সংসদ প্রতিবেদক

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

সংসদে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

নিরাপদ পানি পায় দেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ

৯৯ শতাংশ স্যানিটেশন সুবিধাভোগী

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধাভোগী এবং ৯৯ শতাংশ মানুষ মৌলিক স্যানিটেশেনের অন্তর্ভুক্ত। গতকাল মঙ্গলবার মো. আনোয়ারুল আজীমের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদকে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকালে এ অধিবেশন শুরু হয়।

মন্ত্রী বলেন, নিরাপদ পানির সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা ৮৭ শতাংশ হলেও ৯৯ শতাংশ মানুষ মৌলিক স্যানিটেশনের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ মানুষ উন্নত ল্যাট্রিনের আওতাভুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট ২৮ শতাংশ যৌথ ল্যাট্রিন এবং ১০ শতাংশ অনুন্নত ল্যাট্রিন ব্যবহার করেন। এই হিসাবে ২০১৫ অনুযায়ী বর্তমানে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবহারকারী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৯ কোটি ৭৬ লাখ।

নাছিমুল আলম চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ অন্যান্য পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বা ম্যালেরিয়া রোগের বাহক অ্যানোফিলিস মশার উপস্থিতি থাকলেও ঢাকা মহানগরীতে কিউলেক্স ও এডিস মশার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। কিউলেক্স মশা সাধারণত স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ না হলেও এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া রোগ হয়। এজন্য ঢাকা মহানগরীতে বছরব্যাপী মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডিমন্ত্রী সংসদকে জানান, দেশব্যাপী বিটুমিনের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের বিষয়টি এখনো পরীক্ষাধীন। বিটুমিনের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সড়কে কংক্রিট ঢালাইয়ের পরে কিউরিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন এবং ওই সময়ে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। প্রতি কিলোমিটার কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ খরচ বিটুমিনাস রাস্তা নির্মাণ খরচের অপেক্ষায় ২.২ থেকে ২.৫ গুণ বেশি। কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণে পাথর ব্যবহার করতে হয় যা আমদানিনির্ভর। কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত নির্মাণ যন্ত্রপাতিরও অভাব রয়েছে।

সরকার দলীয় সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, অতিরিক্ত ভারবহনকারী যানবাহনের কারণে সারা দেশে রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণে আন্তঃমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একটি প্রক্রিয়া বের করা দরকার। মন্ত্রী বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সারা দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে বিপুল সংখ্যায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। সেগুলোর নির্মাণসামগ্রী বহনকারী যানবাহন অতিরিক্ত ভার বহন করছে। এই কারণেই গ্রামীণ রাস্তাঘাট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তা কেটে ট্রাক্টর ওঠানামার ব্যবস্থা করার কারণেও রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গ্রামীণ মানুষের এই চাহিদা যেমন বন্ধ রাখা যাবে না, একইভাবে রাস্তাঘাটও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮নং ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে সেকেন্ডারি ট্রান্সফরমার স্টেশন নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ঢাকা-৪ আসনের আওতাধীন সব ওয়ার্ডে সেকেন্ডারি ট্রান্সফরমার স্টেশন (এসটিএস) বা ড্যাম্পিং শেড নির্মাণ করা হবে।

দিদারুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ হতদরিদ্র, অসহায়, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দারিদ্র্যবিমোচন কৌশল এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প হিসেবে ‘উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন (স্বপ্ন)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বিগত ২৬ মে ২০১৫ একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পের ২য় চক্রের আওতায় কুড়িগ্রাম ও সাতক্ষীরা জেলার ১২৪টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৪৬৪ জন সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় মহিলাদের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

মো. মসিউর রহমান রাঙ্গার এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পল্লী দারিদ্র্যবিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো পল্লীর দারিদ্র্য ও অসুবিধাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ। পিডিবিএফ বর্তমান সরকোরের রূপকল্প-২০২১ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পিডিবিএফ টেইসই দারিদ্র্যবিমোচনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ কে এম রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ ‘সিটি করপোরেশনের সড়ক’ ভবন ও স্থাপনা নামকরণ নীতিমালা-২০১৪ প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালার আলোকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জনে প্রাণ বিসর্জনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এরই মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীন বিভিন্ন সড়ক ও স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, দেশের গ্রামগুলোকে শহরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ সরকার এরই মধ্যে গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলো কাজ করছে, যার কর্মপরিকল্পনা শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে দেশব্যাপী প্রতিটি গ্রামে উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ স্থাপন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, পল্লী উন্নয়ন এলাকায় গ্রামীণ হাটবাজার সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা ও গ্রাম পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন বিষয়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।

নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মহানগরীতে পানি সরবরাহের পাইপ লাইন এবং ওয়াসা নির্মিত বড় আকারের স্টর্ম স্যুয়ারেজ ও সংশ্লিষ্ট ম্যানহোলের ঢাকনা-ঢাকা ওয়াসা নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ঢাকা শহরে ৯৩০ কিলোমিটার সুয়ারেজ লাইন আছে যার মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার ঢাকনা আছে। ৩৫০ কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইনে প্রায় ৭ হাজার ঢাকনা আছে। সব ম্যানহোলের ঢাকনা বিপদমুক্তভাবে লাগানো। কোনোটি নষ্ট হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এজন্য ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোন পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত আছে এবং সার্বিক তদারকির বিষয়ও তাদের ওপরে ন্যস্ত। এসব ঢাকনা ও ম্যানহোলগুলো বিপদমুক্তভাবে লাগানো হয়।

হাজী সেলিমের এক প্রশ্নের জবাবে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭১টি। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ১০ জন গ্রাম পুলিশ (একজন দফাদর ও ৯ জন মহল্লাদার) রয়েছে। এ হিসাবে বর্তমানে সারা দেশে গ্রাম পুলিশের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৭১০ জন। গ্রাম পুলিশদের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মতো সমস্কেল প্রদানের অবকাশ নেই। তবে ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত দফাদারদের বেতন ৩৪০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা এবং মহল্লাদারদের বেতন ৩০০ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৬ হাজার করা হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান।

হাজী সেলিমের আরেকটি প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির নিয়ন্ত্রণাধীন ২৩টি পার্ক ও ৪টি শিশুপার্ক রয়েছে। একইভাবে দক্ষিণ সিটিতে ২০টি পার্ক রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close