মোস্তফা কামাল

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে আনন্দমুখর দিন

* মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু * প্রথম দিনে ফরম নিলেন ২৮ জন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের শীর্ষ ও প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই বিদ্যাপীঠ আনন্দমুখর দিন দেখল শিক্ষার্থীরা। ২৮ বছর পর নানা জল্পনা-কল্পনা আর আশা-শঙ্কার মধ্যেই শুরু হয়েছে এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ। আজ বুধবার প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ নিয়ে অনেক দিন পরে হলেও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে গোটা ক্যাম্পাসে। ফরম বিতরণের প্রথম দিনে নিয়েছেন ২৮ জন। সকাল ১০টা থেকে ফরম বিতরণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। হল প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে পাঁচটি, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে ডাকসুতে চারটি ও হল সংসদে একটি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে চারটি, শামসুন্নাহার হলে দুটি, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে দুটি, বিজয় একাত্তর হলে একটি, সুফিয়া কামাল হলে একটি, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে পাঁচটি, অমর একুশে হলে একটি, জগন্নাথ হলে একটি এবং রোকেয়া হলে একটি ফরম বিতরণ হয়েছে। তবে ফজলুল হক মুসলিম হল, স্যার এ এফ রহমান হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা মুজিব হল ও কুয়েত-মৈত্রী হল থেকে কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। এদিকে ভোটকেন্দ্র নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনাও কম নয়। হলে ভোটকেন্দ্রের পক্ষে থাকা ছাত্রলীগ বলছে, হলে নির্বাচনের পরিবেশ আছে এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। আর বিপক্ষে থাকা ছাত্রদল ও বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো বলছে, হলে ভোটকেন্দ্র করা হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবেন না। তবে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোর কমিটির নেতারা ছাত্রলীগের বক্তব্যের সঙ্গেই কণ্ঠ মিলিয়েছেন।

এর আগে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রভিত্তিক (টিএসসি) সংগঠনগুলোর নেতারাও ছাত্রলীগের সঙ্গে একমত হয়ে জানান, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ঐতিহ্য মেনে তারা হলেই যান। এদিকে, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলকে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম পরিষদ। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়েরর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে চার দফা দাবিতে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এ দাবি করে সংগঠনটি। স্মারকলিপিতে ছাত্রদলকে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী উল্লেখ করে তাদের মধুর ক্যান্টিনে আসার প্রতিবাদও জানানো হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সনেট মাহমুদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মূল্যবোধ ও প্রগতির ধারক-বাহক। এখানে যদি কেউ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে আসে তা আমরা কখনই মেনে নেব না। এটা আমাদের এই বিদ্যাপীঠের সব ছাত্রছাত্রীর বিকাশের পরিপন্থী বলে মনে করি।

অন্যদিকে, গতকাল মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস কমিটির নেতাদের সংগঠন ‘সম্মিলিত বাস রুট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্ভয়ে-নিঃশঙ্কচিত্তে ও আনন্দময়ভাবে ভোটদানের সার্বিক পরিবেশ হলগুলোতে রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ফাল্গুনী বাস কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ বাপ্পী।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃত্রিম বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা হলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত। হলে আমাদের যাতায়াত অবাধ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকান্ড হলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে ভোটদানের সার্বিক পরিবেশ আছে। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আর কোনো জল ঘোলা হোক, তা আমরা চাই না। বাসে যাতায়াতকারী অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন সংগঠন ও জোটের ইশতেহারে এসব দাবির অন্তর্ভুক্তি চান তারা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রত্যেক রুটে বাস বৃদ্ধি, নতুন ডাবল ডেকার বাস, বাসের রুট বৃদ্ধি, বিআরটিসির পক্ষ থেকে দক্ষ চালক ও হেলপার নিয়োগ ইত্যাদি।

জানতে চাইলে সম্মিলিত বাস রুটের সমন্বয়ক রাকিব হাওলাদার বলেন, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠন বা জোটের পক্ষ থেকে তাদের এখনো ডাকা হয়নি। ছাত্রলীগের নেতারা তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায় বসেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের যেকোনো সংগঠন বা জোটের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচনে যেতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে ছাত্রলীগ অন্য যেকোনো ছাত্র সংগঠনের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বৈশাখী বাসের সভাপতি মো. শামীম, আনন্দ বাসের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, হেমন্ত বাসের সভাপতি মোবারক হোসেন, উল্লাস বাসের সাধারণ সম্পাদক সজল মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য সিঙ্গেল ও ডাবল ডেকার মিলিয়ে প্রায় ৬০টি বাস রয়েছে।

প্রসঙ্গ প্রায় দুই যুগ পর ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ডাকসুর ২৫টি পদে নির্বাচন হবে। ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। নিজ নিজ হলে এ ভোটগ্রহণ হবে।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় ১৯২৪ সালে ডাকসুর প্রথম কার্যক্রম শুরু। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত প্রায় নিয়মিতই ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালে। ৬ জুলাইয়ের ওই নির্বাচনে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান ভিপি ও খায়রুল কবির খোকন জিএস নির্বাচিত হোন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close