পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকতা থেকে

  ২৭ মে, ২০১৯

আরো চাপে রাহুল-মমতা ব্যতিক্রম নন মোদিও

নরেন্দ্র মোদি এবং তার দল বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের পথে যখন; তখন ঘরে-বাইরে বিপদ বাড়ছে। একদিকে আইসিসের জঙ্গি হানার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস ঘর সামলাতে নাকাল। অন্যদিকে নারদ-সারদা-রোজ ভ্যালি আর্থিক দুর্নীতি মামলায় তৃণমূলের নির্দেশে কাগজপত্র হাপিশ করে দিয়েছেন বলে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, সিবিআই, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করেছে। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় প্রিয় পাত্র। কয়েক মাস আগে যাকে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারি হওয়া থেকে বাঁচাতে নজিরবিহীনভাবে ধর্মতলায় ধরনায় বসেছিলেন খোদ মমতা।

জানা যাচ্ছে, এবার সন্ত্রাসবাদী হামলার নিশানা হতে পারে ভারত। আর সেই হামলা চালাতে পারে আইসিসের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। এমনকি কেরালায় হামলা চালাতে এরই মধ্যে ১৫ জনের সন্ত্রাসবাদী দল রওনা দিয়েছে জলপথে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, শ্রীলঙ্কা থেকে অন্তত ১৫ জন আইএস সন্ত্রাসবাদী লক্ষদ্বীপের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ওই হামলার আশঙ্কায় এরই মধ্যে কেরালার উপকূলবর্তী এলাকার থানাগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। কেরালা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার পরই উপকূলবর্তী এলাকায় অ্যালার্ট জারি ছিল। কিন্তু এবার গোয়েন্দাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য এসেছে। উপকূলবর্তী সব থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। সমুদ্রে কোনো সন্দেহজনক নৌকা দেখলেই যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মৎস্যজীবীদেরও সতর্ক করা হয়েছে। সন্দেহজনক কোনো গতিবিধি তাদের নজরে পড়লে যেন উপকূলরক্ষী বাহিনীকে তারা খবর দেন। ২৩ তারিখ থেকে ওই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আপাতত আতঙ্কে রয়েছে কেরালা উপকূল।

অন্যদিকে কার্যত ইতিহাস সৃষ্টি করে উত্তর প্রদেশের আমেঠিতে জয়লাভ করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। ৫৫ হাজার ১২০ ভোটে হারিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক জয়ের পরপরই আমেঠিতে তার জয়ের অন্যতম কান্ডারি বিজেপি নেতা অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে সুরেন্দ্র সিং খুন হয়েছেন। তা নিঃসন্দেহে তার জন্য এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের জন্য বেদনাদায়ক। আমেঠির বারাউলিয়া গ্রামের প্রাক্তন গ্রামপ্রধানকে গুলি করে মারা হয়েছে তার নিজেরই বাড়িতে।

এদিকে আবার ইস্তফায় অনড় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। সাফ বলেছেন, তার বদলে যেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী নামও সভাপতি পদে ভাবা না হয়। গান্ধী পরিবারের বাইরের কারো হাতে এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক। এ নিয়ে কোনো আপস হবে না। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, পরিবারের বাইরে কংগ্রেস কিছু ভাবতে পারে না। এখনই চোখবুজে বলা যায়, রাহুলের পরেও প্রিয়ঙ্কার সন্তানরা ভবিষ্যতে কংগ্রেসের সভাপতি হবেন। লোকসভায় বিপর্যয়ের পর রাহুল আর কোনো আঙুল তোলার সুযোগ দিতে চাইছেন না। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী একটিও কথা বলেননি। কিন্তু রাহুল বলেছেন, তিনি দলের জন্য অন্য যেকোনো কাজ করবেন। সংসদের নেতাও হতে পারেন। আরো তিনটি বিকল্প দিয়েছেন।

রাহুলের জেদ দেখে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সব সদস্যই তাকে দায়িত্বে বহাল থাকতে বলেন। প্রিয়ঙ্কাও বলেছেন, বিজেপি এটাই চায়। রাহুল ইস্তফা দিলে বিজেপিরই ফাঁদে পা দেওয়া হবে। গুলাম নবি আজাদ জানিয়েছেন, সভাপতি হওয়ার আগে থেকেই পাঁচ বছর ধরে রাহুল গান্ধী প্রচার করেছেন। নানা বিষয়ে সরকারকে চেপে ধরেছেন। তার নেতৃত্ব জনতাও চোখে দেখেছেন। গোটা কমিটি ঐকমত্য হয়ে রাহুলকে বলেছে, আপনি অনেক ভালো কাজ করেছেন। সকলে আপনার নেতৃত্বেই কাজ করবেন। নতুন কেউ এলে সব বুঝতেই আরো পাঁচ বছর লেগে যাবে।

রাহুলের মতো মমতাকে নিয়েও বিপদ বাড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসে। বেকায়দায় নারদ-সারদা-রোজ ভ্যালি আর্থিক দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। এবার সিবিআইয়ের সুপারিশে তার বিরুদ্ধে লুকআউট সার্কুলার জারি করেছে অভিবাসন দফতর। এই নোটিস জারির ফলে আগামী ১ বছর দেশের কোনো স্থল ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিদেশে যেতে পারবেন না রাজীব কুমার। ২০২০ সালের ২৩ মে পর্যন্ত ওই নির্দেশ কার্যকর থাকবে। উল্লেখ্য, রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে নাÑ এমন একটি রক্ষাকবচ ছিল সুপ্রিম কোর্টের। সম্প্রতি তা তুলে নিয়েছেন আদালত। তবে গ্রেফতারি নিয়ে আবেদন করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন আদালত। তা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এর ফলে যেকোনো মুহূর্তেই গ্রেফতার হতে পারেন রাজীব কুমার। এ রকম এক অবস্থায় নিঃসন্দেহে চাপ বাড়ল রাজীব কুমারের ওপরে। সিবিআই সম্প্রতি ওই লুকআউট সার্কুলার জারির জন্য অভিবাসন দফতরের কাছে আবেদন করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীন অভিবাসন দফতর তা মঞ্জুর করে। গতকাল রোববার ছিল আদালত বন্ধ। ফলে সোমবারের আগে রাজীব এ ব্যাপারে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন না। তৃণমূলের একটা বড় অংশের আশঙ্কা রাজীব কুমার মুখ খুললে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় দলের তাবড় নেতানেত্রীরা বিপদে পড়ে যাবেন। কারণ নেত্রী মমতার আঁকা ছবি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকায় কিনেছিল সারদা চিট ফান্ড কোম্পানি!

চাপ বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপরও। মা হীরা বেনের সঙ্গে দেখা করতে রোববার গুজরাট গেছেন তিনি। ভোটের আগেই বিজেপি প্রাক্তন বিধায়ক ও বিখ্যাত কম্পিউটার বাবা জানিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপি পাঁচ বছর সরকারে ছিল। কিন্তু অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ করতে পারল না। যখন রাম মন্দির হয়নি, তখন মোদিকেও আর সমর্থন নয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে মধ্য প্রদেশের ভোপালের কংগ্রেস প্রার্থী দিগি¦জয় সিংয়ের জন্য আয়োজন করেছিলেন বিশাল যজ্ঞ। তার যজ্ঞ তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। বিপুলভাবে ক্ষমতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদি। মধ্য প্রদেশেও ধরাশায়ী হয়েছে কংগ্রেস। আর তারপরই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছেন কম্পিউটার বাবা। ফল প্রকাশের পর বলেছেন, তিনি নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সাধু-সন্তরা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নয়। সকলেই বিজেপিকে সমর্থন জানিয়েছিল। এবার নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত। রাম মন্দির নির্মাণ আর গঙ্গা পরিচ্ছন্ন করা উচিত। কম্পিউটার বাবা বলেছেন, কংগ্রেস পার্টিকেই এবার পর্যালোচনায় বসতে হবে, কেন তারা এভাবে প্রত্যাখ্যাত হলো।

এরই মধ্যে অন্ধ্র প্রদেশের জন্য ‘বিশেষ মর্যাদা’র দাবি আদায়ের প্রতিশ্রুতিতেই বিপুল জয় পাওয়া জগনমোহন রেড্ডি এবার তৃণমূলের মতই সংসদেও পাঠাচ্ছেন ২২ জন সংসদ সদস্যকে। লোকসভা-বিধানসভায় এই বিপুল জয়ের পর ওয়াইএসআরসিপি সুপ্রিমো জগনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই স্পেশাল স্টেটাসই। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রথম ধাপ হিসেবে দিল্লিতে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। দেখা করেছেন অমিত শাহর সঙ্গেও। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার শপথ নেওয়ার আগেই জগনের এই সৌজন্য সাক্ষাৎ যে সেই ‘স্পেশাল স্টেটাস’ আদায়েরই জন্য তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। অন্ধ্র প্রদেশে এবার লোকসভার সঙ্গেই বিধানসভার ভোটও হয়েছে। বিধানসভায় ১৭৫ আসনের মধ্যে ওয়াইএসআরসিপির প্রার্থীরা জিতেছেন ১৫১টি আসনে। মূল প্রতিপক্ষ চন্দ্রবাবুর তেলেগু দেশম পার্টির ঝুলিতে আসনসংখ্যা মাত্র ২৩। লোকসভাতেও শোচনীয় হার হয়েছে টিডিপি প্রার্থীদের।

এর মধ্যে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির জন্য খুশির খবরও আছে। মোদি ঝড়ে ভেসে গেছেন উত্তর প্রদেশের পারসাপুর এলাকার মহরাউর গ্রামের মুসলিম পরিবারের এক গৃহবধূও। মোদির ক্যারিশমায় মুগ্ধ ওই গৃহবধূ সম্প্রতি এক ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তিনি ঠিক করেছেন তার সদ্যোজাত ছেলের নাম রাখবেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। ওই মহিলার নাম মৈনাজ বেগম। স্বামী-শ্বশুড় সবাই তাকে মত বদলাতে বললেও তিনি অনড়। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী মৈনাজ বেগমের ইচ্ছাকে মেনে নিয়েছেন স্বামী মুস্তাক আহমেদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close