নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ মার্চ, ২০১৯

অচল সড়কে দুর্ভোগ চরমে

* নিরাপদ সড়কের দাবি * মেয়রের আশ্বাসে ঘরে ফিরলেন শিক্ষার্থীরা * আন্দোলন এক সপ্তাহ স্থগিত

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে ঘরে ফিরলেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বাসচাপায় এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় টানা দুদিন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে আসার পর গতকাল বুধবার বিকেলে মেয়রের কার্যালয়ে এক বৈঠক থেকে কর্মসূচি স্থগিতের এই ঘোষণা আসে। এদিকে, শিক্ষার্থীদের অবরোধের মধ্যে সড়কে গণপরিবহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। কেউ রিকশায়, কেউবা হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। দূরের গন্তব্যের জন্য অনেককে রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভর করতে হয়।

গত মঙ্গলবার বাড্ডার প্রগতি সরণিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন। ঘটনার পর থেকেই বিক্ষুব্ধ সহপাঠীদের দাবি নিরাপদ সড়কের। তার মৃত্যুকে হত্যাকা- আখ্যায়িত করে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সে আন্দোলন পুরো রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা নর্দায় বসুন্ধরা গেটে জড়ো হতে শুরু করেন। সাড়ে ৯টার দিকে তারা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শুরু করেন বিক্ষোভ। বিইউপির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), সিদ্ধেশ্বরী কলেজ এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নর্দার বিক্ষোভে যোগ দেন।

‘জাস্টিস ফর আবরার’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আর কত রক্ত ঝরাতে হবে রাস্তায়’Ñ এ রকম নানা সেøাগানে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাতে থাকেন তারা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ফলে প্রগতি সরণি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ কালাচাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এবং কুড়িলে যানবাহন ডাইভারশনের ব্যবস্থা করে। সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য।

বেলা ১১টার দিকে বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. ইমদাদ-উল-বারি, ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বসুন্ধরা গেটে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তারা সেখানে আবরারের নামে একটি ফুটব্রিজের ভিত্তিফলকও উন্মোচন করেন, যা ছিল আন্দোলনকারীদের অন্যতম দাবি। সড়ক দুর্ঘটনায় আবরারের মৃত্যুকে ‘অনাকাক্সিক্ষত একটি ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করে মেয়র আতিকুল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। মেয়র চলে যাওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। আন্দোলনকারীরা দুপুরে সেখানে আবরারের স্মরণে গায়েবানা জানাজায় অংশ নেয়।

শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মেয়রের সঙ্গেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠকে বসে। পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে বিউইপির আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি ফয়সাল এনায়েত বলেন, আবরার নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফুটব্রিজ, স্পিডব্রেকার নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এক মাসের মধ্যে তার দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং সুপ্রভাত পরিবহনকে আর কখনো রুট পারমিট না দেওয়ার দাবি পূরণ করার প্রতিশ্রুতি তারা মেয়রের কাছ থেকে পেয়েছেন। এর ভিত্তিতে তারা অগ্রগতি দেখার জন্য সাত দিন সময় দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।

এদিকে, বিইউপির শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ছাত্ররাও ফার্মগেট অবরোধের চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিলেও পরে শিক্ষার্থীরা সেখানে গাড়ি থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা শুরু করে। একপর্যায়ে সিটি কলেজ থেকে শাহবাগগামী অংশে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বিক্ষোভ শুরুর মিনিট পনেরো পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী এসে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড় হয়ে চারদিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

কাছাকাছি সময়ে বিক্ষোভ শুরু হয় মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক, ?পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়, তাঁতীবাজার, ধানমন্ডি ৩ নম্বর রোড, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের ড্যাফোডিল মোড়, মানিকমিয়া অ্যাভিনিউ, মিরপুর সনি সিনেমা হলের মোড়, নতুন বাজার, মহাখালী, উত্তরার রজউক ও হাউজবিল্ডিং এলাকায়। বিইউপি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে গতকাল ঢাকার রামপুরা এলাকায়ও রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মেরুল বাড্ডা এবং রামপুরা টিভি স্টেশনের সামনে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ইমপেরিয়াল কলেজসহ স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে বীর-উত্তম রফিকুল ইসলাম সরণিতে যানবাহন চলাচল করতে পারছিল না। বনশ্রী থেকেও কোনো যানবাহন বের হতে পারছিল না।

শিক্ষার্থীরা চালকের লাইসেন্স এবং যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষা করে ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে বীর-উত্তম রফিকুল ইসলাম সরণি থেকে হাতিরঝিলে ঢুকতে দিচ্ছিল। একইভাবে হাতিরঝিল থেকে বীর-উত্তম রফিকুল ইসলাম সরণিতে সীমিতসংখ্যক যানবাহন যেতে পেরেছে। সারা দিন বিক্ষোভ করে বিকেলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে সরে গেলে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close