গাজী শাহনেওয়াজ

  ২১ মে, ২০১৯

নৌপথ : প্রতিদিন চলবে ১৫০-২১৫ লঞ্চ

নৌপথে ঘরেফেরা মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে গতকাল সোমবার থেকে নৌপথের ৪৩টি রুটে একযোগে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই বেশির ভাগ লঞ্চের টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। টিকিট কাটাকে কেন্দ্র করে সদরঘাটে লঞ্চ কাউন্টারগুলোতে গতকাল লক্ষ্য করা গেছে উপচে পড়া ভিড়। তবে লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত দিনের আগেই টিকিট বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া এবার ঈদ উপলক্ষে দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস শুরু হবে ৩০ মে। ফিরতি যাত্রীদের সুবিধার্থে ৮ জুন পর্যন্ত তা চলবে। এ সময় লঞ্চে শুধু যাত্রী পরিবহন করা হবে, কোনো মাল ও মোটরসাইকেল বহন করা হবে না; এ ধরনের নির্দেশনা রয়েছে।

লঞ্চ মালিক সমিতির তথ্য মতে, ঘরমুখো ও গন্তব্যে ফেরা মানুষের ঈদ উদ্যাপন উৎসবমুখর করতে বিভিন্ন রুটে ২১৫টি লঞ্চ চলাচল করবে। সাধারণ সময়ে যেখানে সদরঘাট থেকে দৈনিক ৭০-৮০টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করত, সেখানে এ সময়ে ১৫০-২১৫টি লঞ্চ চলাচল করবে।

তবে সড়ক ও রেলপথের মতো নৌপথে নির্বিঘœ চলাচলের পাশাপাশি কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। অধিক মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী পুরোনো ও লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ রং লাগিয়ে যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এতে কিছুটা দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে।

তবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, নিরাপদ ও নির্বিঘœ নৌচলাচল নিশ্চিত করতে সংকল্পবদ্ধ তারা। ঈদ উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সার্বিক তদারকিতে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য আগামী ২৯ মে সেখানে যাচ্ছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ মিলনাতনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নৌযান মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। সেখানে নৌপথে নৌযান চলাচল নির্বিঘœ করতে আরেক দফা নির্দেশনা দেবেন।

কারণ রাজধানীর সঙ্গে দেশের ২১টি জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ঈদে ঘরেফেরা মানুষ দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ পরস্পরকে দুষছে। ফেরি পার হওয়ার পরও যানজটে দৌলতদিয়া ঘাটে দুজন বড় সরকারি কর্মকর্তা প্রায় ২ ঘণ্টা আটকে ছিলেন।

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে ঘাটের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক। তবে এসব তথ্য সঠিক নয় বলে মনে করছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। তাদের মতে, বৈরী আবহাওয়া, ফেরি সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যা না থাকলে ঘাটে যানজটের সৃষ্টি হবে না। বর্তমানে ঘাটে খুব একটা সমস্যা নেই বলেও দাবি পুলিশের।

জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ বলেন, ঈদযাত্রা উপলক্ষে নৌপথের যাত্রা নির্বিঘœ করতে যা যা প্রস্তুতি সবই করা হয়েছে। টিকিটি বিক্রি থেকে ঈদযাত্রা শুরু পর থেকে টহল জোরদার করা হবে। আইনশৃঙ্খলার তদারকি বাড়ানো হবে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে ডিসি-এসপির মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব চলছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সচিব বলেন, বিষয়টি তাদের বিবেচনায় আছে। ঈদযাত্রায় মানুষের নৌপথে শান্তি ও ভালোভাবে গন্তব্যের আসা-যাওয়া নিশ্চিতে সর্বদা সর্তক থাকবে নৌ মন্ত্রণালয়।

বিগত ঈদে যাত্রী ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ত্রুটির বিষয়সহ এবারের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিাত ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সিনিয়র সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ঘাটগুলোতে প্রবেশ ফি ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা আদায় করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ বছর যাতে তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিভিন্ন তথ্যের হিসাবে, বিগত ঈদের মতো এবারো ৮০ লাখ লোক রাজধানী ছাড়বে। রাজধানীর আশপাশের গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ প্রায় সোয়া কোটি মানুষ ঈদ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে রওনা দেবে। তাদের এই যাত্রা শুরু হতে পারে আগামী ৩০ মে রাত থেকে। ধারণা পাওয়া যায়, সড়কপথে শতকরা ৫৫ ভাগ মানুষ যাতায়াত করে। ট্রেনে করে ২০ ভাগ এবং নৌপথে ২৫ ভাগ। দেখা যাচ্ছে, সড়কের ওপরই যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলেও নৌপথের যাত্রীর সংখ্যা কম নয়। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের একমাত্র ও নিরবচ্ছিন্ন যান হচ্ছে লঞ্চ। তবে ঈদকে ঘিরে সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। টিকিট কালোবাজারে বিক্রি, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহনের রেওয়াজ রয়েছে। এবার যাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি না হয় সেজন্য তৎপর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে ওই সময় ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট) ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বন্দরে থাকবেন র‌্যাব, পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসার ও রোভার স্কাউটের সদস্যরা। এ সদস্যদের উপস্থিতিতে নৌপথের টিকিট গতকাল ২০ মে থেকে আগাম বিক্রি শুরু হয়েছে। এর আগে গত ৩০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এই প্রস্তুতি বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যাত্রীদের নিরাপদে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এবার ঈদে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই কোনো লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। এমনকি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই লঞ্চ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে, যোগ করেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close