নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ এপ্রিল, ২০১৯

হুইসেল বাজিয়ে উদ্বোধন

যাত্রীদের দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল ‘বনলতা ট্রেন’

‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দু-দ- শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।’ সেই বনলতা সেন আবার রাজশাহীতে ফিরে এসেছে বনলতা ট্রেন হয়ে। দূরন্ত গতি আর আরামদায়ক চেয়ারে বসে দু-দ-ের শান্তিতেই যাত্রীরা পৌঁছেছেন রাজশাহী থেকে ঢাকায়। স্বল্প সময়ে ঢাকা পৌঁছাতে পেরে খুশি যাত্রীরা। সময় লাগবে মাত্র সোয়া চার ঘণ্টা। রাজশাহী-ঢাকা রুটের প্রথম এই বিরতিহীন ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেসের চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ নামটিও প্রধানমন্ত্রীরই দেওয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। হুইসেল বাজিয়ে এবং সবুজ পতাকা উড়িয়ে তিনি ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা ঘোষণা করেন। দুপুর পৌনে ১২টায় রাজশাহী স্টেশন ছেড়ে দুপুর সোয়া ২টায় যমুনা নদী পাড়ি দেয় বনলতা এক্সপ্রেস। এরপর ঠিক বিকেল ৪টায় এসে পৌঁছে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে। বনলতার প্রথম যাত্রায় সঙ্গী ছিলেন রাজশাহীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, এমপি ও মন্ত্রীরাও।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অন্য প্রান্তে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

এদিকে, শীতাতপ এবং শোভন এই দুই শ্রেণির আসনে সাজানো বনলতা এক্সপ্রেস রাজশাহীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা মিটিয়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। ট্রেনটিতে প্রথমবারের মতো বায়ো টয়লেট সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানেই ট্রেন থেকে পরিবেশ দূষণের আর কোনো আশঙ্কা নেই। প্রতিবন্ধী যাত্রীদের হুইল চেয়ারসহ চলাচলের সুবিধার্থে দেখা গেছে প্রশস্ত দরজা (মেইন ও টয়লেট দরজা) এবং নির্ধারিত আসনের সুবিধা। প্রতিটি কোচ স্টেইনলেস স্টিলের। অত্যাধুনিক যাত্রী সুবিধা রয়েছে ট্রেনটিতে। প্রতিটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে আধুনিক ও উন্নতমানের রুফ মাউন্টেড এয়ার কন্ডিশনার ইউনিট এবং এয়ার কার্টেইনের ব্যবস্থা রয়েছে।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, এ ধরনের আন্তঃনগর ট্রেন সামনে আরো বেশি চালু করা দরকার। এই বছরের মধ্যে ২০০টি কোচ পাওয়ার পর নতুন করে অন্তত ১৫টি ট্রেন চালু করা যাবে।

আগামীকাল শনিবার থেকে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিয়মিত রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছাবে। এরপর ঢাকা থেকে ছাড়বে বেলা ১টা ১৫ মিনিটে এবং রাজশাহী পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টায়। ট্রেনে এসি চেয়ারের জন্য ৮৭৫ টাকা, শোভন চেয়ারের জন্য ৫২৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যেই দেওয়া হবে খাবার। তবে এই ট্রেনের টিকিট কেনার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে।

যাত্রী সাধারণের জন্য আধুনিক ও মানসম্মত চেয়ার, বার্থ, স্টেয়ার, পার্সেল রেক, টিভি মনিটর হ্যাঙ্গার, ওয়াই ফাই রাউটার হ্যাঙ্গার ও মোবাইল চার্জারের ব্যবস্থা রয়েছে। ১২টি কোচ রয়েছে ট্রেনটিতে। এর মোট আসন সংখ্যা ৯২৮। তার মধ্যে এসি চেয়ার ১৬০টি, শোভন চেয়ার ৬৪৪টি, খাবার গাড়িতে আসন ১০৮টি এবং পাওয়ার কারে ১৬টি। তবে ট্রেনটি শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চলবে। তথ্য অনুযায়ী, বনলতা এক্সপ্রেসের বগি নতুন হলেও ইঞ্জিন পুরাতন। ২০১৩ সালে ভারত থেকে আমদানি করা ইঞ্জিন দিয়ে চলাচল করবে ট্রেনটি। ঘণ্টায় ট্রেনটির সর্বোচ্চ গতি থাকবে ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close