হাসান ইমন

  ১৪ এপ্রিল, ২০১৯

সবকিছু পেছনে ফেলে মহামিলনের নববর্ষ

পহেলা বৈশাখে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশই মেতেছে লোক উৎসবে। এই প্রাণের উৎসবে জাত-ধর্ম-লিঙ্গ-বর্ণ আড়ালে রেখে সব মানুষ মিলেছে এক কাতারে, এ এক মহামিলন, মানবতার মহাসমুদ্র। শাস্ত্র শুকুনের ভয় পায়ে ঠেলে শুধুই এগিয়ে চলা। নতুন বাংলা বছর ১৪২৬ এসেছে নানা আয়োজনে, নতুনের রং ছড়িয়ে। রমনার বটমূলে আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বাঙলা বছরকে বরণ করেছে ছায়ানট। পহেলা বৈশাখে ঢাকার নানা জায়গায় মেলা, বিভিন্ন আয়োজনÑ সব মিলিয়েই নববর্ষ উদযাপন। শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা বিনিময়। কল্যাণ আর মঙ্গলে প্রার্থনা।

রাজধানীতে প্রতি বছরের মতো এবারও রমনার বটমূলের প্রভাতী আয়োজন হয়েছে। আজ ভোর সকাল সোয়া ৬টায় বছরের প্রথম সূর্যোদয়কে স্বাগত জানানো হয়েছে রাগালাপ দিয়ে। প্রতূষে ছিল প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ও সৃষ্টির মাহাত্ম্য নিয়ে ভোরের সুরে বাধা গানের গুচ্ছ। পরের ভাগে ছিল অনাচারকে প্রতিহত করা এবং অশুভকে জয় করার জাগরণী সুরবাণী, গান-পাঠ-আবৃত্তিতে দেশ-মানুষ-মনুষ্যত্বকে ভালোবাসার প্রত্যয়। ভোরে সুরে সুরে নতুন বছরের প্রথম দিনকে বরণ করা হয়েছে। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর সব বয়সের নাগরিক নতুন পোশাক পরে নতুন বছরকে বরণের জন্য বের হয়ে আসে রাজপথে। সবার ঠিকানা মিলেছে রমনা বটমূলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, বাদ পড়েনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলা একাডেমি, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর এলাকা। এছাড়া পুরান ঢাকায় হালখাতা, বসুন্ধরা, উত্তরা, বনশ্রী, বনানী ও গুলশানসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বৈশাখী মেলার ঢাকা পরিণত হয়েছে আনন্দ নগরীতে।

আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করেছে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার হচ্ছে। বাঙালির এই প্রাণের উৎসবকে ঘিরে রমনা পার্কসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পুরোটাই ঢেকে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা চাদরে। সারা দেশেই নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

রমনার বটমূলের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘ছায়ানট’ ভোরের সূর্যের আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গেই সরোদবাদন দিয়ে শুরু করবে বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান। ঢাবির বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করে। সকাল ৯টায় ঢাবির উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, শিশু একাডেমি দিয়ে ঘুরে টিএসসি চত্বর দিয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হয়। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখে ধানমন্ডি লেকে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ধানমন্ডি লেক ভিউ কর্নারের আয়োজনে লেকের শতায়ু অঙ্গন মঞ্চে আজ সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ সকালে সংগঠনের সদস্যরা সমস্বরে গাইবেনÑ ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো।’ বর্ষবরণের আয়োজনমালায় রয়েছে পান্তা-ইলিশ, সাংস্কৃতিক পর্ব ও আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এছাড়া বিশেষ অতিথি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেন।

নববর্ষ উদযাপন করতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। এ বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সকাল ৮টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় লাঠি খেলা, অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা এবং বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে হাডুডু খেলা, লাঠিখেলা, অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও লোকনাট্য পরিবেশনা। এছাড়া পাঁচতারকা হোটেলসহ বিভিন্ন হোটেল বৈশাখী উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close