বদরুল আলম মজুমদার

  ০৭ এপ্রিল, ২০১৯

খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পাবেন!

প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সর্বত্র চলছে এ নিয়ে আলোচনা। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে গোপন বৈঠকের খবরও পাওয়া গেছে। বিএনপির একটি সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। কারাগারে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে একাধিকবার সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। তাছাড়া চেয়ারপারসনের পরিবার থেকে সরকারের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়টিও আলোচনায় আছে। দলীয় একটি সূত্র জানায়, খালেদার মুক্তির ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে সরকার বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের সংসদে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে বিএনপির চাওয়া হচ্ছে, সরকার যেন খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেয়।

বিএনপি বারবার অভিযোগ করে আসছে, খালেদা জিয়ার জামিন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে সরকার। একজন কয়েদি হিসেবে জামিন পাওয়া খালেদার আইনি অধিকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়াকে এখন মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে সরকার বেশ ইতিবাচক। তাই কোন প্রক্রিয়ায় তিনি মুক্তি পাবেন তা নির্ভর করছে সরকার ও বিএনপির ‘নেগোসিয়েশন’র ওপর। তবে আপাতদৃষ্টিতে খালেদার মুক্তির বিষয়টি সামনে এলেও সবকিছুই নির্ভর করছে উভয় পক্ষের চূড়ান্ত বোঝাপড়ার ওপর।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেছেন, সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আবেদন করলে খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন। যদি খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন তাহলে বিষয়টি ভেবে দেখব আমরা। তবে তিনি বলেন, প্যারোলে মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়াকে একটি সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। যদি তিনি আবেদন করেন তাহলে মুক্তি পেতে পারেন। তবে খালেদা জিয়ার জন্য প্যারোলের কোনো আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো পায়নি। দুই মেরুতে থাকা সরকারি জোট ও বিরোধী জোটের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে এরই মধ্যে বরফ গলতে শুরু করেছে। নির্বাচনের পর এমন রাজনৈতিক মেরূকরণ বা সমঝোতার পথে দুটি দলেরই কিছু দাবি দাওয়ার বিষয়ে পর্দার আড়ালে দেনদরবারের খবরও উঠে এসেছে।

বিএনপি জোট গত নির্বাচনে অংশ নিয়ে আটটি আসনে জয়লাভ করে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি অভিযোগ করে দলটি ফল প্রত্যাখ্যান করে। অন্য দিকে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তাতে সায় দেয়নি দলটি। তবে সূত্র জানায়, বিএনপিকে সংসদে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারে পক্ষ থেকে জোরালো চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রয়োজনে ঐক্যফ্রন্টের দুই একজনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিতেও রাজি সরকার। এ ব্যাপারে সরকারও অবস্থান পরিষ্কার করে জানিয়েছে, সংখ্যা দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে বিবেচনা করা হবে না। সংসদে যোগ দিয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিতে পারেনÑ এমন একটি প্রচার দলের মধ্যে অনেকে দিন থেকেই আছে। তবে দলটি এ মুহূর্তে তাদের প্রধান নেতা চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে জোর দিচ্ছে। আন্দোলন করে অথবা আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তির নিশ্চয়তা দলটির বর্তমান নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। আবার দীর্ঘদিন জেলখানায় থেকে খালেদা জিয়াও নানা রোগে ভুগছেন। এ নিয়ে তিনি তার কষ্টের কথা বলেছেন নেতাদের কাছেও। তাই তাকে মুক্ত করতে বিএনপির নেতারা সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছেন বলে শোনা যায়। এই দেনদরবারের অংশ হতে পারে খালেদার মুক্তির বিনিময়ে নির্বাচিত এমপিদের শপথ নিয়ে সংসদে যোগদান। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলেই বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে নিশ্চিত করেছে অপর একটি সূত্র। গত সোমবার রাতে দুই পক্ষের নেতাদের মধ্যে গুলশানে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

দলটির নেতারা মনে করেন, আইনি প্রক্রিয়ায় চেয়ারপারসনের মুক্তি আরো বিলম্ব হতে পারে। তাছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আইনি প্রক্রিয়ায় কিংবা রাজপথের কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলে চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা কঠিন। আর আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদার মুক্তির বিষয়টি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর ফলে বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার আরো অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের মূল দাবি হচ্ছে চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসা। তার চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এজন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব। তিনি আরো বলেন, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া নির্ভর করে রোগীর ওপর। তিনি প্যারোল চাইবেন কি চাইবেন নাÑ সেটা একান্ত তার নিজস্ব ব্যাপার। আমরা আগ বাড়িয়ে এটা বলতে পারি না।

খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চাইবেন মর্মে দুই পক্ষের কেউ নাম প্রকাশ করে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। মুক্তি পেলে সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নিতে পারেন খালেদা জিয়া। এর আগেও কয়েক দফা দেশ দুটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। তবে অন্যবারের চেয়ে এবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ভিন্ন। এবার খালেদা জিয়া কারাগারে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আগে যতবারই তিনি চিকিৎসা নিতে বিদেশে গিয়েছিলেন, ততবারই ছিলেন মুক্ত পরিবেশে।

খালেদার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, জেল কোড অনুযায়ী কোনো আসামিকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার বিধান নেই। প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। সরকার ইচ্ছা করলে কাউকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্যারোলে মুক্তি দিতে পারে। এর আগে সেনাসমর্থিত সরকারের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close