নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ মে, ২০১৯

৩ জুনের টিকিট পেতে কমলাপুরে জনস্রোত

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট নিতে গতকাল শনিবার চতুর্থ দিন জনস্রোতে পরিণত হয়েছিল রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। প্রথম দুই দিন ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ক্রয়ে স্বাভাবিক ভিড় থাকলেও তৃতীয় দিন শুক্রবার ছিল তার চেয়ে বেশি ভিড়। গতকাল শনিবার দেওয়া হয়েছে ৩ জুন সোমবারের টিকিট। ৩ জুনের টিকিট সংগ্রহে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যে জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিগত তিন দিনের উপস্থিতির চেয়ে অনেক বেশি। কাক্সিক্ষত টিকিট পেতে অনেকেই মধ্যরাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন, আবার কেউবা ভোরে দাঁড়িয়েছেন। টিকিটপ্রত্যাশীদের প্রতিটি লাইন এঁকে বেঁকে চলে গেছে স্টেশনের বাহিরে। সকাল ৯টায় পর্যন্ত লাইন স্টেশনের বাহিরে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড পর্যন্ত চলে গেছে।

যাত্রীদের সুবিধার্থে এবার ঢাকার পাঁচটি স্থান থেকে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। কমলাপুরে শুধুমাত্র যমুনা সেতু দিয়ে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য রাত ১১টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুল খালেক। তিনি বলেন, রাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি কিন্তু এখনো টিকিট কাউন্টারে পৌঁছতে পারিনি, সামনে এখনো অনেক মানুষ। যেহেতু পরিবার নিয়ে বাড়ি যাব, তাই ট্রেন ছাড়া বাসে যাওয়া কঠিন। বাধ্য হয়ে এত কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু কাক্সিক্ষত টিকিট পাব কি না জানি না।

রাজশাহীগামী বনলতা ট্রেনের টিকিটের জন্য দুই বন্ধুর সঙ্গে সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, আমি লাইনে দাঁড়িয়েছি সকালে। আমার মূল টার্গেট ছিল অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটা কিন্তু অ্যাপসটি কাজ না করায় বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এরপরও অ্যাপসে চেষ্টা করছি।

টিকিট কাউন্টারের কর্মরত স্টেশনের এক কর্মচারী জানান, আজ (শনিবার) অর্থাৎ ৩ জুনের টিকিটের জন্য কমলাপুরে সর্বোচ্চ ভিড়। যত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে তত টিকিট আমাদের নেই। তাই অনেককে টিকিট না পেয়ে খালি হাতে ফেরত যেতে হবে।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, ঈদের সময় সবাই এসি টিকিট চান, কিন্তু আমাদের এসি সিট তো সীমিত। তাই সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না। প্রতিটি লাইনে মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। এছাড়া ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে।

রেলভবন সূত্র জানা গেছে, অনলাইনে ঈদের সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ হিট পড়ে। তবে সিএনএসবিডির যে সক্ষমতা রয়েছে তাতে মাত্র ২০ হাজার লোড নিতে পারে। যে কারণে সাধারণ মানুষের অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট পেতে ভোগান্তি হচ্ছে।

এবার একজন যাত্রী চারটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। ঈদের অগ্রিম বিক্রিত টিকিট ফেরত নেওয়া হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে অ্যাপসের মাধ্যমে এবং স্টেশন কাউন্টার থেকে বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট অগ্রিম বিক্রি করা হচ্ছে।

তেজগাঁও স্টেশনেও টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড়

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরোনো স্টেশনে বিক্রি হচ্ছে ময়মনসিংহ ও জামালপুর রুটের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট। তাই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মতো জনস্রোতে পরিণত না হলেও শুক্রবার রাত থেকে হঠাৎ পুরোনো এ স্টেশনে মানুষের ভিড় বেড়েছে।

তেজগাঁও স্টেশনের মাস্টার এম এ আজিজের দাবি, ‘এ বছরই প্রথম ঈদে ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে তো সমস্যার সমাধান করা যায় না। আশা করছি, আগামী বছর এ সমস্যা থাকবে না।’

অনেকের দাবি ও আশঙ্কা, টিকিটের সারি অনেক লম্বা। সারির পেছনে যারা রয়েছেন তারা টিকিট নাও পেতে পারেন। তারা সবাই অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেননি। অথচ ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট অ্যাপসে রয়ে গেছে। অ্যাপসের টিকিট অবিক্রিত থেকে যেতে পারে। সেগুলো কাউন্টারের মাধ্যমে বিক্রির দাবি তাদের। নাহলে সেসব টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমেও বিক্রি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

ভোর ৬টায় টিকিট কাটতে আসেন মো. রেজাউল করিম, ফয়সাল আহমেদ ও সাজ্জাদ হোসেন। তাদের বক্তব্য, আমরা অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অ্যাপস ডাউন। তাই কাটতে পারিনি। অথচ অ্যাপসে ৫০ শতাংশ টিকিট দেয়া আছে। অ্যাপসের অধিকাংশ টিকিটই অবিক্রিত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। যদি সেগুলো আবার কাউন্টারের মাধ্যমে বিক্রি করা না হয় তাহলে বুঝতে হবে সেগুলো কালোবাজারিতে বিক্রি হবে। তাই আমরা বলব, যেহেতু অ্যাপস ডাউন, ওই ৫০ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হোক।

এ বিষয়ে স্টেশন মাস্টার এম এ আজিজ বলেন, ‘আমি কাউন্টারে কথা বলেছি। তারা বলেছে, সার্ভারে কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিকভাবে টিকিট বিক্রি করতে যে সময়টুকু লাগে, সেটুকুই লাগছে।’ নারীদের চেয়ে পুরুষদের চাপ একটু বেশি বলেও জানান তিনি।

অনলাইনের টিকিট কাউন্টারে বিক্রির বিষয়ে এম এ আজিজ বলেন, ‘অনলাইনের বিষয়টি তো আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তবে আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, যেসব টিকিট অবিক্রিত থাকবে সেগুলো ২৬ মের পর বিক্রি করা হবে। আশা করছি, কাউন্টারে আমরা যেভাবে নরমালি টিকিট বিক্রি করি, সেভাবেই হয়তো অনলাইনে অবিক্রিত টিকিটগুলো বিক্রি করতে পারব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close