বদরুল আলম মজুমদার

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

জামায়াতের অবস্থানের সুরাহা চায় বিএনপিও

স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন জামায়াতের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মনে করেন বিএনপির অধিকাংশ সিনিয়র নেতা। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে জামায়াতের বিতর্কিত অবস্থানের একটা সুরাহা করা গেলে, তা জাতীয় রাজনীতির জন্য মাইলফলক হতে পারে। জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সব পিছুটান যেমন ওভারকাম করা যাবে; তেমনিভাবে দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনও আসতে পারে। দলটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।

তারা জানিয়েছেন, জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া অথবা তাদের সঙ্গ ত্যাগ করার বিষয়টি এখন বিএনপিতে বেশ আলোচিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে দলের তৃণমূলের নেতাদেরও চাপ রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন থেকে জামায়াত প্রসঙ্গে বিএনপির ওপর আন্তর্জাতিক মহলেরও চাপ রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী যেহেতু পাকিস্তানের সঙ্গে ছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, এজন্য তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। তাদের দলের নামও পরিবর্তন করা উচিত। বিষয়টি নিয়ে বিএনপিও বেশ চাপে আছে। আমরাও চাই এর একটা সুরাহা হোক।

জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশভাগের সময় জামায়াত পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তারা তখনো ক্ষমা চায়নি বা তাদের কেউ ক্ষমা চাইতেও বলেনি। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট পাল্টিয়েছে। এখন তাদের ক্ষমার চাওয়ারও সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।’

গত বৃহস্পতিবার জামায়াতের সিনিয়র নেতা ও দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার রাজ্জাক জামায়াত থেকে পদত্যাগ করার পর এ নিয়ে সক্রিয় হয় বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতও বিএনপি থেকে সরে যেতে নিজেদের মাঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। গত জানুয়ারিতে জামায়াতে ইসলামীর দুই দফা বৈঠকে প্রায় দুই দশকের জোটসঙ্গী বিএনপিকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও প্রকাশ্যে জামায়াতের নেতারা তা স্বীকার করছেন না। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এ বিষয়ে তারা অন্ধকারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপি থেকে ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান জামায়াত ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি এটা গণমাধ্যমেই জেনেছি। তারা আমাদের কিছু জানায়নি।’

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়তে থাকে। গত বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সিলেটে আলাদা প্রার্থী ঘোষণা করায় তা প্রকাশ্যে দেখা যায়। আসন বণ্টন নিয়ে একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দরকষাকষি চলে। মনের মতো আসন না পাওয়ায় জামায়াত তখন মনঃক্ষুণœœও হয়।

নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এমনকি আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বলা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন। বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী বিএনপির টিকিট পাবে, জানলে তিনি ঐক্যফ্রন্টের অংশ হতেন না।

২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও জামায়াত নতুন নামে দল গঠন করবে, তা আমরা শুনেছি। তারা হয়তো সে প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তারা ২০ দলে থাকতেও পারে, নাও পারে। তিনি মনে করেন, জামায়াত ৭১ সালের ভূমিকাতে একটি সুস্পষ্ট অবস্থান জানাবে, তা জাতি আশা করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close