গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

এনআইডি হবে অধিদফতর ইসিতেই বিরোধিতা

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনু বিভাগকে (এনআইডি) বিলুপ্ত করে স্বয়ংসম্পূর্ণ অধিদফতর করা হবে। এর ফলে ভোটার কার্যক্রমের ওপর নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বের অবসান হবে। এতে কমিশনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সরকারের এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে বলেছেন, সাংবিধানিক সংস্থার পরামর্শে এত দিন চলে আসছে ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের সব কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের ব্যাপ্তিকে অধিদফতরে রূপান্তর করলে ইসির অঙ্গহানি ঘটবে। অধিদফতরের অধীনস্থ হয়ে যাবে নিয়োগবিধি, ভোটার পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন এবং স্মার্টকার্ড প্রকল্প সংক্রান্ত সব ধরনের আইন। পাশাপাশি, ভোটার সংক্রান্ত নাগরিকদের সেবাসহ সব ধরনের সিদ্ধান্ত, পলিসি মেকিং এবং জনবল নিয়োগ তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে। শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অধিদফতরের একটি শাখা থাকবে, সেখানকার কিছু সিদ্ধান্ত ওই শাখাতে পাঠানো সাপেক্ষে সচিবালয় অবগত হবেন যা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীস্থ অধিদফতরগুলোর ক্ষেত্রে হয়ে আসছে।

ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে একমত নন কমিশনের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজের ক্ষেত্র ও পরিধি দিন দিন বাড়ছে। উইং দিয়ে এগুলো সঠিকভাবে তদারকি, সংরক্ষণ এবং সেবা প্রদান সম্ভব হবে না। তাই আগাম চিন্তা থেকেই অধিদফতর করা হচ্ছে। এতে কমিশনের অঙ্গহানি হওয়ার সুযোগ নেই। একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা এর প্রধান হবেন।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, যেকোনো অধিদফতর মন্ত্রণালয় বা সচিবালয়ের অধীনে থাকে। সচিবালয়ের নিদের্শনায় এটা চলবে। মূলত ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনু বিভাগকে বিলুপ্ত করে অধিদফতর করা হচ্ছে, শুধুমাত্র কাজের চাপ (লোড) কমানোর জন্য। এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়া অধিদফতরগুলো যে নিয়মনীতি অনুসরণ করে কাজ করছে; এটাও সেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যিনি হবেন তার পদমর্যাদা হবে অতিরিক্ত সচিব। অধিদফতরের প্রধান সামরিক না বেসামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হবেন তাও নির্ধারণ করবেন সরকার, যোগ করেন কমিশন সচিব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এনআইডি উইংকে বিলুপ্ত করে এটাকে অধিদফতর করার উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আমরা কমিশন সচিবালয়ের বাইরে আরেকটি অধিদফতর হোক সেটা চাই না। কারণ এখন এনআইডি উইংয়ের সব কিছুই বলা চলে কমিশনের পরামর্শ ও নিদের্শনায় চলছে। এরপরও অনেক সময় মনে হয়, নিজ দেশে পরবাসী। আর অধিদফতর হওয়া মাত্রই কমিশনের ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব দুটিই হ্রাস পাবে। জনবল নিয়োগ থেকে শুরু করে নিয়োগবিধি সবই তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে প্রণয়ন করা হবে। সে সময়ে কমিশন কোনো একটা যৌক্তিক বিষয় চাপালে অধিদফতর সেটা আমলে না নিলে সচিবালয়ের কিছুই করার থাকবে না। এমনকি ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের সব ধরনের কাজ ধীরে ধীরে কমিশনের হাত ছাড়া হয়ে যাবে, নিজস্ব কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব, উল্টো প্রশ্নছুড়ে জানতে চান ওই কর্মকর্তা। শুধু ওই কর্মকর্তা নয়, একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনআইডির কাজের পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ছবিসহ ভোটার পরিচয়পত্রের পর যোগ হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সুবিধা সংবলিত স্মার্টকার্ড প্রকল্প। পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেওয়া হবে এ কার্ড। দেশের প্রাপ্ত নাগরিকদের প্রতি বছর হালনাগাদ করার মাধ্যমে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে চলে হারানো কার্ড উত্তোলন, সংশোধন ও ঠিকানা স্থানাস্থরের কাজ। এবার নতুন যোগ হচ্ছে প্রবাসীদের ভোটার করার কার্যক্রম।

এদিকে বর্তমান কমিশন পর্যায়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধিদফতর করার পরামর্শ পর্যালোচনা চলছে। কমিশন চাচ্ছে, অধিদফতর হলে কাজের চাপ কমবে। অন্যদিকে, খোদ ইসির কর্মকর্তারা চাচ্ছে, অধিদফতর করার দরকার নেই। চাহিদা অনুযায়ী জনবল অনুমোদন মিললেও এনআইডির কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। কারণ অধিদফতর করতে চাইলে ন্যূনতম ৩ বছরের অধিক সময় লাগবে, যা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close