জুবায়ের চৌধুরী

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ষড়যন্ত্রকারী ও অপরাধীদের তথ্য মনিটরিংয়ে এনটিএমসি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অপরাধীদের তথ্য যাচাই করতে এনটিএমসির (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) সহযোগিতা নিতে পারবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে পুরনো তেজগাঁও বিমানবন্দরের পাশে এনটিএমসি কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ স্টেশন। রাষ্ট্র ষড়যন্ত্রকারী ও অপরাধীদের এখান থেকেই মনিটরিং করা হবে। গতকাল এনটিএমসি কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এনটিএমসিকে আরো বেশি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করা হবে। যাতে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত না হয় সেজন্য এখন থেকে সব সংস্থাকে এক জায়গা থেকে তথ্য আদান-প্রদান করা হবে। বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কী কী সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করা হয়েছে।

বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে ফেসবুক ও ইউটিউবে বিভিন্ন ব্যক্তির ফাঁস হওয়ার টেলি কথোপকথন এনটিএমসি সরবরাহ করেনি বলে জানিয়েছেন এনটিএমসির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান। তিনি বলেন, ওইসব কল রেকর্ড বিক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি কথা বলার সময় রেকর্ড করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছে। এখন কেউ যদি মনে করে, তার সম্মানহানি হয়েছে তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করতে পারেন।

এই সংস্থা এখন থেকে নাগরিকদের মোবাইল কথোপকথন রেকর্ড করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান বলেন, যাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য থাকবে, যারা অপরাধী এবং যারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে শুধু এমন ব্যক্তিদেরই সার্ভিলেন্সের আওতায় আনা হবে। এর বাইরে কাউকে সার্ভিলেন্সের আওতায় আনা হবে না। এরপরও এখান থেকে তথ্য কোথাও মিস ইউজ করা হবে না। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সবকিছু করা হবে।

এনটিএমসির পরিচালক বলেন, সব ধরনের গুজব বন্ধে এনটিএমসির সঙ্গে বিটিআরসিও কাজ করছে। এরই মধ্যে যেসব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে তা সেন্ট্রালাইজ পদ্ধতিতে বন্ধ করা হয়েছে। কোনো ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিলে ওসি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তো বন্ধ হবে না। তাই সব অভিযোগ একখানে করে কেন্দ্রীয়ভাবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা বন্ধ করা হয়ে থাকে। এনটিএমসিতে সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের রাখা হয়েছে। তারা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের যার যা তথ্য লাগবে তা এখান থেকে দিয়ে সহযোগিতা করবেন।

পরিচালক বলেন, এরই মধ্যে অনুমতিবিহীন প্রধানমন্ত্রীর নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি ৭৫২টি, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারবর্গের নামে মানহানিকর পোস্ট ৭১টি, মিথ্যা খবর ও জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে ৫৪টি, সেনাবাহিনীর নামে আইডি ৫৭৮টি, পেজ ২৭০টি, গ্রুপ ৮টি, নৌবাহিনীর নামে করা ২১টি এবং নির্বাচন কমিশনের নামে করা ১১টি আইডি বন্ধ করা হয়েছে।

এনটিএমসি থেকে বলা হয়, অপরাধী শনাক্তকরণ ও যোগাযোগমাধ্যমগুলো মনিটরিংয়ের জন্য এনটিএমসিতে বিদ্যমান কেন্দ্রীয় মনিটরিং ও সরকারের কার্যক্রমেকে সুসংহত করতে ‘ইনটিগ্রেটেড ল’ ফুল ইনটারসেপশন সিস্টেম (আইএলআইএস) বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের একটি টেলিকমিউনিকেশন ডাটাহাব তৈরির কাজও চলমান রয়েছে। যেখান থেকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে চাহিদা মতো তথ্য সরবরাহ করা হবে।

এছাড়া, কেন্দ্রীয়ভাবে ‘জাতীয় ডাটাহাব’ তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যে ডাটাহাবে জাতীয় পরিচয়পত্র, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স (বিএফআইইউ), মোবাইল ব্যাংকিং, শিক্ষাবোর্ড, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যুক্ত করা হবে।

এরই মধ্যে এনটিএমসির ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সব মোবাইল অপারেটরের ভয়েস ও ডাটা, নির্বাচন কমিশন ডাটাবেজ, পাসপোর্ট এবং ইমিগ্রেশন ডাটাবেজ, জন্ম নিবন্ধন ডাটাবেজ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ডাটাবেজ, র‌্যাব ডাটাবেজ (ক্রিমিনাল ডাটাবেজ ও জেল ইনমেট ডাটাবেজ) এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যার মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থা এবং হজ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের তথ্য যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে।

টেলিকমিউনিকেশন ডাটাহাবের সঙ্গে জাতীয় ডাটাহাবের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য যাচাইয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এখান থেকে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা পৃথকভাবে সুবিধা পাবে যার জন্য নিজস্ব আলাদা ডাটাহাবের প্রয়োজন হবে না।

এনটিএমসি থেকে বলা হয়, সব ধরনের সোশ্যাল ও ওয়েব মিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘ওপেন সোর্স ইনটেলিজেন্স মনিটরিং সিস্টেম’ এর মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্তকরণ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে। ইন্টারনেটে অবাধ ও অপব্যবহার করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি সরকারবিরোধী তথ্য প্রকাশ করছে। ওইসব অপকর্ম বন্ধে এনটিএমসিতে ‘কনটেন্ট বকিং অ্যান্ড ফিল্টারিং সিস্টেম’ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। অবৈধভাবে যাতে কেউ টেলিকমিউনিকেশন সিন্টেম ব্যবহার করে দেশি বিদেশি সংস্থা মনিটরিংয়ের জন্য কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এনটিএমসিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close