তুহিন আহমদ, মহানগর (সিলেট)

  ২৫ মার্চ, ২০১৯

সেকৃবি শিক্ষার্থী ওয়াসিম হত্যার প্রতিবাদ

উত্তাল সিলেটের রাজপথ

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুরে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আহনাফকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে সকাল থেকেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পার্শ্ববর্তী সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরাও জড়ো হন আন্দোলনস্থলে। এদিকে গতকাল রোববার বাদ জোহর জানাজা শেষে ওয়াসিমের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত বাসের চালক ও হেলপার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে তাদের দায় স্বীকার করে। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসের ফুচকা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে নগরের চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এ সময় প্রচণ্ড গরমে তিন শিক্ষার্থী জ্ঞান হারালে তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

দুপুর ১২টার কিছু পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড। এ সময় তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি ছাত্র ওয়াসিমকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সবাই এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’ এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে আহ্বান জানালে সঙ্গে সঙ্গে ‘না’, ‘না’ বলে শিক্ষার্থীরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়।

আন্দোলনের সমন্বয়কারী মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ তিনি ‘উদার পরিবহনের’ রুট পারমিট বাতিল এবং ঘটনায় জড়িত বাসচালক ও তার সহযোগীর দ্রুত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি জানান।

বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা স্থগিত, ক্লাস বর্জনসহ তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ তুলে নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে শিক্ষার্থীদের চৌহাট্টায় সড়ক অবরোধের মুখে পড়েন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনুরোধেও সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের গাড়ি ছাড়েননি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তবে পরবর্তীতে আবুল মাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখলে তার গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, একটি বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে বাকবিত-ার জের ধরে একটি ছাত্রকে বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে ছাত্রটি মারা যায়। এটা নিশ্চিত একটা হত্যাকা-। পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের এরই মধ্যে আটক করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কোর্টের সামনে উপস্থাপন করা হবে।’

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনস্থলে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করছে সিসিক। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) একটি বিশুদ্ধ পানিবাহী ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে দেখা গেছে। পানি পেয়ে প্রখর রোদে শিক্ষার্থীরা যেন প্রাণ ফিরে পায়।

সড়কে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালেই নগরের মীরের ময়দানে ঘটেছে আরেকটি দুর্ঘটনা। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ধাক্কায় অটোরিকশার চালকসহ দুজন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের শেরপুরে বাসচাপায় প্রাণ হারান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ওয়াসিম। তিনি হবিগঞ্জে নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামের আবু জাহেদ মাহবুব ও ডা. মীনা পারভিন দম্পতির একমাত্র সন্তান।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ওয়াসিমের সহপাঠীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, ওয়াসিমকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করে ‘উদার পরিবহন’ নামের বাসটির হেলপার। এমন অভিযোগে গত শনিবার রাত থেকেই বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতেই ঘাতক বাসকে ওসমানীনগর থেকে, বাসচালক জুয়েল আহমদকে দক্ষিণ সুরমা থেকে এবং হেলপার মাসুক আলীকে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে আটক করে পুলিশ।

চালক-হেলপারের দায় স্বীকার :

ওয়াসিমকে বাস থেকে ফেলে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ঘাতক বাসচালক জুয়েল আহমদ ও হেলপার মাসুদ মিয়া। গতকাল রোববার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মৌলভীবাজার থানা পুলিশের কাছে তারা ঘটনার দায় স্বীকার করে। মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি সোহেল আহমদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার দায় স্বীকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওয়াসিমের দাফন সম্পন্ন :

বাসচাপায় নিহত ওয়াসিমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার বাদ জোহর জানাজা শেষে তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে গত শনিবার রাতে তার লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

জানাজার পূর্বে ছাত্রজনতা আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ মিলাদ, সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল, ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদ জাবেদ প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close