প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ভাষাশহীদদের স্মৃতির খোঁজে

ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি ‘মায়ের ভাষার’ মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পায় নব প্রেরণা। এরই পথ বেয়ে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি বুকে বুলেট পেতে নিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর। তাদের মহান এ আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে স্মৃতি জাদুঘর।

শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর : তার জন্ম ১৯২৭ সালের ১৬ জুন ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ঢাকায় এসে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৫২ সালে যখন ভাষা আন্দোলন শুরু হয় তখন তিনি স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে সময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েন টগবগে এ তরুণ। ২১ ফেব্রুয়ারি বর্তমান শহীদ মিনার এলাকায় পাক সেনার গুলিতে মারাত্মক আহত হয়ে রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

মহান এ ভাষা শহীদের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পাশে শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালের ২৫ মার্চ এর উদ্বোধন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এ জাদুঘরে আছে তার ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র ও ছবি। এছাড়া এ জাদুঘরে আছে একটি পাঠাগার। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন বইপত্র আছে এ পাঠাগারে।

সপ্তাহের রোব থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে শহীদ আবুল বরকত পাঠাগার। পলাশীর মোড়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রবেশ পথের শুরুতে হাতের বাঁয়ে এ সংগ্রহশালা।

শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ স্মৃতি জাদুঘর : মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার বলধরা ইউনিয়নের পারিল গ্রামে জন্ম ভাষা শহীদ রফিকউদ্দীন আহমদের। ভাষা আন্দোলনে তার আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে এ নামকরণ করা হয়েছে রফিক নগর। ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে তিনি মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি ঢাকায় বাবার ছাপাখানার ব্যবসার দেখাশোনাও করতেন।

১৯৫১ সালে ফেব্রুয়ারিতে নিজের বিয়ের কেনাকাটার জন্য ঢাকায় এসে শুনতে পান রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের হবে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তিনিও অংশ নেন সে মিছিলে। বর্তমান শহীদ মিনার এলাকায় তাদের সে মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। পরে তাকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

তার স্মরণে রফিক নগরে (পারিল) প্রতিষ্ঠা করা হয় শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার। সেখানে আছে তার ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র। পাশেই আছে তার পৈতৃক ভিটা। পাঠাগারে আছে মূল্যবান বইপত্র। ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে সিঙ্গাইর এসে সেখান থেকে সহজেই যাওয়া যায় রফিক নগর।

শহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি জাদুঘর : মহান এ ভাষা শহীদের জন্ম ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতৃভূঞা ইউনিয়নের লক্ষণপুর গ্রামে। ভাষা আন্দোলনে তার আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে পরে এ গ্রামের নামকরণ করা হয় সালাম নগর।

দাগনভূঞা কামাল আতাতুর্ক উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন তিনি। বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় এলে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তিনিও মিছিলে অংশ নেন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে তিনি মারাত্মক আহত হন। প্রায় দেড় মাস ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ ভাষা শহীদকে পরে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ২০০৮ সালে তার গ্রামে নির্মাণ করা হয় শহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি জাদুঘর। তবে এ জাদুঘরের সংগ্রহে তেমন কোনো জিনিসপত্র নেই। তবে ঘুরে আসতে পারেন কবির ভিটেমাটি থেকে। ফেনী শহর থেকে সালাম নগরের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার।

শহীদ আবদুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর : শহীদ আবদুল জব্বারের জন্ম ১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে তিনি বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করতেন। পরে নারায়ণগঞ্জে এসে তার পরিচয় হয় ইংরেজ এক নাবিকের সঙ্গে। তার সহায়তায় তিনি কাজ পান মিয়ানমারের রেঙ্গুন শহরে।

প্রায় ১০ বছর কাজ করে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির দুই-তিন দিন আগে শাশুড়িকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করান। অসুস্থ শাশুড়ির জন্য ফল কিনতে বেড়িয়ে ঢাকা মেডিকেলের বাইরে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে মিছিলে শরিক হন তিনি। পুলিশের গুলিতে তিনি তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেদিন রাতেই মৃত্যু হয় তার। এই ভাষা শহীদকেও সমাহিত করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে।

ভাষা আন্দোলনে শহীদ আবদুল জব্বারের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০৮ সালে গফরগাঁওয়ের পাঁচুয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় শহীদ আবদুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর। তার গ্রামের নামকরণ করা হয় জব্বার নগর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close