পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ২৩ মে, ২০১৯

ঘরবন্দি মমতা, রাহুলের ভরসা টুইট, কঠোর কমিশন

মোদি বা না মোদি : জানা যাবে আজ

ভারতের ভোটের ফলাফলের ইশারা বুঝতে বুঝতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর গড়িয়ে যাবে। চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করতে আগামী শুক্রবার লেগে যাবে, তার আগেই আবির বাজারে শুরু হয়েছে লড়াই। আবির দিয়ে যে শুধু দোলে খেলা হয় বা বাজি যে শুধু দিওয়ালির দিন-ই ফাটানো হয় এমনটা মোটেই নয়। গণতন্ত্রের ভোট উৎসবের সঙ্গেও আবির খেলা, বাজি ফাটানো জড়িত। চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হওয়ার পর বিজয়ী দলের আবির খেলা যেন একটা রাজনৈতিক ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে। তাই এবার কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের আকাশে কোন রঙের আবির বেশি উড়বে, সেটাই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের আত্মপ্রত্যয় আর বিরোধী ২২ দলের তরফে ইলেকট্রনিক ভোট যন্ত্র বা ইভিএম নিয়ে আবার অভিযোগ জানানো হয়েছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে দেখা করার পর সেই যে কালীঘাটের বাড়িতে ঢুকেছেন আর বের হননি। আম আদমি কনফিউসড, কনফিউশন আরো বেড়েছে। এদিকে জ্যোতিষীদের প্রেডিকশন ঠিক হলে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না রাহুল গান্ধীও। তবে বিরোধীদের সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন রাহুল। সেক্ষেত্রে সরকার হবে আঞ্চলিক দলগুলোর থার্ড ফ্রন্ট।

প্রধানমন্ত্রীও হবেন আঞ্চলিক দলের কেউ। আর এদের সম্মিলিত আসন হবে ৫৪২ এর মধ্যে ৩২০! সব মিলিয়ে ত্রিশঙ্কু সংসদ থেকে বিজেপি বিরোধী সব দলের মহাজোট, এমনটাই ভবিষ্যদ্বাণী জ্যোতিষীদের। এই অবস্থায় এত দিন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পালাবদলের পর প্রতিবারই সবুজ আবির বিকিয়েছে হু হু করে। কলকাতার বড়বাজারে ঢুঁ মেরে দেখা যাচ্ছে, গেরুয়া আবির বিকোচ্ছে হু হু করে। ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে গেরুয়া আবির, একই দল সবুজ আবিরের। দোকানদাররা বলছেন, হঠাৎ করেই গেরুয়া আবিরের চাহিদা বেড়ে গেছে। প্রথম কয়েক দিন সবুজ আবিরেরই বিক্রি ছিল বেশি। কিন্তু এক্সিট পোলের সমীক্ষা সামনে আসতেই ছবিটা খানিকটা বদলে গিয়েছে।

অন্যদিকে বিজেপিবিরোধী ২২টি রাজনৈতিক দলের জোট ভিভিপ্যাট নিয়ে দাবি জানিয়েছে। দাবি অনুযায়ী বিধানসভা প্রতি পাঁচটি বুথের ভিভিপ্যাটের স্লিপ গোনা হবে। এই গণনা হবে ইভিএমে ভোট গণনার পর। সব ভিভিপ্যাটের কাগজের স্লিপের সঙ্গে ইভিএমের তথ্য মিলিয়ে দেখতে বিরোধীদের দাবি আগেই নাকচ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, সব কাগজের স্লিপ মিলিয়ে দেখতে হলে নির্বাচনের ফল বেরোতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত প্রতি বিধানসভা পিছু পাঁচটি বুথে ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ইভিএম মিলিয়ে দেখার অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। যদিও বিরোধীদের দাবি, গণনা কেন্দ্রে সবার আগে লটারির ভিত্তিতে চিহ্নিত ভিভিপ্যাটগুলোর সঙ্গে ইভিএমের ভোট মিলিয়ে দেখতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সেই দাবি নিয়েই বুধবার নয়াদিল্লিতে বৈঠকে বসেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা। তার পরই জানিয়ে দেওয়া হয় ভোট গণনায় আর কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

এই অবস্থায় এ বার বুথফেরত সমীক্ষাকে ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। টুইটারে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তায় তিনি বলেছেন, ভুয়া সমীক্ষা দেখে নিরাশ হবেন না। বরং কংগ্রেসের ওপর ভরসা রাখুন। আপনাদের পরিশ্রম বৃথা যাবে না।

প্রায় সবকটি বুথফেরত সমীক্ষাতেই প্রচুর আসন দেওয়া হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবিরকে। তাতেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিরোধী শিবিরে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কার্যকর্তাদের মনোবল চাঙা করতে টুইটারে রাহুল লিখেছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। ভয় পাবেন না। আপনারা সত্যের জন্য লড়ছেন।

‘আর এর মধ্যে বন্ধু পেলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। যেভাবে হোক বিজেপির নেতৃত্বে আরো একটি এনডিএ সরকার রুখতে এবার আসরে নেমেছেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার। মুম্বাই থেকে তার ফোন গিয়েছে ভুবনেশ্বরে, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী বিজু জনতা দলের (বিজেডি) নেতা নবীন পট্টনায়কের কাছে। ফোনে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন শারদ পওয়ার। প্রবীণ এনসিপি নেতা ফোন করেছেন ওয়াইএসআর কংগ্রেস নেতা জগমোহন রেড্ডির কাছেও। ফোনে চন্দ্রবাবুর সঙ্গেও প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার। পাওয়ার, চন্দ্রবাবুর লক্ষ্য, এগজিট পোলগুলো ভুল প্রমাণিত হলে যেন এনডিএ-র বাইরে থাকা অ-কংগ্রেসি দলগুলোকেও পাশে না পেয়ে যায় বিজেপি। বিভিন্ন রাজ্যে ওই দলগুলোর সমর্থন জোগাড় করে ফেলে যেন কোনোভাবে বিজেপি না সরকার গড়ে ফেলতে পারে কেন্দ্রে। শেষ দফার ভোটের দিন থেকেই সেই কাজটা শুরু করে দিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। নিজের রাজ্য ছেড়ে তাকে ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটকে। এরই মধ্যে দিল্লিতে সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠকে বসেছেন তিনি। লক্ষেèৗয়ে ছুটে গিয়ে চন্দ্রবাবু দেখা করেছেন বহুজন সমাজ পার্টির (বসপা) নেত্রী মায়াবতী ও সমাজবাদী পার্টি (সপা) নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে কলকাতাতেও ছুটে এসেছিলেন চন্দ্রবাবু।

এরই মধ্যে বিরোধীদের কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতা রবিশংকর প্রসাদ। বিরোধীদের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, বিজেপি যখন নির্বাচনে জেতে তখন বিরোধীরা ইভিএমে দোষ খুঁজে পায়। কিন্তু নিজেরা যখন ভোটে জেতে তখন ইভিএম ঠিকমতো কাজ করে। বিরোধীরা ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ করছে কারণ তারা বুঝে গিয়েছে মানুষের আশীর্বাদে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসতে চলেছেন। বিরোধীরা এখন অজুহাত খুঁজছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রবিশংকর প্রসাদের।

এদিকে, ফল প্রকাশের আগের দিন আরো একবার কলম ধরে গর্জে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুকে একটা কবিতা লিখেছেন ঘরবন্দি তৃণমূল নেত্রী।‘জরুরি’ নামে সে কবিতায়, ছত্রে ছত্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে তুলোধুনা করেছেন। বিরোধীদের দাবি নাকচ করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পরই দুপুরে একটি কবিতা টুইট করেছেন মমতা। কবিতাজুড়ে ঝড়ে পড়েছে তীব্র শ্লেষ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন,

সবটাই জরুরি-

কিছু কথা ছিল,

ওটাও জরুরি।

মধ্য রাতে সিদ্ধান্ত-

ওটাও জরুরি।

ভিলেনের মাঠে এ খেলা-

তাতেও জরুরি।

বিচারে বিধ্বস্ত-

ওটাও জরুরি।

গণতন্ত্র গুহায়-

ওটাও জরুরি।

প্রতিবাদ করবে?

না হুজুর-জরুরি।

মাথা খুটে কাঁদো

অশ্রুতেও জরুরি।

কি দেখলে নির্বাচন?

নির্বাসনও কি জরুরি?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close