পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ১৭ মে, ২০১৯

রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করতে জেদ ধরবে না কংগ্রেস

মোদির প্রতি মমতার ক্ষোভ অব্যাহত

মূর্তিভাঙা নিয়ে রাজনীতিতে বাকযুদ্ধ চলছে নরেন্দ্র মোদি-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে। ‘বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি’ বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নরেন্দ্র মোদিকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুন্দরবন লাগোয়া মথুরাপুরের সভা থেকে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি যতই সোনা-রূপা-তামা দিয়ে পাঁচধাতুর মূর্তি বানিয়ে দেন না কেন, ওই মূর্তি নেবেন না তারা। বরং নিজেরাই তৈরি করবেন বিদ্যাসাগরের মূর্তি। মূর্তিভাঙা ‘তৃণমূলের গুন্ডা’দের কাজ বলে বৃহস্পতিবারই উত্তরপ্রদেশের মউয়ের সভায় অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। জবাবে ফের কান ধরে উঠবস প্রসঙ্গ টেনে মমতার মন্তব্য, মিথ্যা কথা বলার জন্য লক্ষবার কান ধরে উঠবস করা উচিত প্রধানমন্ত্রীর। সরাসরি মমতা বলেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার বদলা আমরা নেব। বাংলার সংস্কৃতিকে অপমান করার বদলা আমরা নেব। গণতান্ত্রিকভাবে ওদের বিদায় জানাব। দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্র করছে আরএসএস-বিজেপি। মা- বোনেদের সতর্ক থাকতে হবে।

নির্বাচন কমিশন, বুধবার রাতে নজিরবিহীনভাবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্যের বদলি নির্দেশ দিয়েছে। তার ওপরে সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্তে সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়া কলকাতার সাবেক পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাতে বেজায় চটেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার মমতা বলেছেন, ইভিএম পাহারা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী মারতে এলে ভয় পাবেন না। মা-বোনেরা সামনে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাবেন। একটা ভোটও যেন না পায়। কোথাও ঢুকতে দেবেন না। গণতান্ত্রিকভাবে নরেন্দ্র মোদিকে বিদায় দিতে হবে দেশ থেকে। সঙ্গে জুটেছে দালাল জেটলি (পড়–ন, অরুণ জেটলি, দেশের অর্থমন্ত্রী)। অর্ধেক সময় দেশে থাকে না। রাগ যে এখন চরমে, তা গোপন করার কোনো চেষ্টাও করছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, আমাকে ওরা (পড়–ন, বিজেপি) চেনে না। ওরা ঘুঘু দেখেছে, ফাঁদ দেখেনি। আমাকে আটকানো যাবে না। সব গর্দভের দল, এত সাহস ওদের। তৃতীয় দফার ভোটের পরই ওদের পতন নিশ্চিত হয়ে গেছে। ভয় পেয়ে এখন বকর বকর করছে। কুকুরের জলাতঙ্ক রোগ হলে এই রকম করে।

একদম শেষবেলার নির্বাচনী প্রচারে যাদবপুরে অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর হয়ে পদযাত্রায় গিয়ে লীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, রাত জেগে পাহারা দিতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রের আঁচ পেলেই হাতের সামনে যা আছে তা নিয়ে ছুটে যেতে হবে। ছবি তুলে আমার কাছে পাঠাবেন। ৯ তারিখের ভোটের পর ২৩ মে ভোট গণনা, মাঝের এই দিনগুলোয় মেশিন বদলানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুরোধ করেছেন, মা- বোনেরা পাহারা দেবেন। বাংলাকে কাঙাল বলার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে ওরা (পড়–ন বিজেপি)। এই ঔদ্ধত্য ভেঙে দেবেন। তৃণমূল কংগ্রেসই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে, প্রমাণ করতে পারলে, রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।

অন্যদিকে দুই দিন আগে অমিত শাহের রোডশোয়ে বিশৃঙ্খলা-সংঘর্ষের জেরে ভাঙা পড়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথম মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তার বক্তব্য ছিল, তৃণমূলের গুন্ডারা মূর্তি ভেঙেছে। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। একই সঙ্গে বলেছেন, ওই জায়গাতেই বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি বসাবেন তারা। সেই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই মথুরাপুরের মন্দিরবাজারে নির্বাচনী সভায় যোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মোদির মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে কার্যত তুই-তুকারিতে নেমে আসেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা। তার সাফ কথা, উত্তরপ্রদেশে মিটিং করে বলেছে, মূর্তি বানিয়ে দেব, তোরটা থোড়াই নেব আমরা, আয়! বাংলার টাকা আছে, বিদ্যাসাগরের মূর্তি বানানোর। ২০০ বছর আগেকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে পারবে? জীবন গেলে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে? ওই সভাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের বলেছেন, তোমার কাছে বাংলা ভিক্ষে চায় না। তথ্যপ্রমাণ এবং ভিডিও হাতে আছে দাবি করে নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে মমতার হুশিয়ারি, ২০০ বছরের ঐতিহ্য তুমি ভেঙেছ, আমাদের কাছে সব ভিডিও কপি আছে। আর তুমি বলছ, তৃণমূল কংগ্রেস করেছে, লজ্জা করে না? কান ধরে উঠবস করা উচিত এই প্রধানমন্ত্রীর। এক বার নয়, লক্ষবার। মিথ্যা কথা বলার জন্য। মিথ্যাবাদী! হয় প্রমাণ কর, নইলে তোমাকে কিন্তু আমরা জেলে টানব। তার কারণ, আমরা কিন্তু ছেড়ে কথা বলার লোক নই। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, নথি আছে। নথি নিজেই কথা বলবে, আইন আইনের পথেই চলবে।

আর এরই মধ্যে শেষ বেলায় মাস্টার স্ট্রোক দিয়েছে দেশের প্রাচীনতম দল, কংগ্রেস। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সভাপতি রাহুল গান্ধীকেই প্রধানমন্ত্রী করতে হবে, এমন কোনো জেদ ধরবে না কংগ্রেস। এনডিএর বাইরে থাকা অন্য কোনো দলের কারো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়েও দাঁড়াবে না কংগ্রেস। শেষ দফার ভোটের আগে এনডিএর বাইরে থাকা দলগুলোকে এই বার্তা দিয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এর আগে বেশ কয়েকবার বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চান না। তবু ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এবং আম আদমি পার্টির নেতা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল কিছু দিন আগেই বলেছেন, বিজেপিকে রুখতে তারা সবাই রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত। যদিও এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের মতো কেউ কেউ চাইছেন, এ ব্যাপারে যোগ্যতম হবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা) নেত্রী মায়াবতী। এই সবের পরিপ্রেক্ষিতেই আজাদ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে কোনো উচ্চাকাক্সক্ষা নেই কংগ্রেসের। দলের এক ও একমাত্র লক্ষ্য, বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা। আর তার জন্য অ-বিজেপি দলগুলোর মধ্যে থেকে যাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবাই মেনে নেবেন, তাকে মেনে নিতে কোনো আপত্তি থাকবে না কংগ্রেসের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close