কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার)

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আশ্রয়শিবির ছাড়ছে রোহিঙ্গারা পাল্টে যাচ্ছে সমাজচিত্র

স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ, নজরদারি বাড়ানোর দাবি

কক্সবাজারে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা প্রতিদিনই আশ্রয়শিবির ছেড়ে পালাচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবিরের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় তারা সহজেই শিবির ত্যাগ করতে পারছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, কমবেশি ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে নজরদারি করার মতো পর্যাপ্ত জনবল তাদের নেই। এছাড়া আশ্রয় ক্যাম্পের আশেই সক্রিয় রয়েছে মানব পাচারচক্র, ওই চক্রের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছাড়তে সহযোগিতা করছে। এসব কারণে স্থানীয়দের চিরচেনা জীবনচিত্র যাচ্ছে পাল্টে। বাড়ছে সামাজিক অপরাধ। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলেছেন, রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাইরে বেরুতে না পারে সেই কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে প্রশাসনকে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছাড়ার জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। তাদের মধ্যে কেউ দালালের মাধ্যমে, কেউ ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে, কেউ গাড়িচালকদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। এদিকে রোহিঙ্গারা যেন ক্যাম্প ছেড়ে যেতে না পারে সেজন্য কঠোর অবস্থানে প্রশাসন।

পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, পুলিশের সাতটি চেকপোস্ট ছাড়াও বিজিবি এবং র‌্যাবের চেকপোস্ট রয়েছে। গত ১৭ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৯ হাজার রোহিঙ্গাকে আটকের পর ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। তাদের সহযোগিতা করায় ৫০০-এর বেশি দালালকে আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া রোধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও ক্যাম্পের চারপাশে সীমানা বা কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় রোহিঙ্গাদের শিবির ত্যাগ রোধ করা যাচ্ছে না। কেউ দালালের মাধ্যমে, আবার কেউ ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে সড়ক বা গ্রামীণ সড়ক অথবা নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের স্থানীয়দের মাঝে মিশে যাওয়াকে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছেন স্থানীয় জনগণ।

উখিয়া সদরে কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, শেখ হাসিনার সরকার দয়া করে রোহিঙ্গাদের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় দিয়েছে। ক্যাম্পের মধ্যে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু তারা ওখানে না থেকে শহরের দিকে চলে আসার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলাবাসী। তারা মাদক পাচার, পতিতাবৃত্তি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এতে করে এই সমাজের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তাই তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখতে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।

সাংস্কৃতিক কর্মী মরিয়ম আক্তার নূপুর জানান, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি এবং আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তারা আমাদের সমাজের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় বাঙালি সংস্কৃতির ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের হওয়া বন্ধ করতে হবে।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন জানান, দালালসহ বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন গাড়ি চালকেরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নানা কৌশলে তাদের বিভিন্ন স্পটে পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়া নৌপথে মালয়েশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করা রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করা দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

উখিয়া চেক পোস্টে দায়িত্বরত অফিসার মো. কামাল হোসেন জাানান, ক্যাম্প ছেড়ে নানা কৌশলে পালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে প্রতিদিনই আটক হচ্ছে রোহিঙ্গারা। তাদের পুনরায় ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় স্থলে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া না হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে আশ্রয় ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য সাতটি চেকপোস্টে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। দেড় বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় ভাষা, আচার-আচরণের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা নিজেদের স্থানীয়দের মতো কওে তৈরি করে নিচ্ছে। আর এই বিষয়টাকেই পুঁজি করে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। প্রশাসনের কাছে সচেতন দাবি রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবেই স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যেতে না পারে।

মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় মদদে সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। সাড়ে ৬ হাজার একরেরও বেশি বনভূমি উজাড় করে উখিয়া-টেকনাফে নির্মাণ করা ৩২টি ক্যাম্পে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close