সজল সরকার, টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ)

  ১৮ মার্চ, ২০১৯

জাতীয় শিশু দিবসে প্রধানমন্ত্রী

শিশুরা যেন সবদিকে পারদর্শী হয়ে ওঠে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুরা যেন শিক্ষা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সাংস্কৃতিক চর্চাÑ সব দিকে পারদর্শী হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আজকের শিশু যাতে আগামী দিনে একটি সুন্দর জীবন পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পরিবেশ সৃষ্টি করছি যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারে, মানুষের মতো মানুষ হতে পারে, উচ্চশিক্ষা নিতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শিশু সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এসময় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের অন্যদের হত্যাকান্ডের কথা বলতে গিয়ে খানিক কেঁপেও উঠল তার গলা। একরাতে পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হারানো প্রধানমন্ত্রী তাই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খুঁজে ফেরেন তার স্বজনদের।

সে কথা বলতে গিয়েই তিনি বললেন, পঁচাত্তরে তিন ভাইকে হারিয়ে আমি লাখো ভাই পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই ছিল শিশুরা মানুষের মতো মানুষ হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি। আজকের শিশু আগামী দিনে সুন্দর জীবন পাবে, সেটাই আমাদের অঙ্গীকার।

তিনি বলেন, শিশুদের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, পাশাপাশি শিশুশিক্ষা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সাংস্কৃতিক চর্চাÑ সবদিকে যেন তাদের পারদর্শিতা গড়ে ওঠে সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি। শিশুদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা আর নেতৃত্বে তার দূরদর্শিতার কথা স্মরণ করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (দেশ স্বাধীন হওয়া পর) মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এরই মধ্যে তিনি শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পুরোপুরি অবৈতনিক করে দিয়ে যান। শিশুদের যে অধিকার সেটা যাতে নিশ্চিত হয় তার জন্য ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা এ বাংলাদেশে শিশু আইন প্রণয়ন করেন, তখনো জাতিসংঘ শিশু আইন করেনি। কত দূরদর্শিতা ছিল তার নেতৃত্বেৃ আমরা তার আলোকেই জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন করি ২০১১ সালে। শিশুদের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছে। প্রতিটি জেলায় ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব করে দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাদের জন্য ব্রেইল বইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য তাদের ভাষার বই দেওয়া হচ্ছে।

মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা থেকেই ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দাদির কাছে গল্প শুনেছি যে, অনেক সময় নিজের বই গরীব ছাত্রদের মধ্যে দিয়ে দিতেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে বা নৌকা করে স্কুলে যেতে হতো, হেঁটে যাওয়ার সময় ছাতা কিনে দেওয়া হতো। যারা দূর দূরান্তে যেতেন তাদের তিনি নিজের ছাতাটাও দিয়ে দিতেন। অনেকে বিভিন্ন বাড়িতে লজিং থেকে পড়াশোনা করত, সেখানে হয়ত ঠিকমত খাবার পেত না। তার (বঙ্গবন্ধু) কাছে যখন তারা কথাটা বলত, তাদের তিনি বাড়িতে নিয়ে আসতেন এবং তার জন্য যে খাবার থাকত, সেটা ভাগ করে খেতেন। এই কথা শোনার পর আমার দাদি বেশি করে খাবার রেখে দিতেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এসব কাজের জন্য তার দাদা-দাদি তাদের ছেলেকে বকাঝকা না করে বরং উৎসাহ দিতেন। তিনি যে বড় হয়ে উঠেছিলেন, তাতে মা-বাবার যে অবদান সেটাও কিন্তু অনেক বড়। তিনি যে রাজনীতি করেছেন আমার দাদা-দাদি সব সময় সেই সমর্থনটা দিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে আমার মাও আমার বাবার রাজনীতির পাশে সব সময় ছিলেন। যে কারণে তিনি এত বড় আত্মত্যাগ করতে পেরেছিলেন, এত বিরাট হৃদয়ের অধিকারী তিনি হয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সে ভাষণ প্রচার করেছিলেন। তাদের নির্মম নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া লামিয়া সিকদারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিমা হোসেন, শিশু ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কে এম আলী আজম বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেয় চতুর্থ শ্রেণির আরাফাত হোসেন। জেলা প্রসাশক মোখলেসুর রহমান সরকার গোপালগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের লোগোর একটি রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করার পর সেখান থেকে নির্বাচিত সেরা চিঠিটি পড়ে শোনায় যশোরের কেশবপুরের শিশু সুরাইয়া। অনুষ্ঠানে দুস্থদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ‘আমার কথা শোন’ শীর্ষক একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এছাড়া সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান, শিশুশিল্পীদের ফটোসেশন ও বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আঁকা ছবি নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয় জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে জাতির জনকের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ, তাতে সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close