গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

সহস্রাধিক জনবল নিয়োগে সংশোধন হচ্ছে ইসির নিয়োগ বিধিমালা

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চাহিদা অনুযায়ী পদ সৃজন এবং পদ উন্নীতকরণ এখনো করেনি সরকার। কিন্তু অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তিতে নতুন জনবল নিয়োগ দিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ ও বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ এটার সংশোধন ছাড়া নতুন সৃজন হওয়া পদশূন্য থেকে যেত। একই সঙ্গে,অননুমোদিত পদগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার অব্যাহত রেখেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

সূত্র বলছে, কমিশন সচিবালয়, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই), ইসির মাঠ পর্যায়ের অফিস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের (ইসি) কার্যক্রমে গতি ফেরাতে নতুন পদ সৃজনের প্রস্তাব দিয়েছিল কমিশন। এই প্রস্তাবে সংশ্লিষ্ট শূন্যপদের বিপরীতে ৩ হাজার ৫১১টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থ-বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কমিশনের উপস্থিতিতে নানাদিক পর্যালোচনা করে ২ হাজার ৩টি পদের অনুমোদন দিয়েছে। এতে অনাপত্তি ছিল সংশ্লিষ্টদের। অবশিষ্ট ১ হাজার ৫০৯টি পদ সৃজন হয়নি; যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের প্রস্তাবিত ২৭৭ ও ইটিআইয়ের ১৩৯টি পদ। এগুলো অনুমোদন পেতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে কমিশন। তবে নতুন পদ সৃজনের প্রস্তাবের সঙ্গে কমিশন থেকে ১০৩টি পদ বিলুপ্তির সুপারিশ করেছিল কমিশনের সাংগঠনিক কমিটি যা অনুমোদন পেয়েছে।

এর আগে ইসি সচিবালয়, ইটিআই, মাঠ অফিস ও এনআইডি মিলিয়ে সাংগঠনিক জনবল কাঠামো ছিল ২ হাজার ৮৩৪টি। সর্বশেষ অনুমোদিত পদ সৃজন মিলিয়ে মোট জনবল কাঠামো দাঁড়াল ৪ হাজার ৮৩৭টি। এদিকে নতুন পদ সৃজনের পাশাপাশি কিছু পদ উন্নীতকরণের প্রস্তাব ছিল কমিশনের। এসব পদের মধ্যে ইটিআইয়ের মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ বিদ্যমান তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ প্রস্তা এবং সারা দেশের ৪৫ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদকে ষষ্ঠ থেকে পঞ্চম গ্রেডে উন্নীতি করা। কিন্তু দুটি প্রস্তাবই নাকচ করে জনপ্রশাসনের সাংগঠনিক কমিটি। এর আগে কমিশনের মাঠ অফিসের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ১৯টি পদ উন্নীত করেছিল সরকার। বর্তমান এ পদধারীদের অফিস পরিচয় বহন করছে অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেন, কমিশনের পদ সৃজনের জন্য প্রস্তাবিত পদগুলো থেকে ২ হাজার ৩টি অনুমোদন পেয়েছি। কিন্তু নতুন পদ সৃজন হলেও সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে এর আলোকে নিয়োগ বিধিমালায় পরিবর্তন বা সংশোধনী আনতে হবে। এরই মধ্যে এ সংশোধন কার্যক্রমের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসনের বিধি অনুবিভাগের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে, দ্বিতীয় সভাটি ৩ মার্চ হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি, নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন হলে নতুন সৃজন হওয়া পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে সম্পন্ন শুরু হবে।

ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন কিছু পদ সৃজন হয়েছে। কিন্তু পদ উন্নীতকরণের প্রস্তাব উপেক্ষিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয় তার পেছনে কিছু যৌক্তিক কারণ থাকে; তার আলোকে ৩ হাজার ৫১১টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর বিপরীতে দুই-তৃতীয়াংশ পদ সৃজনসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে। এতে কমিশনের কাজের যে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে তা দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সেবা মিলবে না। অনেকটা চালাতে হবে জোড়াতালি দিয়ে। কেননা সাংবিধানিক সংস্থায় প্রতিনিয়ত কাজের পরিধি বাড়ছে। বছরজুড়ে চলছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ, প্রবাসীদের ভোটার করার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত দিতে হচ্ছে এনআইডির সেবা এবং বছরজুড়ে চলছে নির্বাচন। সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি শূন্য হওয়া উপনির্বাচনও রয়েছে।

নির্বাচনসহ নানা কারণে বিভিন্ন সংস্থা, দফতর ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা, সেমিনার ও মিটিং হয়ে থাকে। কিন্তু পদমর্যাদা কিংবা পদ উন্নীতকরণ বৈষম্যের কারণে কমিশনের অনেক যৌক্তিক প্রস্তাবও উপেক্ষা হয়ে থাকে। ভোটার তালিকা ও নির্বাচনসহ সব ধরনের কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পদ উন্নীতকরণের প্রস্তাবটি অনুমোদন পাওয়া দরকার ছিল। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজে উদ্দাম ফিরত। মানুষও কাক্সিক্ষত সেবা পেত।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সচিবালয়, মাঠ অফিস, ইটিআই ও এনআইডি মিলিয়ে ৪১৬টি পদ নতুন সৃজন হয়েছে, যা এরই মধ্যে পূরণ হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ১৯টি সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদ। সেসময়ে ১১২টি পদ বিলুপ্ত। তবে পরবর্তী সময়ে সাতটি নতুন উপজেলা ও ২৭টি থানা গঠিত হওয়ার কারণে নতুন পদ সৃজনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর আলোকে ২০১৭ সালে সাংগঠনিক কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close