পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ২১ এপ্রিল, ২০১৯

ফেরদৌস ইস্যুতে মমতাকে দুষলেন মোদি

ভাই রাহুলের ভাবমূর্তি উদ্ধারে বোন প্রিয়াঙ্কা

শেষ পর্যন্ত দাদা, রাহুলের ভাবমূর্তি মানে ইমেজ বিল্ডিঙের কাজে নামতে হলো বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। তিনি বলছেন, দেশের প্রাচীনতম দল, কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট খুব ভালো ছেলে। এতটাই ভালো যে, নিজের ঘর, নিজে পরিষ্কার করেন। আর গণতন্ত্রে খুব বিশ্বাস করেন! কেরালায় রাহুল গান্ধীর প্রচারে গিয়ে এমনটাই বলেছেন কয়েক দিন আগে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। রাহুল গান্ধী এবার উত্তরপ্রদেশের আমেঠির সঙ্গে ভোটে লড়ছেন কেরালার ওয়ানডে থেকেও। কয়েক দিন আগে, মন্দিরে পুজো দিয়ে এসেছেন। মা-বোনকে নিয়ে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও জমা দিয়েছেন। তারপরই, ভারতের একদম দক্ষিণের এই রাজ্যে, দাদা, রাহুলের ভাবমূর্তি তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।

তার কারণ, ডিগ্রি বিতর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির হয়ে জোরালো সওয়াল করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। স্মৃতিকে বাঁচাতে গিয়ে জেটলি সরাসরি নিশানা করেছেন রাহুল গান্ধীকে। এক ফেসবুক ব্লগে জেটলি লিখেছেন, স্মৃতি ইরানির ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু ‘পাবলিক অডিট’ হলে রাহুল গান্ধীর পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। তিনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে দাবি করেন তিনি এমফিল। কিন্তু তার মাস্টার ডিগ্রিই নেই। তাহলে তিনি এমফিল হন কীভাবে! উল্লেখ্য, এবার আমেঠিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় স্মৃতি ইরানি হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি স্নাতক নন। ২০১৪ সালে দেওয়া এক হলফনামায় তিনি অবশ্য জানান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওপেন লার্নিং থেকে ১৯৯৪ সালে বাণিজ্যে স্নাতক করেছেন। ২০০৪ সালেও তার দেওয়া হলফনামায় নিজেকে স্নাতক বলে দাবি করেছিলেন স্মৃতি। অন্যদিকে, রাহুল গান্ধীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে ওঠায় বিষয়টি গড়ায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাহুল গান্ধী ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে এমফিল পাস করেন ১৯৯৫ সালে। এখানেই প্রশ্ন অরুণ জেটলির, যার স্নাতকোত্তর পাস করার কোনো রেকর্ড নেই, তিনি এমফিল করেন কীভাবে?

এদিকে, বাংলাদেশের অভিনেতা ফেরদৌস এবং গাজি নূরের অংশ নেওয়া নিয়ে বিতর্কের ইস্যুতে প্রথমবার মুখ খুলেছেন নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনে জেতার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবকিছু করতে পারেন। তাই বাংলাদেশি এনে ভোটের প্রচার করাচ্ছেন। সীমান্তবর্তী জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরে নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, এ রাজ্যে একটাই কাজ হয়, অনুপ্রবেশ। সেনার কথায় বিশ্বাস না করে দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জঙ্গি মারার হিসাব চান। নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ইতিহাসে কখনো হয়নি, ভিনদেশি নাগরিক এনে ভোটের প্রচার করা হয়েছে, দিদি সেটাও করেছেন। অনুপ্রবেশের হিসাব আপনি দিন এবার! শুধুই তোষণের রাজনীতি করেন। অন্য দেশ থেকে লোক এনে প্রচার করাচ্ছেন। আসলে, প্রতিটি প্রচারসভাতেই নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘এনআরসি’ হতে দেবেন না বলে হুশিয়ারিও দিয়েছেন। সেই বিতর্কে নরেন্দ্র মোদির জবাব, ভুল বোঝানো হচ্ছে। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ভুল বোঝানোর চক্রান্ত চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, মা-মাটি-মানুষের নামে বাংলার জনতাকে লুট করেছেন মমতা দিদি। আগে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সততার প্রতীক ভাবতেন নরেন্দ্র মোদি। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ভুল ভেঙেছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, আমি ভুল বুঝেছিলাম, লোকে তো ভুল বুঝবেই। তবে ২৩ মের লোকসভা ভোটার ফল প্রকাশের পর, স্পিডব্রেকার দিদি বুঝবেন লুট ও গু-ামির পরিণাম কী হতে পারে। এ ছাড়া সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার ভাইপো অভিষেককে আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেছেন, পিসি-ভাতিজা মিলে রাজ্যের সংস্কৃতি নষ্ট করছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ইস্যুভিত্তিক আক্রমণের একটি বড় অংশ জুড়েই ছিল খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছেন বলেও কটাক্ষ করেছেন নরেন্দ্র মোদি।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এলে তিনি সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য হুমকির কারণ হবেন না। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তসলিমা বলেছেন, তিনি মনে করেন না, নরেন্দ্র মোদি মুসলিমদের জন্য হুমকি হয়ে উঠবেন। বরং তসলিমা নাসরিন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের শাস্তি দেবেন, যারা গরুর মাংস খাওয়ার অজুহাতে, মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতে প্রায় ২০ কোটি মুসলিম আছে, এটা তাদের ঘর। মুসলিমদের কেউ ভারতের বাইরে ছুড়ে ফেলতে পারেন না। তসলিমা বলেছেন, বিশ্বের অন্য মুসলিম দেশগুলোর তুলনায় ভারতের মুসলিমরা অনেক বেশি শান্তিপ্রিয়। রাজনীতিকরা তাদের আধুনিক দুনিয়া থেকে সরিয়ে রাখতে চায় নির্বাচনের সময় ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু মুসলিমদের মানুষ হিসেবে পরিচিত হওয়া দরকার। ধর্মীয় নেতা বা ইমামদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত নয়। চলতি নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদিকে মুসলিমরা ভোট দেবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তসলিমা বলেছেন, তিনি মুসলিমদের মুখপাত্র নন। এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তসলিমা নাসরিন মনে করেন, তাদের উচিত হবে না কোনো দলের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া। প্রগতিশীল চিন্তাধারা অনুসরণ করে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত; কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়। লেখিকা তসলিমা নাসরিন নিজেকে গোষ্ঠীগত রাজনীতিবিরোধী বলে বর্ণনা করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close