নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ মে, ২০১৯

জাপানি প্রতিষ্ঠানের তিন ব্রিজ নির্মাণ

সময়ের আগেই কাজ শেষ বাঁচল ৭৩৮ কোটি টাকা

নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশে কোনো প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। ‘কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন’ শিরোনামে প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী দ্বিতীয় সেতুর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগে শেষ হচ্ছে। শুধু তাই নয় এই তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য যে টাকা বরাদ্দ ছিল সেই অর্থের চেয়েও কম খরচে নির্মাণ কাজ শেষ করেছে নির্মাণকারী জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো।

এ বিষয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ মাস আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুর উদ্বোধন করবেন। এছাড়া একই সময়ে দ্বিতীয় মেঘনা সেতুও উদ্বোধন করা হবে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো ৭৩৮ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান জানান, চুক্তি অনুযায়ী কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতুর মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর মেঘনা ও গোমতীর মেয়াদ ছিল জুন-জুলাই ২০১৯ সাল পর্যন্ত। হলি আর্টিসান ঘটনার কারণে নির্মাণ কাজ ছয় মাস বন্ধ ছিল। এজন্য তারা (নির্মাতা প্রতিষ্ঠান) অতিরিক্ত ছয় মাস সময় চেয়েছিল। কিন্তু সেই ছয় মাস সময় তো তারা নেয়নি বরং মূল চুক্তির প্রায় ১ মাস আগে তারা এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে দিল।

প্রকল্প পরিচালকের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছরের ১৬ মার্চ কাঁচপুর দ্বিতীয় ব্রিজের উদ্বোধন করা হয়েছে। ঈদের আগে আগামী ২৫ মে মেঘনা ও গোমতী দ্বিতীয় সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সেতু তিনটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে জাপানের ওবায়েশি করপোরেশন, সিমিজু করপোরেশন, জেএফই করপোরেশন এবং আইএইচআই ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিস্টেম কোম্পানি লিমিটেড।

প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, উনারা নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্মাণ করলেন এটা তাদের কৃতিত্ব। তিনি বলেন, হলি আর্টিসান ঘটনার কারণে তাদের কাজ ৬ মাস বন্ধ ছিল। এই কাজগুলো শেষ করার জন্য আরো ৬ মাস সময় তাদের ন্যায্য পাওনা ছিল। কিন্তু তারা সেই অতিরিক্ত সময় না নিয়েই নির্ধারিত সময়ের আরো এক মাস আগে কাজটা শেষ করে দিল তারা।

তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে গড়াই ব্রিজ নির্মাণের কাজ (১৯৯০ সালে) নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করা হয়েছিল। এরপর নির্ধারিত সময়ের আগে পুরাতন মেঘনা ও গোমতী সেতুর কাজ শেষ করা হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৯১ ও ১৯৯৫ সালে। সব কোম্পানিই ছিল জাপানের। বাংলাদেশে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ করার ইতিহাস একমাত্র জাপানিদেরই। আর কারো নেই। ১৯৯৫ সালের পর এই কাজটা তারাই করল।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল শুরু হওয়া এই প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর। অর্থাৎ নতুন ব্রিজ তিনটির নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হলেও পুরো কাজ শেষ হতে আরো সময় লাগবে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘নতুন দুটি ব্রিজ ২৫ মে থেকে চালু হয়ে যাবে এবং পুরাতন ব্রিজগুলো মেরামতের কাজ শুরু হবে।

অর্থ সাশ্রয় : সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে মেঘনা দ্বিতীয় সেতুর জন্য বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে এই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করেছে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ বাংলাদেশের সাশ্রয় হয়েছে এই সেতু থেকে ৫০০ কোটি টাকা।

গোমতী সেতুর জন্য বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার মধ্যে এই সেতুর কাজ শেষ করেছে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো। এই সেতু থেকে সাশ্রয় হয়েছে ৪৬০ কোটি টাকা।

আর কাঁচপুর সেতুর জন্য বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে এই প্রকল্প কত টাকার মধ্যে শেষ করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানগুলো তা জানা যায়নি।

প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, এই প্রকল্প থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তবে এসব টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাবে কি না প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বলা যাচ্ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close