চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

  ২৬ মে, ২০১৯

পানিতে ভাসল মাঠের লবণ

২৫০ চাষির মাথায় হাত

চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর বড় মাঠ এলাকায় অতর্কিত তিনটি পলবোট খুলে দেয়ায় হঠাৎ সামুদ্রিক পানিতে ভেসে গেছে মাঠে মজুদ অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ। গত শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়ার বেড়িবাঁধের পাশে লবণ মাঠে ঘটেছে এ ঘটনা। এ ঘটনার পর বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি সাধন হয়েছে। আড়াই শতাধিক প্রান্তিক লবণ চাষি দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিদের মধ্যে আছেন বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়া ও নতুনঘোনা গ্রামের অন্তত ২৬০টি পরিবার। এসব পরিবারের মালিকানাধীন ২ নম্বর বড় মাঠ এলাকার মোট লবণ জমির পরিমাণ ৪৮০ একর (১২০০) কানি। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে এসব পরিবার উল্লিখিত জমিতে লবণ চাষ করেন। বর্ষাকালে বদরখালী সমিতি প্রকল্পটি মৎস্য চাষের জন্য ইজারা দেন। সমবায় আইনের আলোকে ইজারার টাকার একটি অংশ জমির মূল মালিকদের দেয়া হয়। অবশিষ্ট অংশের টাকা সমিতির তহবিলে রক্ষিত থাকে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ব্যয় নির্বাহ করতে।

ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিরা জানান, বদরখালী সমিতি থেকে লবণ মাঠের ওই জায়গা গত বছর দুই সনা মেয়াদে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা নিয়েছেন সমিতির বর্তমান সভাপতি হাজী নুরুল আলম সিকদার। এ বছর লবণ মৌসুম শেষ হওয়ার আগে লবণ চাষিদের মাঠ ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন অভিযুক্ত নুরুল আলম সিকদার ও তার লোকজন।

লবণ চাষিরা অভিযোগ করেছেন, লবণ মাঠ ছেড়ে দিতে বারবার চাপ প্রয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে মাঠে মজুদ থাকা লবণ ও মালামালগুলো অপসারণে আমরা (চাষিরা) আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে মৌখিক আবেদন জানাই। ভুক্তভোগী চাষিদের অভিযোগ, সমিতির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে মাঠ থেকে মজুদ লবণ ও মালামাল সরিয়ে নিতে সময় চেয়ে আসার একদিন পর গতকাল শুক্রবার দুপুরে বেশিরভাগ চাষি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে গেলে এ সুযোগে অতর্কিত ৮-১০ জনের একটি দল লবণ মাঠের চারপাশের তিনটি পলবোট খুলে দেন এবং কয়েকটি স্থানে মাটির বাঁধ কেটে দিয়ে লবণ মাঠে সামুদ্রিক পানি ঢুকিয়ে দেয়। তাতে স্থানীয় আড়াই শতাধিক চাষির অন্তত ৪৮০ একর লবণ মাঠ মুহূর্তে পানিতে তলিয়ে যায়।

বদরখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা ও সাতডালিয়া গ্রামের বাসিন্দা লবণ চাষি নুরুল আমিন, আমির হোসেন, রিদুয়ানুল হক, মোহাম্মদ আলী, মাহামুদুল করিম, জয়নাল আবেদিন ও ইলিয়াছ অভিযোগ করেছেন, অতর্কিত তিনটি পলবোট ছেড়ে দিয়ে ও কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ কেটে দেয়ায় সামুদ্রিক পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের লবণ মাঠ। এতে আড়াই শতাধিক চাষির মাঠে মজুদ অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ পানিতে ভেসে গেছে। এ ঘটনায় আমাদের কমপক্ষে ১০ লাখ ৫০ হাজার ক্ষতিসাধন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিদের অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সভাপতি হাজী নুরুল আলম সিকদারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টির আলোকে বক্তব্য দিয়েছেন সমিতির সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খান। তিনি বলেন, লবণ মৌসুম শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। বর্তমানে বেশিরভাগ মাঠে বর্তমানে লবণ মজুদ নেই। চাষিরাও মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। বদরখালী সমিতির ২ নম্বর বড় মাঠ প্রকল্পটি যেহেতু মৎস্য চাষের জন্য সমিতি কর্তৃপক্ষ আগে ইজারা দিয়েছেন, সেজন্য আমরা চাষিদের মাঠ ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছি।

সমিতির সম্পাদক খান জয়নাল আরো বলেন, কয়েক দিন আগে বৃষ্টিপাত হলে বড় মাঠের লবণ চাষিরা মজুদ লবণ ও মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। সেখানে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। তবে তিনি মজুদ লবণ সরিয়ে নিতে চাষিরা বৃহস্পতিবার সমিতি কার্যালয়ে এসে সময় চেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close