জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১০ মার্চ, ২০১৯

দীর্ঘ প্রত্যাশার নির্বাচন কাল

যেখানে প্রতি বছর হওয়ার কথা, সেখানে দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র সাতবার হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালে। আর এই ভোটে নির্বাচিত নেতারাই জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ খ্যাত এই নির্বাচনের ভোট কাল। ডাকসু ভবনের মরীচা পড়া তালা আবার খুলবে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ডাকসু শিক্ষার্থীদের একটি সার্বজনীন ফোরাম। কিন্তু এর গুরুত্ব ও প্রভাব জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই নির্বাচনই এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্র্রে। নির্বাচনে ক্যাম্পাসে তৎপর সব ছাত্র সংগঠন প্রার্থী দিয়েছে। এ উপলক্ষে দীর্ঘদিন পর যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আশায় বুক বেঁধেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে তাদের বুকের ওপর থেকে জগদ্দল পাথর এবার সরবে এমন প্রত্যাশা তাদের। এদিকে, এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। গতকাল শেষ মুহূর্তে জোর প্রচারে ছিলেন প্রার্থীরা। ছুটেছেন ভোটারদের কক্ষে কক্ষে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রচারণা চালিয়েছেন বাম জোট, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

অন্যদিকে, নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসের সাত স্পটে তল্লাশি করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শাহবাগ থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। স্পটগুলো হলো শাহবাগ, নীলক্ষেত, পলাশী, জগন্নাথ হল ক্রসিং, রুমানা ভবন ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ও শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং। এসব স্পটে আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ও অনুমোদিত ব্যক্তিরা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ তল্লাশির বাইরে থাকবে। তবে মেডিকেলগামী লোকজনদের বকশীবাজার, চাঁনখারপুল হয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভোটের দিন ক্যাম্পাসে কেবল স্টিকারযুক্ত পরিবহন চলাচল করতে পারবে। ভোট গ্রহণের সময় ৬ ঘণ্টা নির্ধারিত থাকলেও দুপুর ২টার মধ্যে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারা সব ভোটারই ভোট দিতে পারবেন।

ডাকসু নির্বাচনে নিজেদের ভোট দিতে অধীর অপেক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, স্বাচ্ছন্দ্যে সবাই যাতে ভোট দিতে পারে সেজন্য প্রতি হলে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫টি বুথ থাকবে।

অন্যদিকে, হল আইডি কার্ড নবায়ন নয়; চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই ভোট দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান।

মাহফুজুর রহমান বলেন, হল আইডি কার্ড নবায়ন করা কোনো বিষয় না। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারাই ভোট দিতে পারবে। তবে সে যে ওই হলের ছাত্র তার একটা প্রমাণ সঙ্গে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে প্লেন স্লিপ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড রাখাই উচিত।

হল সূত্রে জানা যায়, হলের বাইরে যেসব শিক্ষার্থী থাকে তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হল আইডি কার্ড নেই। অনেকের আইডি কার্ড থাকলেও তা নবায়ন করা নেই। এতে অনেকেই ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়েও হতাশায় ছিলেন। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র ইসরাইল হোসাইন হল আইডি কার্ড নবায়ন না করায় ভোট দিতে পারবেন না বলে হতাশ ছিলেন। তিনি বলেন, আমি ভোট দিতে পারব না। কেননা আমার আইডি কার্ড নবায়ন করা নেই। হলের বাইরে থাকা হাবিবুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীও এমন হতাশার কথা জানান।

শিক্ষার্থীদের হতাশার বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানান অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।

এ বিষয়ে ঢাবির জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেলওয়ার হোসেন বলেন, চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই সে ভোট দিতে পারবে। হল আইডি কার্ড জরুরি বিষয় নয়। তবে সে যে হলের ছাত্র তার একটা ডকুমেন্ট থাকতে হবে।

তিনি জানান, দ্রুত ভোট গণনায় ব্যবহার করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। হল সংসদের ফল হলগুলো থেকে আর কেন্দ্রীয় সংসদের ফল ঘোষণা করা হবে সিনেটের পক্ষ থেকে। হল সংসদ এবং ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য থাকবে আলাদা ব্যালট পেপার। পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে ক্রস দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন শিক্ষার্থীরা। হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আবাসিক শিক্ষকরা নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট থাকবে না বলে জানিয়েছেন হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের প্রাধ্যক্ষ নিজামুল হক ভূঁইয়া। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, নির্বিঘেœ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চান তারা।

গতকাল ছুটির দিন হওয়ায় প্রার্থীরা হলগুলোর রুমে রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চান। প্রতিশ্রুতি দেন শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণায় জোরদার, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাড়ানো, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনিক দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, আবাসন ও ক্লাসরুম সঙ্কট নিরসন, পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা, গণরুম ও গেস্টরুম বন্ধ করা, পরিবহন সঙ্কট নিরসন, প্রশাসনিক কাজকে অটোমেশনের আওতায় আনাসহ নানা কাজের।

প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, শেষ সময়ের প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য নেতৃত্বকে বেছে নেবে।

কোটা আন্দোলনকারীদের প্যানেলে এ জি এস পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ফারুক হাসান বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। কোটা সংস্কার ও সড়ক আন্দোলনে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম। যার কারণে আমরা অনেক নির্যাতনেরও শিকার হয়েছি। তারপরও শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলা বন্ধ করিনি। আশা করি শিক্ষার্থীরা আমাদের পক্ষে রায় দেবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা এক ধরনের উৎকণ্ঠা দেখতে পাচ্ছি। তারা ভোট দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান। তবে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী। আশা করছি, ছাত্ররা তাদের যোগ্য প্রতিনিধি ডাকসুতে নির্বাচিত করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close