পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ২০ এপ্রিল, ২০১৯

ক্ষমতাসীনদের জরিপ ফাঁস

বিজেপি জোট ১৮২ কংগ্রেস জোট ২১৬

লোকসভা ভোটের দুই দফার ভোট-পর্ব মিটেছে, বাকি আরো পাঁচ পর্ব। জোরকদমে চলছে তার ভোট-প্রচারও। এরই মধ্যে ফাঁস হয়েছে চাঞ্চল্যকর এক রিপোর্ট। নাগপুর টুডে- পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দাবি, তাদের হাতে এসেছে বিজেপির নিজস্ব সমীক্ষার রিপোর্ট। দাবি করা হয়েছে, চলতি লোকসভা নির্বাচনে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে গেরুয়া শিবিরের ঝুলিতে জুটবে ১৮২টি আসন। ২১৬+ আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস। চাঞ্চল্যকর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা সংবাদসংস্থাটি আদতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ মানে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। রিপোর্টের তথ্য খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি কিন্তু তাতে বলা হয়েছে, বিজেপি একা ১৫১ এবং এনডিএ জোট ১৮২টি আসন পাবে। কংগ্রেসসহ বিরোধীরা ২১৬টির বেশি আসন পেতে পারে। নাগপুর টুডে- পত্রিকার খবর অনুযায়ী, রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটি আসন পাবে ভারতীয় জনতা পার্টি, বিজেপি। কংগ্রেস চারটি এবং তৃণমূল কংগ্রেস ৩৬টি আসন পেতে পারে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে আসন পাওয়া নিয়ে দিল্লিতে বিজেপি নেতারা প্রায়ই জোরেশোরে ঘোষণা দিচ্ছেন। দাবি, এবার পশ্চিমবঙ্গে ভালো ফল করবে বিজেপি। দলের সভাপতি অমিত শাহ ২৩টি আসনের দাবি জানিয়েছেন। তবে রিপোর্টের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও, নাগপুর টুডের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলায় আপাতত স্বপ্নপূরণ হচ্ছে না গেরুয়া শিবিরের। একইভাবে বিহারে ৪০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৯টি আসন জুটবে এনডিএর। উত্তরপ্রদেশেও ৬০ শতাংশ আসন বহুজন সমাজ পার্টি-সমাজবাদী পার্টির জোট পাবে বলে দাবি করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নাগপুর টুডে- পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে।

এদিকে লোকসভা ভোটের পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফায় আরো বাড়ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী সংখ্যা। তৃতীয় দফার ভোটের জন্য আরো ৫০ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষ অজয় নায়েক। বৃহস্পতিবার ছিল উত্তরবঙ্গের তিন আসনে দ্বিতীয় দফার ভোট। দ্বিতীয় দফার ভোটে মোট ১৯৪ কোম্পানি বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রায় ৮০ শতাংশ বুথে আধাসেনা মোতায়েন করা হয়। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অজয় নায়েক বলেছেন, অতিরিক্ত বাহিনী দিয়ে ভোট করায় দ্বিতীয় দফায় ভালো ভোট হয়েছে। তাই তৃতীয় দফায় আরো ৫০ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হবে। এতে ৯০ শতাংশ বুথে বাহিনী দেওয়া সম্ভব হবে। আগামী মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল লোকসভা ভোটের তৃতীয় দফার ভোট। ওই দিন বালুরঘাট, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ এই পাঁচটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি অজয় নায়েক আরো জানিয়েছেন, অর্ণব রায়ের জায়গায় নোডাল অফিসার হিসেবে নদিয়ায় অন্য অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আর কোনো খোঁজ মিলছে না নদিয়ার নোডাল অফিসার অর্ণব রায়ের। নির্বাচনে ডিউটিতে নদিয়ার বীপ্রদাস পাল চৌধুরী পলিটেকনিক কলেজে যান অর্ণব রায়। কিন্তু দুপুরে খাওয়ার পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। গাড়ি ফেলে রেখেই লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। তার ব্যবহার করা মোবাইল দুটিও বন্ধ রয়েছে। তবে এই ঘটনার পেছনে পারিবারিক হতাশা রয়েছে বলে মনে করছে কমিশন।

এদিকে জাতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের এক মন্তব্য নিয়ে শুক্রবার তোলপাড় হয়েছে গোটা দেশ। মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় তাকে মিথ্যা ফাঁসানোর অপরাধেই বেঘোরে মরতে হয়েছে মুম্বাইয়ের এটিএস প্রধান হেমন্ত কারকারেকে। এমনই দাবি জানিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। ২০০৮ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণকান্ডে মোট সাত অভিযুক্তের মধ্যে প্রজ্ঞার নামও যুক্ত ছিল। সাধ্বী বলেছেন, সেই সময় এটিএস প্রধানকে তিনি নাকি অভিশাপ দিয়েছিলেন, ‘তোর সর্বনাশ হবে।’ এর কয়েক দিন পরেই মুম্বাইয়ে কুখ্যাত ২৬/১১-র সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হন হেমন্ত কারকারে। সাধ্বীর দাবি, তার অভিশাপেই এটিএস প্রধানের অকালমৃত্যু ঘটেছিল। হেমন্ত কারকারের সঙ্গে সাধ্বী প্রজ্ঞার ‘সম্পর্ক’ পুলিশ মহলে অজানা নয়। ২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মালেগাঁও বিস্ফোরণের তদন্ত করেছিলেন হেমন্ত করেকারের। সাধ্বী প্রজ্ঞা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শ্রীকান্ত পুরোহিতসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরণে ষড়যন্ত্রের চার্জশিট দিয়েছিলেন মুম্বাই পুলিশের তৎকালীন এটিএস প্রধান কারকারে। তার ভিত্তিতেই সাধ্বীসহ অভিযুক্তরা গ্রেফতার হন। বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। সক্রিয় হয়েছে নির্বাচন কমিশনও। মধ্যপ্রদেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, ভোপালের বিজেপি প্রার্থী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুরের বিরুদ্ধে হেমন্ত কারকারে নিয়ে মন্তব্যের অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে ভোপালে তার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হচ্ছেন দিগি¦জয় সিংহ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

এদিকে ভোট বাজারে ভেসে উঠেছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া। জানিয়েছেন তার আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা নেই। তবে রাজনীতি থেকে অবসরও নেবেন না। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলে তার পাশে থাকবেন জেডিএস প্রধান। আগে তিনি জানিয়েছিলেন, এবার লোকসভা ভোটে আর দাঁড়াবেন না। পরে অবশ্য মত বদলে ফেলেছেন ৮৫ বছর বয়সি নেতা। কংগ্রেস-জেডিএস জোটের প্রার্থী হয়েছেন কর্নাটকের টুমকুর লোকসভা আসনে। দেবেগৌড়া বলেছেন, এটা ঠিকই, তিন বছর আগে ঘোষণা করেছিলেন, যে আর ভোটে দাঁড়াবেন না। কিন্তু পরিস্থিতিটা এখন যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে দাঁড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। দেবেগৌড়া বলেছেন, কিছুই লুকোতে চান না, তার কোনো উচ্চাকাক্সক্ষা নেই। তবে রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন না। রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলে তার পাশে থাকবেন। দিনকয়েক আগে তার ছেলে, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী জানিয়েছিলেন, ভোটের পর তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সবার মতামত নিয়ে দেবেগৌড়াও ফের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close