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে কথা বলার অনুরোধ করেন। তবে ছাত্রনেতারা বলেন, ভেতরে নয়, এখানেই বলুন।

পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু কার্যালয়ের সামনে থেকে চলে যান। ফজলুল হক মিলন ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বিএনপির কার্যালয়ের নিচে দলের প্রচার সামগ্রী বিক্রির দোকানে বসতে চাইলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতাকর্মী দোকান বন্ধ করে দেয়। এ সময় এ্যানি ছাত্রদলের নেতাদের ধমক দিলে এক নেতা তাকেও ধাক্কা দেন।

ছাত্রদলের বিক্ষোভের বিষয়ে সাংবাদিকদের ফজলুল হক মিলন বলেন, কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দল থেকে দেওয়া হয়েছে। আর আমরা সবাই বসে এটা কার্যকর করব। তবে দুঃখ ও অভিমান থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। তাদের দুঃখ ও বেদনার কথা আমরা শুনব। সেটা আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বলব।

প্রসঙ্গত, গত ৩ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিল করে নতুন কমিটি করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০০ সালে যারা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারাই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের প্রার্থী হতে পারবেন। ওইদিন থেকেই ছাত্রদলের বয়স্ক নেতাকর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ হন। তারাই আজকে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে তালা দেয় এবং বিক্ষোভ করেন।

কার্যালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। ছাত্রদলের নেতারা বিক্ষুব্ধ কেনÑ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির এক নম্বর সিনিয়র সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ‘আমরা তেমন বিক্ষুব্ধ না। ঈদের পর এখানে এসেছি চা খাওয়ার জন্য।’

এদিকে বিক্ষুব্ধ সাবেক নেতারা এক পর্যায়ে ভেতরে ঢুকে অফিস কর্মচারীদের কয়েকজনকে বের করে দেয়। এ সময় ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম নয়ন বিক্ষুব্ধদের মারধরের শিকার হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

পরে বিএনপির সিনিয়র নেতারা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিকালের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাদের একটি প্রতিনিধি দলও গুলশানের কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে তাদের সঙ্গে তারেকের কথা হবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

বিকালের পর কার্যালয়ের তালা খুলে ভেতরে ডুকেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তারা মূলত অসুস্থ রিজভীকে দেখতে কার্যালয়ে আসেন। বেরিয়ে যাওয়ার সময় মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টা সাংবাদিকরা যেভাবে সিরিয়াসলি নিয়েছে বা উপস্থাপন করেছে আসলে বিষয়টি সে রকম সিরিয়াস না। এটা পোলাপানের কাজ-কর্ম, মান-অভিমানের কাজ। কয়েক দিন আগে ঈদ গেছে। মান-অভিমান হয়েছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে। কারো কিছু করতে হবে না। কোনো সালিশ, আলোচনা কিছুই করতে হবে না। ওরা রাগ করেছে, সব ঠিক হয়ে যাবে।

গয়েশ্বর রায় বেরিয়ে এসে বলেন, কেউ ব্যথা পেলে চিৎকার দেয়, এটাই স্বাভাবিক। কতগুলো পদ্ধতিগত কারণে আর নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ায় যোগ্য ছেলেরা তাদের আরাধ্য লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে নাই। সে বিষয়টা আমাদের বিবেচনা করতে হবে, এরা দলের জন্য পরিশ্রম করে, এরা বাইরের নয়, এরা দলের মঙ্গল চায়। সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও আছে। আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধান হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close