মোস্তফা কামাল

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ডাকসু নির্বাচন

২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রার্থী ও প্যানেল চূড়ান্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিতে কাজ শুরু করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা এ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্যানেলগুলো চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। তফসিল অনুযায়ী, আগামীকাল থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি তা জমা দিতে হবে। এ অবস্থায় ছাত্র সংগঠনগুলোর হাতে খুব বেশি সময় নেই। এদিকে, ডাকসু নির্বাচন তিন মাস পেছানোর দাবিতেই অনড় রয়েছে ছাত্রদল। আর বৃহত্তর ঐক্য করার ঘোষণা দিয়েছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য। এই ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে ১১ দফা ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করেছে তারা। এই দফাগুলোর সঙ্গে একমত, সবাইকে নিয়ে তাদের প্যানেল সাজানো হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

জানা যায়, ছাত্র সংগঠনগুলো প্যানেল ও প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে এরই মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। জোটবদ্ধ হওয়ার জন্য একে অপরকে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আসন্ন এ নির্বাচনে সংগঠনগুলো সমমনাদের সঙ্গেই প্যানেল করবে বলে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং দাবির সঙ্গে একমত পোষণকারীরা একত্রে প্যানেল করবে।

প্যানেলের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ডাকসু নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখের সঙ্গে সমন্বয় করে প্যানেল চূড়ান্ত করার কথা ভাবছেন তারা। এ নিয়ে তাদের প্রাথমিক কাজ চলছে। আর প্যানেলে কে আসবে, কে আসবে না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা, স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে ছাত্রলীগ কাজ করছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ জনপ্রিয় সংগঠন, এটি ব্যক্তিনির্ভর নয়। তাদের প্যানেলে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারে বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন, টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করা আন্তর্জাতিক সংগঠন, পাহাড়ি শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, আনুপাতিক নারী শিক্ষার্থী ও অরাজনৈতিকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সফল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম ছাত্র সংগঠন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী বলেন, প্যানেলের বিষয়ে তাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। গণতান্ত্রিকভাবে যারা ক্যাম্পাসবান্ধব ও শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, দলীয় মতামতের ভিত্তিতে তাদের নিয়েই প্যানেল তৈরি করবেন তারা। আর উপযুক্ত সময়েই প্যানেল ঘোষণা করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তারা নির্বাচন পেছানোর জন্য বলেছিলেন। কেননা ক্যাম্পাসে তাদের সহাবস্থান শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নাকি স্থায়ীÑ সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তারা এখনো আবাসিক হলে যেতে পারেননি।

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাস বলেন, প্যানেলের বিষয়ে তাদের আলোচনা চলমান। জোটভুক্তভাবেই তারা নির্বাচনে যাচ্ছেন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ‘প্রগতিশীল বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রঐক্য’ নামে জোট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোটভুক্ত সংগঠনগুলো ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের সঙ্গে জোট করা হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফরম-বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারির আগেই তাদের প্যানেল চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত এককভাবে প্যানেল দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। তবে কোনো হলে যদি তারা পূর্ণ প্যানেল দিতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে যতজন সম্ভব প্রার্থী দেবেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তাদের সঙ্গে যারা সক্রিয় ছিল, তাদের নিয়ে প্যানেল গঠন করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত যারা, তাদের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের নিয়ে সমন্বয় করে তারা প্যানেল দেবেন।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি এস এম রাকিব সিরাজী বলেন, আলোচনা চলছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে দু-একদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাব। তবে প্যানেলের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে যাবেন না। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের যেকোনো সংগঠনের সঙ্গে যেতে পারি।

এদিকে, গতকাল দুপুরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের নেতৃত্বে ৪০-৪৫ জন ছাত্রদলকর্মী মধুর ক্যান্টিনে আসেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। তারা গণমাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সহাবস্থান নিশ্চিতসহ সাত দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে ছাত্রদল যে স্মারকলিপি দিয়েছিল, তা পুনর্ব্যক্ত করে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।

পরে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য। সেখানে বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে ১১ দফা তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনীক, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close