নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রতীক

সফল ভাষা আন্দোলনের প্রতীক একুশে ফেব্রুয়ারি। সাতচল্লিশ থেকে বিক্ষোভ ও আটচল্লিশের মার্চ থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়ে মূলত এর চূড়ান্ত পরিণতি বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি। এরপর থেকে একুশের বহুমাত্রিকতা প্রকাশ পেতে থাকে এবং এই লক্ষ্যপথেই বাঙালি জাতি একাত্তরে পৌঁছে যায় বীরদর্পে। তাই এই ফেব্রুয়ারি মাস মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রতীক। আমাদের স্বাধীনতার পটভূমি তৈরি হয় অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ ও উদার জাতীয়তাবাদের ওপর। বায়ান্ন পরবর্তী সময় থেকে একুশ শব্দটি নানাভাবে নানা বর্ণে আমাদের আবেগকে ছুুঁয়ে যায়। কখনো একুশের তাৎপর্যে, কখনো একুশে সাহিত্যে, আবার কখনো এর চেতনায়। এই চেতনা যতদিন সমুন্নত থাকবে ততদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

আমাদের সংবিধান বলছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’, আমরাও তাই বলি। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৮ বছর, ভাষা আন্দোলন হয়েছে ৬৬ বছর। এরপর কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা? সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আজও সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন হয়নি। আমরা ব্যবহারিক জীবনে ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যমে, সরকারি কাগজপত্রে, পত্রিকায় এখনো শুদ্ধ বাংলা লেখার প্রতি মনোযোগী হতে পারিনি। সভা-সমিতি, আলোচনা-পর্যালোচনা, আলাপ-সংলাপ ও বেতার-টেলিভিশনে শুদ্ধ বাংলা বলার অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারিনি বরং ফেসবুকে, ইন্টারনেটে, এফএম ব্যান্ডের রেডিওতে আমরা নবপ্রজন্ম ‘নাইস বাংলা’ প্র্যাকটিস করছি।

পাকিস্তানি শাসকরা আরবি অক্ষর দিয়ে আমাদের বাংলা লেখাতে পারেনি, অথচ আজ আমরা স্বেচ্ছায় ইংরেজি অক্ষর দিয়ে বাংলা লিখে যাচ্ছি। বিশ্বায়নের এই রাজত্বে লাখো শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে আজ বাসার নাম, দোকানের নাম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম, এমনকি কবরের এপিটাফ পর্যন্ত ইংরেজিতে বা ইংরেজি অক্ষর দিয়ে বাংলায় লিখে যাচ্ছি।

যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বায়ান্নতে পরাজিত হয়েছিল জিন্নাহ ও লিয়াকত আলীরা, একাত্তরে পরাজিত হয়েছে ভুট্টো-ইয়াহিয়া-গোলাম আজমরা; সেই চেতনার কাছেই পরাজিত হবে মৌলবাদী ড্রাকুলা ও তাদের দোসররা। যতবার এই বাংলার মাটিতে আমার সোনার বাংলা গানের সঙ্গে সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকা উঠবে, ততবার ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবোধের বিজয় রচিত হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close