মাহমুদ আহমদ

  ২৬ মে, ২০১৯

নাজাতের দশকে আল্লাহকে পাওয়ার ইতেকাফ

মহান আল্লাহতায়ালার কৃপায় আজ পবিত্র মাহে রমজানের বিশতম দিন অতিবাহিত করছি। দেখতে দেখতে আমাদের মাঝ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে প্রবেশ করেছি নাজাতের দিনগুলোতে আর এই দিনগুলো হলো পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর স্মরণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আল্লাহকে একান্তভাবে লাভ করার জন্য মহানবী (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী মুমিন-মুত্তাকিরা রোজার এই শেষ দশ-দিবসে এতেকাফ করে থাকেন। রমজানকে বিদায় দিতে গিয়ে আমাদের প্রিয় নবী করিম (সা.)-এর এমনটি হয়ে থাকত, আধ্যাত্মিক বসন্ত নিজের চমক দেখিয়ে যখন বিদায় নেওয়ার ক্ষণে পৌঁছে যেত, তখন তিনি (সা.) কোমর বেঁধে নিতেন আর রমজানের কল্যাণরাজিতে নিজ ডালি ভরে নিতে কোনো ত্রুটি করতেন না। মহানবী (সা.)-এর শেষ দশকের ইবাদত সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, রমজানের শেষ দশকে প্রবেশ করলে তিনি (সা.) কীভাবে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জীবিত করতেন এবং তাঁর (সা.) পরিবার পরিজনকেও জাগাতেন (বোখারি)।

শেষ দশকে হুজুর (সা.) এতেকাফে বসতেন এবং লাইলাতুল কদরের অন্বেষণে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতেন। এতেকাফের আভিধানিক অর্থ হলো কোনো স্থানে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া বা অবস্থান করা। ইসলামী পরিভাষায় ‘ইবাদতের সংকল্প নিয়ে রোজা রেখে মসজিদে অবস্থান করার নাম এতেকাফ’ (হিদায়া, বাবুল এতেকাফ)। রমজান মাসের শেষ দশকে এতেকাফে বসা সুন্নতসম্মত। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে জানা যায়, হুজুর (সা.)-এর মৃত্যুর পর তার (সা.) পবিত্র স্ত্রীগণও এ সুন্নতের অনুসরণ করতেন (সহি মুসলিম, কিতাবুল এতেকাফ)। হুজুর (সা.) রমজান মাসে ১০ দিনই এতেকাফে বসতেন। উল্লেখ্য, হজরত নবী করিম (সা.) জীবনের শেষ রমজানে ২০ দিন এতেকাফ করেছিলেন।

২০ রমজান ফজরের নামাজের পর এতেকাফ আরম্ভ করা উচিত। এ জন্য ১৯ রমজান বাদ মাগরিব এতেকাফস্থলে এসে যাওয়াই অনেকে ভালো মনে করে থাকেন। এতেকাফে বসে মুতাকিফরা একাগ্রচিত্তে ব্যক্তিগত দোয়া ছাড়াও সবার জন্য সময়োপযোগী দোয়া করেন। এতেকাফের জন্য উপযুক্ত স্থান হলো জামে মসজিদ। এ প্রসঙ্গে কোরআনে উল্লেখ রয়েছেÑ ‘তোমরা মসজিদে ইতেকাফ করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)। হাদিসেও নির্দেশ এসেছে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘জামে মসজিদ ছাড়া এতেকাফ নেই।’ (আবু দাউদ, কিতাবুল এতেকাফ, পৃ. ৩৩৫)। ইমামরা এ বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তবে বিভিন্ন অসুবিধার কারণে এতেকাফ যেকোনো মসজিদে বা একান্ত অপারগতার কারণে মসজিদের বাইরেও হতে পারে। মহিলারা ঘরে নামাজের জন্য একটি বিশেষ স্থান নির্ধারণ করে সেখানে এতেকাফে বসা তাদের জন্য উত্তম (হিদায়া, বাবুল এতেকাফ, পৃষ্ঠা ১৯০)। এতেকাফকারী দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে যেন তিনি তার অভীষ্ট মনোবাসনা পূর্ণ করেই এতেকাফ থেকে উঠতে পারেন। এটা কঠিন সাধনার বিষয়। তাই মুতাকিফকে এমন কোনো কাজকর্ম বা আচার-আচরণ করা উচিত নয়, যাতে তার এ সাধনা ব্যাহত বা প্রশ্নবিদ্ধ হয় অথবা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায় বা তার মনোবাসনা অপূর্ণ থেকে যায়। একজন তাপস সাধনের ন্যায় একাগ্রতা ঐকান্তিকতা, শৃঙ্খলা ও পবিত্রতার লাগাম যেন হাতছাড়া হতে না দেন।

রমজানের এই শেষ দশকের একটি রাতে এসে থাকে লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর বা সৌভাগ্য রজনি লাভ বোধ করি মুমিনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। সারা জীবন কঠোর সাধনা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে শয়তানি প্রবৃত্তিরূপে দৈত্যকে নিধন করার পর মুমিনের কাছে আসে সেই মুহূর্তটিÑ সেই পাওয়ার মুহূর্তটি যা আল-কোরআনের সুরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে। হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ মুহূর্তটি। হাজার মাস অর্থাৎ প্রায় ৮০ বছর। একজন মুমিন সাধারণত ৮০ বছর বেঁচে থাকেন। সুতরাং তার সারা জীবনের সাধনার ফল লাভের মুহূর্তটি তার পুরো জীবনের চেয়েও কদরের তথা কল্যাণের ও মর্যাদার।

মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এ দোয়াই করি, তিনি যেন এই পবিত্র রমজানের এই শেষ দশকে আমাদের সবাইকে নাজাত দান করেন এবং তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে রাখেন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close