প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ এপ্রিল, ২০১৯

শ্রীলঙ্কায় হামলা : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯

কর্মকর্তারা গোয়েন্দা তথ্য লুকিয়েছিলেন!

শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে বোমা ফাটানোর মতো তথ্য জানালেন দেশটির জনপ্রশাসন বিষয়ক মন্ত্রী লক্ষ্মণ কিরিয়েলা। তিনি খোদ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘গোয়েন্দা দফতরের একেবারে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ইচ্ছা করেই গোয়েন্দা তথ্য লুকিয়েছিলেন। তাদের হাতে তথ্য ছিল। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেননি।’ তবে সাবেক সেনাপ্রধান এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী শরৎ ফনসেকা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে ওই হামলার পরিকল্পনা সাত থেকে আট বছর আগে থেকে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার খোদ সংসদে মন্ত্রীদের এমন তথ্যে নড়েচড়ে বসেছে দেশটির সরকার। এরই মধ্যে হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান জয়াবর্ধনে এবং পুলিশ প্রধান পুজিত জয়াসুন্দরাকে দায়িত্ব ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাহিথ্রিপালা সিরিসেনা।

এদিকে, গতকাল কলম্বোতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আগাম তথ্য না থাকলেও শ্রীলঙ্কায় আরো সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে বিশ্বাস তাদের।

সংসদে মন্ত্রী লক্ষ্মণ কিরিয়েলা বলেন, গির্জা, হোটেল এবং রাজনীতিকদের ওপর সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে থেকে সেই ৪ এপ্রিল পাওয়া গিয়েছিল। এরপর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সভাপতিত্বে দেশটির নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকও হয়। তবে গোয়েন্দা তথ্য ব্যাপকভাবে জানানো হয়নি।

মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কেউ একজন নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের নিরাপত্তা কাউন্সিল রাজনীতি করছে। আমাদের এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে হবে।’

এদিকে, ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কার কয়েকটি চার্চ ও হোটেলে একযোগে চালানো বোমা হামলায় ৯ আত্মঘাতী অংশ নিয়েছে এবং তাদের একজন নারী ছিল এবং এদের অনেকে উচ্চ শিক্ষিত। আর হামলার কথিত হোতা জাহরান হাশিম এবং বোমা বহনকারী ৭ আত্মঘাতী হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে এবং এদের মধ্যে ৩৯ জন বিদেশি। আর এ পর্যন্ত ওই হামলায় ৪৫ শিশু প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউনিসেফ মুখপাত্র ক্রিস্টোফে বৌলিয়েরাক।

শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের একজন যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করত বলে দাবি করছে দেশটির সরকার। গত রোববার কলম্বোসহ একাধিক এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। একাধিক গির্জা ও হোটেলে এসব বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে দাবি করেন, আত্মঘাতী বোমারুদের একজন যুক্তরাজ্যে পড়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যায়। এখন পর্যন্ত ৬০ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, এখনো ৩২ জন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই শ্রীলঙ্কার নাগরিক।

সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান জানান, ৯ জন বোমারু এই হামলা চালায়। এর মধ্যে আটজনকে শনাক্ত করা গেছে। মসলা ব্যবসায়ী এক ধনকুবেরের দুই ছেলে আত্মঘাতী হামলার সঙ্গে জড়িত।

তদন্তকারীরা জানান, দুই ভাই ইলহাম ইব্রাহিম ও ইনসাফ তাদের বাবা ইউনূস ইব্রাহিমের কলম্বোতে মসলা রফতানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। ওই হামলায় ওই দুই ভাইয়ের জড়িত থাকার পেছনে বিদেশি প্রভাব রয়েছে। তারা ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াতের (এনটিজে) সদস্য।

গত রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোসহ দেশটির বিভিন্ন এলাকায় গির্জা ও হোটেলে সব মিলিয়ে আটটি বিস্ফোরণ ঘটে। ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা গির্জায় থাকা অবস্থায় বিস্ফোরণগুলো ঘটে। একের পর এক বোমা হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৫৯০ জনে পৌঁছেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close