ফেনী প্রতিনিধি

  ০৭ এপ্রিল, ২০১৯

সেই পরীক্ষার্থীকে আগুনে ঝলসে দিল দুর্বৃত্তরা

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

ফেনীর সোনাগাজীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকারী সেই পরীক্ষার্থীকে আগুনে ঝলসে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার কিছুক্ষণ পর কৌশলে নুসরাত জাহান নামের ওই পরীক্ষার্থীকে মাদ্রাসার চারতলার ছাদে ডেকে নিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর বাজারে অবস্থিত ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফেনী সদর হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। নুসরাত পৌরসভার উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা মুছা মিয়ার মেয়ে।

অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান নুসরাতের বরাত দিয়ে বলেন, শনিবার সকালে আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় যায় নুসরাত। এ সময় কিছু বখাটে তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রের চারতলায় ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। শরীরে আগুন নিয়ে চারতলা থেকে চিৎকার করতে করতে নিচে নেমে আসে নুসরাত। চিৎকার শুনে উপস্থিত লোকজন ও পরীক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। পরে ফেনী সদর হাসপাতালে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জানান, তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে বোরকা পরা এক ছাত্রী তাকে বলেন, তার এক বান্ধবীকে (নিশাত) ছাদের ওপর মারধর করা হচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি ছাদে গেলে তার ওপর কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে বোরকা পরা কয়েকজন ছাত্রী পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তার শরীরে আগুন লাগানো হয়েছে।

পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাসেদ ও মাদ্রাসার নিরাপত্তা প্রহরী মোস্তফা বলেন, ঘটনার সময় ছাদ থেকে চিৎকার করতে করতে নুসরাত নিচে নেমে এলে আমরা দ্রুত তার শরীরের আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। এ সময় মাদ্রাসার অন্যান্য পরীক্ষার্থী এগিয়ে এসে তার শরীরের আগুন নিভিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠায়।

ঘটনার কিছুক্ষণ পর ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এম এনামুল করিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল পারভেজ, সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইকুল আহমদ ভুঞা মাদ্রাসায় পৌঁছে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের বান্ধবী নিশাত জানান, তাকে কেউ মারধর করেনি। উপস্থিত পরীক্ষার্থীরা জানান, নুসরাত হলে এসে তার প্রবেশপত্রসহ অন্য সামগ্রী পরীক্ষা কেন্দ্রের টেবিলে রেখে বাইরে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আগুনের ঘটনা ঘটে।

ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের বলেন, নুসরাতের শরীরে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিষয়টি আত্মহত্যার চেষ্টা না কি হত্যা প্রচেষ্টা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন সোনাগাজী থানায়। ওই মামলায় অধ্যক্ষ ফেনী কারাগারে আছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close