হাসান ইমন

  ১৮ মার্চ, ২০১৯

এবার জলাবদ্ধতারোধে ৮০৩ কোটি টাকা ব্যয়

সামনে বর্ষা মৌসুম। আর বর্ষা আসলেই রাজধানীতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, তখন নাগরিক দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। এবার জলাবদ্ধতা নিরসনের বাজেট ধরা হয়েছে ৮০৪ কোটি টাকার। এই টাকা ব্যয় করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা ওয়াসা। এর মধ্যে রাস্তা, ফুটপাত ও ড্রেন সংস্কারে ডিএসসিসির খরচ ধরা হয়েছে ৫৮৪ কোটি টাকা। একই খাতে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয় করবে ডিএনসিসি। এছাড়া খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কারে ঢাকা ওয়াসা ব্যয় ধরেছে ৪০ কোটি টাকা। এর আগের বছর এই তিন সংস্থা জলাবদ্ধতারোধে যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছে, সেই পরিমাণ সুফল মেলেনি। এমনই মত বিশেষজ্ঞদের। জানা গেছে, রাজধানীতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য সাড়ে আট কিলোমিটার বক্স কালভার্ট এবং ৩৫০ কিলোমিটার স্টর্ম সুয়ারেজ লাইন রয়েছে। বৃষ্টির পানি এই দুই মাধ্যমে বিভিন্ন জলাশয়, খাল বা নদীতে প্রবাহিত হয়। বক্স কালভার্ট ও ড্রেন দেখাশোনার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। পাশাপাশি ঢাকায় প্রায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে, যার মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় ২ হাজার এবং ওয়াসার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ড্রেন লাগবে। এ ড্রেনের মাধ্যমেই বৃষ্টির পানি বক্স কালভার্ট বা স্টর্ম সুয়ারেজ লাইনে নিয়ে ফেলা হয়। স্টর্ম সুয়ারেজ লাইন বা বক্স কালভার্ট দিয়ে সরাসরি সেই পানি নিচু জলাশয়ে গিয়ে জমা হয়। প্রত্যেক বর্ষা মৌসুম শেষে ৮০ শতাংশ বক্স কালভার্ট ও স্টর্ম সুয়ারেজ লাইন ভরাট হয়ে যায়। এ ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বিঘিœত হয়। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

এদিকে অল্প বৃষ্টিতে ডিএসসিসি এলাকার ৩০টি স্থানে পানি জমে থাকার একটি তালিকা ওয়াসাকে দিয়েছে সংস্থাটি। এগুলো হলোÑ ডিএসসিসির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ধানমন্ডি ২৭ ও ১৫ নম্বরের ঈদগাহ রোড। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউমার্কেট সাইকেল স্ট্যান্ড, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্কাটন রোড বর্তমান পরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনে, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিম উদ্দিন রোডের ঢাকা কারাগার সদর দফতরের সামনে, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের নবাবগঞ্জ পার্ক, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের গণকটুলি কলোনির সামনে, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিগাতলা কাঁচাবাজারের সামনেসহ ২২টি স্থানের নাম দিয়েছে ডিএসসিসি।

সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার জলাবদ্ধতাপ্রবণ এসব এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য চলতি অর্থবছরে ওই তিন সংস্থা বড় বাজেটের কাজ শুরু করছে। সড়ক, ফুটপাত ও ড্রেন নির্মাণে ৫৮৪ কোটি টাকার মধ্যে ৫৬৪ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা ও ২০ কোটি টাকা নিজ অর্থায়নে খরচ করবে ডিএসসিসি। গত অর্থবছরে সংস্থাটি এ খাতে খরচ করে প্রায় ৭১৭ কোটি টাকা। এছাড়া ডিএনসিসি তাদের বার্ষিক বাজেটে এ খাতে প্রায় ১৮০ কোটি বরাদ্দ রেখেছে। গত অর্থবছরে ডিএনসিসি নর্দমা ও ড্রেন নির্মাণে ১৭০ কোটি টাকা খরচ করে। অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসা খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কারে যে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরেছে, এই অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) কাছে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা গত বছর ১৭টি খাল পুনঃখননে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় করে। এবারও ৬০ কোটি টাকার চাহিদা পাঠায় এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে। ওই চাহিদা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তারা জানান, ওয়াসার নিজস্ব অর্থায়নে যেন খাল উন্নয়নের কাজ করে। পরে ওয়াসা ফের চাহিদা পরিবর্তন করে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র এলজিআরডিতে পাঠালে তা অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো হয়। এছাড়া গতবছর ঢাকা ওয়াসা খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কার করার কাজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, তার যথাযথ সুফল মেলেনি বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব প্লেনার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, গত বছর সামান্য বৃষ্টিতে মিরপুরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত বছর বর্ষা মৌসুমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলতি বছরে ওয়াসার কাজের গতি বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, সিটি করপোরেশন মূলত নতুন লাইন তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলোর কোথায় কোথায় ব্লক হয়েছে তা পরিষ্কার করার ব্যাপারে তারা মনোযোগী নয়। ফলে নতুন করে ব্যাপক অর্থ খরচ করা হলেও পুরো নেটওয়ার্কিং না হওয়ায় সুফল মিলছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, ওয়াসার খাল পুনঃখনন ও গতবারের খালগুলো পরিষ্কারে ৪০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে কয়েক দফায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চিঠি ও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় উল্টো নিজস্ব অর্থায়নে খাল পুনঃখননের পরামর্শ দিয়েছে। এই পরামর্শ দিয়ে ওয়াসা কী করবে? ওয়াসার কাছে তো টাকা নেই। তিনি আরো বলেন, গতবছরে ১৭টি খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কার করা হয়েছে। টাকার অভাবে বাকি খালগুলো পুনঃখনন সম্ভব হয়নি। এক কিলোমিটার খাল পুনঃখননে এক কোটি টাকা ব্যয় হয়। ওয়াসার ৩৭০ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন, ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট, চারটি স্থায়ী পাম্পিং স্টেশন এবং ১৬টি অস্থায়ী পাম্পিং স্টেশন আছে।

ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ওয়াসার দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে মতিঝিল, পল্টন, প্রেসক্লাব, সেগুনবাগিচা ও ফকিরাপুল এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সিটি করপোরেশনের ড্রেন মিশেছে ওয়াসা লাইনের সঙ্গে। ফলে ওয়াসা সময়মতো পানি নিষ্কাশন করতে পারে না। এতে পানি সময়মতো নিষ্কাশন হতে পারে না। এজন্য টিটিপাড়ায় মাত্র তিনটি পাম্প রয়েছে, এ পাম্পের সংখ্যা আরো না বাড়ালে সহজে পানি নামবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close