নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ মে, ২০১৯

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

পদবঞ্চিতদের ওপর হামলা প্রতিবাদে অনশন

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জেরে গত শনিবার রাত আড়াইটার দিকে টিএসসিতে সংগঠনের নারীনেত্রীদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলার শিকার ওই নেত্রীদের কান্নার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মারধরের শিকার হওয়াদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছেন। আহতদের অধিকাংশই পদবঞ্চিত নেতা। এ ছাড়া কয়েকজন নারীনেত্রীও হামলায় আহত হয়েছেন। তবে হামলায় তার অনুসারীদের হাত রয়েছেÑ এ কথা অস্বীকার করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, গভীর রাতে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের ওপর কোনো হামলা করা হয়নি। তবে হামলার প্রতিবাদ ও বিতর্কিতদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বহিষ্কারের দাবিতে গতকাল ছাত্রলীগের একটি পক্ষ আমরণ অনশন শুরু করেছে।

ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপসম্পাদক আল মামুন এ বিষয়ে বলেন, নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়েছেন। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে। তিনি বলেন, গত শনিবার রাতে আমাদের ডাকা হয়েছিল আলোচনার জন্য। সেখানে হামলা করা হয়েছে। এর আগেও মধুর ক্যান্টিনে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, এ সমস্যা সমাধানের জন্য। অন্য কেউ আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।

এদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার শিকার নারীনেত্রী বিএম লিপি আক্তার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে কান্না করছেন। এ সময় মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত¡না দিতে দেখা যায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে। এ সময় পদবঞ্চিতরা তার উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। গোলাম রাব্বানীকে উদ্দেশ্য করে নারীনেত্রীরা বলতে থাকেন, আপনার উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের ছেলেরা কেমনে মেয়েদের শরীরে হাত দেয়। আপনারা দৃষ্টান্ত রাখছেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদারকে বলতে শোনা যায়, কোনো দিন ছাত্রলীগের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। আর কোনো দিন কোনো মেয়ের বাবা বলবে না তার মেয়ে ছাত্রলীগ করুক।

গতকাল বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে রাব্বানী বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের অভিযোগগুলো শোনার জন্য তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসেছিলাম, তাদের অভিযোগের ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদের বুঝিয়েছি, তাদের ওপর হামলা করা হয়নি।

নারীনেত্রীদের গায়ে হাত দেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে রাব্বানী বলেন, কোনো নারীনেত্রীর গায়ে হাত তোলা হয়নি, হামলা করা হয়নি।

কমিটির যাদের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে, তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন জানতে চাইলে রাব্বানী বলেন, তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা আমাদের নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব। তিনি আরো বলেন, তারা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন, তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো লিখিত প্রমাণ দিতে পারেনি, তারা লিখিত প্রমাণ দিক, আমরা ব্যবস্থা নেব।

তবে এসব সমস্যার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকেই দায়ী করেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। তারা বলছেন, এবারের ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ক্ষেত্রে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উদাসীনতা ছিল। তারা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেনি। বিতর্কিতদের বিষয়ে সাবেকরা বলেন, বিবাহিত, চাকরিজীবী, বয়স অধিকÑ এ বিষয়গুলো জানা খুব কঠিন বিষয় না। খোঁজখবর নিলেই তারা বের করতে পারতেন।

উল্লেখ্য, এর আগে সদ্য গঠিত কমিটিকে কেন্দ্র করে পদপ্রাপ্ত ও পদবঞ্চিদের সঙ্গে মারামারির ঘটনায় নেত্রীসহ ১৫ জন আহত হন। এরপর তারা হামলার প্রতিবাদ এবং বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।

পদবঞ্চিতদের দাবি অনুযায়ী গত শনিবার রাতে মারধরের শিকার হয়েছেন নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক নিপু ইসলাম তন্বী, তিলোত্তমা শিকদার, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, শামসুন্নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপসম্পাদক এমদাদ হোসেন সোহাগ, সাবেক কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক আজমীর শেখসহ অনেকেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close