আরিফ সোহেল

  ০৯ জুন, ২০১৯

রান-পাহাড়ের নিচে বাংলাদেশ

কার্ডিফে হ্যাটট্রিক জয়ের স্বপ্নমুখো বাংলাদেশকে হতাশ করেছে ইংল্যান্ড। বরং পয়ন্তর কার্ডিফে ইংলিশরা চড়েছে রানের পাহাড়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে রানের বন্যা বইয়ে দিয়ে ৫০ ওভার শেষে তারা তুলে নিয়েছে ৩৮৬/৬ রান। দলের হয়ে দুরন্ত সেঞ্চুরি করেছেন জেসন রয়।

যদিও শুরুতে বেজায় সাবধানি ছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। উড়িয়ে মারছেন বলের দিকে সূক্ষ্ম নজর রেখেই। মারার বলে মারা আর ছাড়ার বল ছেড়েছেন শুরু থেকেই। প্রয়োজনে হয়েছেন আগ্রাসীও। মেহেদী হাসান মিরাজের করা ৩৫তম ওভারে জেসন রয় টানা ৩টি ছক্কা মেরেছেন। অবশ্য পরের বলেই মিরাজই আউট করছেন ড্যাসিং রয়কে। তবে তার ব্যাটে ভর করেই ৩৮৬ রানের বিশাল স্কোর গড়েছে ইংল্যান্ড।

টস জিতেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগের ২ দিন উইকেটে ছিল কাভারে ঢাকা। উইকেটে ঘাস, বইছে বাতাস; তাই মাশরাফি টস জিতে ফিল্ডিংই নিয়েছিলেন। কিন্তু শুরু থেকে সাবধানি ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম ২ ঘণ্টায় কিছুই পাননি মাশরাফি। উল্টো ওপেনিং জুটিতেই ১২৮ রান তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ড। এ সময়ে এভাবে-ওভাবে বোলার চেঞ্জ করেও কোনো কাজে লাগেনি। বরং বাংলাদেশের বোলারদের জন্য ওভারে একটি করে চার যেন বরাদ্দ করেই দিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা! শুধু চার দেখতে দেখতে দর্শকদের যেন একঘেয়েমি না পেয়ে বসে, তাই ফাঁকে ফাঁকে ছক্কা মারতেও ভুল করেননি। বাংলাদেশের বোলারদের প্রথম সাফল্য ২০ ওভারে, মিরাজের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত করে বেয়ারস্টোকে যখন ফেরালেন মাশরাফি।

বাংলাদেশের বোলারদের এই সাফল্য নিয়মিত দেখা যায়নি। মাশরাফি বাদে সবারই ইকোনমি ৬ ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে ব্যয়বহুল সাকিব আল হাসান ১০ ওভারে ৭১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। বাংলাদেশের বোলারদের হতাশার দিনে নিয়মিত দেখা গেল ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ঝড়। আর তাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন রয়, পেলেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি; সামগ্রিকভাবে চতুর্থ। এর আগে ইংল্যান্ডের হয়ে জস বাটলার এবং রুট সেঞ্চুরি করেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। ভারতের রোহিত শর্মার ব্যাটেও এসেছে এক সেঞ্চুরি। দুর্দান্ত গতিতে ছুটতে থাকা রয়কে থামালেন মিরাজ। কিন্তু তাতেও যে ইংল্যান্ডের রানবন্যা থামানো যায়নি। গত কিছুদিনে অতি আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে ইংল্যান্ড, বিশেষ করে নিজেদের মাঠে। ৩৫০-৩৬০ রান তোলা ইংলিশদের কাছে এখন আর কোনো ব্যাপারই নয়। শেষ ২.৫ ওভারে ইংলিশরা তুলেছেন ৪৫ রান। খুবই বাজে ফিল্ডিং করেছে বাংলাদেশ। এ কারণে কমপক্ষে ২০ রান বেশি করেছে ইংল্যান্ড।

এই ওপেনিং জুটিই ভেঙে স্বস্তি ফেরান মাশরাফি। বল কিছুটা লাফিয়ে ওঠায় এজ হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের অসাধারণ ক্যাচে সাজঘরে ফিরতে হয় ধীরেগতিতে হাফসেঞ্চুরি তোলা বেয়ারস্টোকে (৫১)। পরে জো রুট সাইফউদ্দিনের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ২১ রানে। মাঝখানে রয়ে সয়ে খেলে হঠাৎ ঝড় তোলা শুরু করেছিলেন ওপেনার রয়। ৩৫তম ওভারে মিরাজকে টানা ৩ ছয়ে গ্যালারি মাতিয়ে তুলেছিলেন। ছক্কার ঝড়ে ১৫৩ রান পূরণও করেছিলেন। এই ওভারের চতুর্থ বলে তাকে মাশরাফির তালুবন্দি করিয়েছেন মিরাজ। রানের চাকা সঠিকভাবে সচল রেখেছেন জস বাটলার ও অধিনায়ক এউইন মরগান। ঝড়োগতিতে রান তোলা বাটলার ফিরেছেন ৬৪ রানে। বাটলারের বিদায়ের পর ইংলিশ অধিনায়ক ৩৩ বলে ৩৫ রান করে ফিরে গেছেন সাজঘরে। মূলত ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেটের রানের পাহাড় নিশ্চিত হয়েছে স্বাগতিকদের। ওকস ৮ বলে ২ ছক্কায় মিনি ঝড় তুলে করেন ১৮ রান। আবার প্লাঙ্কেটও ছিলেন সমানতালে আগ্রাসী। ৯ বলে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় করেন ২৭ রান। ৭৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন পেসার সাইফউদ্দিন। ৬৭ রান দিয়ে দুটি নিয়েছেন মিরাজও। ৬৮ রান দিয়ে একটি নিয়েছেন মাশরাফি, ৭৫ রান দিয়ে মোস্তাফিজ পেয়েছেন এক।

কার্ডিফে এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের পাহাড় গড়েছে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশকে তারা ছুড়ে দিয়েছে রেকর্ড ৩৮৭ রানের লক্ষ্য। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আনায়াসে ৬ উইকেটে ৩৮৬ রান তুলেছে ইংলিশরা। ফলে জিততে হলে বিশ্বকাপে রেকর্ড রান তাড়া করেই জিততে হবে টাইগারদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close